স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন
Contents
স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন

অসহযােগ আন্দোলনের অকাল মৃত্যু ও ব্যর্থতা ভারতের জাতীয় আন্দোলনে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে । গান্ধীজিসহ দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারারুদ্ধ হন । ব্রিটিশ বিরােধী স্বাধীনতা আন্দোলনে ভাটা পড়ে । নেতা থেকে কর্মী সকলেই হতাশ হয়ে পড়েন । এরকম এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে নতুন করে একটি দল গঠনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিকে সচল রাখার প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয় । এই প্রয়ােজনীয়তা থেকেই জন্ম নেয় স্বরাজ্য দল ।
স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠার পটভূমি বা কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায় যে , বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত , জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের অভাব , নীতিগত গােষ্ঠীদ্বন্দ্ব এক নতুন দল গঠনের পটভূমি রচনা করেছিল ।
জাতীয় আন্দোলনে নেতৃত্বের শূন্যতা
অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহৃত হওয়ার পর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও মতিলাল নেহরু কারামুক্ত হলেও গান্ধীজিকে গ্রেফতার করে ( ১৯২২ খ্রি. মার্চ ) ছয় বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয় । ফলে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ নেতার অবর্তমানে নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয় । স্বাধীনতা আন্দোলন থমকে যায় , ফলে নতুনভাবে আন্দোলন পরিচালনার ভাবনা চিন্তা দানা বাঁধে ।
কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নীতিগত দ্বন্দ্ব
জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেই কর্মসূচি বা নীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল । চিত্তরঞ্জন – মতিলাল নেহরুসহ পরিবর্তনকামী গোষ্ঠী ( pro – changer ) চেয়েছিলেন আইন সভায় প্রবেশ করে ব্রিটিশের সকল কাজে বিরােধিতা করতে , কিন্তু রাজেন্দ্রপ্রসাদ , চক্রবর্তী রাজা গােপালাচারী , বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখ পরিবর্তন বিরোধী ( No changer ) গােষ্ঠী এর বিরােধিতা করেন । এই নীতিগত দ্বন্দ্ব নতুন দল গঠনের মানসিকতার জন্ম দেয় ।
কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
জাতীয় কংগ্রেসে প্রথম দিকে গান্ধী পন্থী রূপে পরিচিত ছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল , রাজেন্দ্রপ্রসাদ , চক্রবর্তী রাজা গােপালাচারী , আনসারি , কস্তুরীবাঈ আয়েঙ্গার প্রমুখ । তাঁরা গান্ধীজির সব কাজকেই সমর্থন করতেন । অপরদিকে মতিলাল নেহরু , চিত্তরঞ্জন দাশ , বিঠলভাই প্যাটেল , সত্যমূর্তি , আজমল খান প্রমুখের গান্ধীজির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা থাকলেও তাঁর সকল নীতিকে মেনে নিতে পারতেন না । ফলে স্বাভাবিকভাবে ভিতরে ভিতরে কংগ্রেস দুটি দলে ভাগ হয়েছিল । বাকি ছিল প্রকাশ্য বিভাজন ।
গয়া অধিবেশন
বিহারের গয়াতে অনুষ্ঠিত ( ১৯২২ খ্রি. ডিসেম্বর ) জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে পরিবর্তনকামী ও পরিবর্তন বিরােধী এই দুই গােষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন শুরু হয় । ব্রিটিশের বিরােধিতার জন্য কাউন্সিলে প্রবেশ করা উচিত কি না এ নিয়ে ভােটাভুটি হয় । এতে কাউন্সিলে প্রবেশের সমর্থনে ভােট পড়ে ৮৯০ টি , কিন্তু তার বিরুদ্ধে ভােট পড়ে ১৭৪০ টি । ফলে কাউন্সিলে প্রবেশের বিপক্ষে ওই অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
স্বরাজ্য দল গঠন
গয়া অধিবেশনের সিদ্ধান্ত চিত্তরঞ্জনকে হতাশ করে , তিনি সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন । অবশেষে মতিলাল নেহরু , সুভাষচন্দ্র বােস প্রমুখের সাহায্যে চিত্তরঞ্জন কংগ্রেসের মধ্যেই ‘ কংগ্রেস খিলাফৎ স্বরাজ দল ’ প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৯২৩ খ্রি. ১ জানুয়ারি ) , পরে যার নাম হয় স্বরাজ্য দল । এর সভাপতি হন চিত্তরঞ্জন নিজেই , আর সম্পাদক হন মতিলাল নেহরু ।
জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসারের চিন্তা
অসহযােগ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসীর মনে যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল হঠাৎ আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তা বাধা পায় । স্বরাজ্য দলের নেতারা চেয়েছিলেন নতুন এক দল গড়ে তুলে এই জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার অক্ষুন্ন রাখতে ।