স্বরাজ্য দল কি
Contents
স্বরাজ্য দল কি

অসহযােগ আন্দোলনের অকাল মৃত্যু ও ব্যর্থতা ভারতের জাতীয় আন্দোলনে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে । গান্ধীজিসহ দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারারুদ্ধ হন । ব্রিটিশ বিরােধী স্বাধীনতা আন্দোলনে ভাটা পড়ে । নেতা থেকে কর্মী সকলেই হতাশ হয়ে পড়েন । এরকম এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে নতুন করে একটি দল গঠনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিকে সচল রাখার প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয় । এই প্রয়ােজনীয়তা থেকেই জন্ম নেয় স্বরাজ্য দল ।
স্বরাজ্য দলের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য
স্বরাজ্য দলের চরম লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন । স্বরাজ্য দলের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিত্তরঞ্জন দাশ বলেন , স্বরাজ্য দলের লক্ষ্য হবে কংগ্রেসের নীতির প্রতি আস্থা জানানাে , বিদেশি পণ্য বর্জন , আদালত ও বিদ্যালয় বর্জন , আইনসভায় যােগদান করে সরকারের বিরােধিতা করা এবং দরকারে আইন অমান্য আন্দোলনের পথে যাওয়া ।
স্বরাজ্য দলের কার্যকলাপ
স্বরাজ্য দল যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল সেগুলি হল —
1. আইনসভায় প্রবেশ করে সরকারি কাজের বিরােধিতা করা ।
2. সরকারি বাজেটের সমালােচনা করে তা প্রত্যাখ্যান করা ।
3. বিভিন্ন বিল ও প্রস্তাব তুলে ধরে জাতীয়তাবাদের অগ্রগতিতে সহায়তা করা ।
4. সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে বিদেশি শােষণ বন্ধ করা ।
5. সংবিধান রচনার অধিকার ভারতবাসীকে দেওয়া না হলে তার প্রতিবাদ স্বরূপ আইন পরিষদের যাবতীয় কাজ পণ্ড করে দিয়ে সরকারকে বিব্রত করা । স্বরাজ্য দলের এই সকল কর্মসূচি প্রচারের দায়িত্ব পালন করেছিল সুভাষচন্দ্রের সম্পাদনায় ‘ বাংলার কথা ’ ; এ. রঙ্গস্বামী আয়েঙ্গারের ‘ স্বদেশ মিত্রম ‘ ; এন. সি. কেলকারের ‘ কেশরী ’ প্রভৃতি পত্রিকা ।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বরাজ্য দলের অবদান
জাতীয় রাজনীতি শূন্যতা পূরণে :
গান্ধীজি অকস্মাৎ অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে ভারতীয় জাতীয় রাজনীতিতে গভীর শূন্যতা নেমে আসে । স্বরাজ্য দল তখন জাতীয় রাজনীতির শূন্যতা অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছিল ।
জাতীয় চেতনার জাগরণ :
সাধারণ ভারতবাসীর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আইনসভার মধ্যে থেকে স্বরাজ্য দলের সদস্যরা ব্রিটিশের বিরােধিতা করে । দেশবাসীর জাতীয় চেতনার জাগরণে সাহায্য করেন ।
দাবি আদায় :
শাসন ব্যবস্থার মধ্যে অংশগ্রহণ করে সরকারের বিরােধিতার মাধ্যমেও যে দাবিদাওয়া আদায় করা যায় এই নিদর্শন প্রথম তুলে ধরে স্বরাজ্য দল।
গঠনমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ :
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সংকটকালে স্বরাজ্য দল কংগ্রেসের অনুসরণেই গঠনমূলক কর্মসূচি ও পরিকল্পনার রূপায়ণ ঘটিয়েছিল ।
ত্রুটিপূর্ণ বাজেটের বিরোধিতা :
ভারতীয়দের প্রতিনিধি হিসেবে আইনসভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারের ত্রুটিপূর্ণ বাজেটের বিরােধিতায় সরব হন স্বরাজ্য দলের সদস্যগণ ।
শাসন সংস্কার :
স্বরাজ্য দলের সদস্যদের তীব্র বিরােধিতার কাছে নতি স্বীকার করে অবশেষে ব্রিটিশ মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইনের কার্যকারিতা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রথমে কমিটি নিয়ােগ করে ও পরে সাইমন কমিশন গঠন করে ।
প্রশাসনিক বাধাদান :
স্বরাজ্য দলের সদস্যগণ সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন , দমনপীড়ন মূলক আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ ইত্যাদির দ্বারা ব্রিটিশের প্রশাসনিক কাজে বাধা দান করেন ।