বিনয় বাদল দীনেশ স্মরণীয় কেন
Contents
বিনয় বাদল দীনেশ স্মরণীয় কেন
বিনয় বসু , বাদল গুপ্ত , দীনেশ গুপ্ত ইতিহাসে বিনয় , বাদল , দীনেশ বা ‘ বি-বা-দী ’ নামে পরিচিত । এই তিন অগ্নি যুগের বিপ্লবী , তাদের প্রাণের বিনিময়ে দেশবাসীকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেন । তিন যুবকের রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ ব্রিটিশ প্রশাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ।

পরিচয়
বিনয় বসু ছিলেন ঢাকার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র । তিনি ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের ভেতর ঢুকে কুখ্যাত দুই ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার লেমেন ও হার্ডসনকে গুলি করেন । এতে লেমেন মারা যান ও হার্ডসন গুরুতর আহত হন । এই ঘটনার পর বিনয় গােপনে ঢাকা ত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন এবং পরে হেমচন্দ্র ঘােষ প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ( বি. ভি. ) দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেন । এই দলেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তর ।
রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই তিন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর বিনয় বসু , বাদল গুপ্ত , দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ শাসনের মূলকেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিং ( মহাকরণ ) আক্রমণ করেন ।
অলিন্দ যুদ্ধ
১৯৩০ খ্রি. ৮ ডিসেম্বর বিনয় , বাদল , দীনেশ ছদ্মবেশে মহাকরণে দুপুরবেলায় প্রবেশ করেন এবং সােজা দোতলায় উঠে যান । বিনয় প্রথমে তাঁর নিজের 38 bore rifle থেকে পরপর ছটি গুলি করে কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসনকে হত্যা করেন । এরপর তাঁরা ছােটো একটি তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বন্দেমাতরম্ ধ্বনি দিতে দিতে পূর্ব দিকের বারান্দা দিয়ে ঢুকতে গেলে রাইটার্সের নেলসন , টাউসেন্ড , প্রেন্টিস , মার প্রমুখ প্রশাসনিক ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে । অল্পক্ষণের মধ্যেই লালবাজার থেকে আগত এক বিশাল পুলিশবাহিনীর সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় হয় । এই সংঘর্ষ অলিন্দ যুদ্ধ নামে খ্যাত ।
আত্মবলিদান
রাইটার্স থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব বুঝতে পেরে তাঁরা তিনজনেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন । বাদল বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন । নিজেদের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায় বিনয় ও দীনেশকে হাসপাতালে ভরতি করা হয় । সেখানে বিনয় মারা যান । কিন্তু দীনেশ দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠলে পরে ( ৭ জুলাই , ১৯৩১ খ্রি. ) তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয় ।
যুব সমাজের অনুপ্রেরণা
বিনয় বাদল দীনেশের এই দুঃসাহসিক অভিযান ও আত্মবলিদান বাংলা তথা ভারতের যুবশক্তিকে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য আত্মনিয়ােগে নতুন করে উৎসাহিত করে । সেসময়কার এক সংবাদপত্র ‘ Dauntless Dinesh Dies at Dawn ’ শিরােনাম দিয়ে এই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ।