জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন
Contents
জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন
লাহােরে কংগ্রেসের অধিবেশন বসে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর । এই অধিবেশনে তরুণ নেতা জওহরলালের সভাপতিত্বে পূর্ণ স্বরাজের দাবি গৃহীত হয় । সর্ব শ্রেণি ও সর্বস্তরের ভারতবাসী পূর্ণ স্বরাজ লাভের আকাঙ্ক্ষায় দুঃখ ও ত্যাগ স্বীকার করার শপথ গ্রহণ করে । ৩১ ডিসেম্বর ১৯২৯ – এর মধ্যরাতে ( রাত ১২ টা ) রাভী ( ইরাবতি ) নদীর তীরে সভাপতি হিসেবে জওহরলাল নেহরু বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে স্বাধীনতার প্রতীক তেরঙ্গা পতাকা তােলেন । অধিবেশনে যােগদানকারী প্রায় ১৫ হাজার কংগ্রেস কর্মীর উপস্থিতিতে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানান ।

জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনের কর্মসূচি
এই অধিবেশনের দু – দিন পরে ( ২ জানুয়ারি ) কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটি ( Congress Working Committee ) এক বৈঠকের মাধ্যমে ঠিক করে সারা দেশ জুড়ে পূর্ণ স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করা হবে । তরুণ নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্রের প্রচেষ্টায় গৃহীত হয় বামপন্থী আদর্শ । জওহরলাল বলেন — আমি খােলাখুলিই বলছি আমি সমাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রে বিশ্বাসী ।
জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণের কারণ
জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণের কারণগুলি ছিল—
1. গান্ধিজি এটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝেছিলেন যে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি ছাড়া ভারতবাসীকে আর শান্ত রাখা যাবে ।
2. নেহরু রিপাের্টকে ব্রিটিশ সরকার অমান্য করায় জাতীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অপমানিত বােধ করেন ।
3. নেহরু রিপাের্ট অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার এক বছর সময় পেয়েছিল , কিন্তু তা অতিক্রান্ত হওয়ায় পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব কার্যকর করার জন্য ভারতে আন্দোলন শুরু হয় ।
জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনের শপথ গ্রহণ
জাতীয় কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয় যে যতদিন না ভারত স্বাধীন হচ্ছে ততদিন প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হবে । এই লক্ষ্যে এক শপথনামা তৈরি হয় , যাতে বলা হয় —
1. স্বাধীনতা হল ভারতীয়দের জন্মগত অধিকার ।
2. স্বাধীনতার অধিকার থেকে ভারতবাসীকে কেউ বঞ্চিত করে রাখতে পারবে না ।
3. ব্রিটিশ শাসনে ভারতের আর্থিক , রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবনমন ঘটেছে । তাই ভারতবাসীর কর্তব্য হল ব্রিটিশ সরকারের পতন ঘটানাে ।
4. একমাত্র অহিংস সত্যাগ্রহের পথ ধরেই ব্রিটিশ অপশাসনের অবসান ঘটানাে সম্ভব ।
5. যতদিন না পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়া যাচ্ছে ততদিন ভারতবাসীর স্বাধীনতা সংগ্রাম চলবে ।
জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনের গুরুত্ব
পূর্ণ স্বরাজ অর্জনের প্রশ্নে :
জাতীয় কংগ্রেসের এই লাহাের অধিবেশনেই সর্বপ্রথম পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গৃহীত হয় । আপামর ভারতবাসী কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তে উৎসাহিত হয় ।
প্রতীকী স্বাধীনতা দিবস পালনে :
জাতীয় কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতি ( Congress Working Committee ) র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থির হয় যতদিন না ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করছে , ততদিন প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি দিনটি প্রতীকী স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকবে । সেইমতাে ১৯৩০ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারি দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয় ।
আইন অমান্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণে :
জাতীয় কংগ্রেসের এই লাহাের অধিবেশনেই আইন অমান্য আন্দোলনের পরিকল্পনা গৃহীত হয় । এই আন্দোলন পরিচালনার ভার অর্পিত হয় গান্ধিজির ওপর ।
প্রজাতন্ত্র দিবসের স্বীকৃতিতে :
এই অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ জানুয়ারি দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় । পরবর্তী সময়ে এই দিনটিকেই স্বাধীন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস ( ১৯৫০ খ্রি. ২৬ জানুয়ারি ) হিসেবে গ্রহণ করা হয় ।