ইতিহাস

গান্ধী আরউইন চুক্তি কী

Contents

গান্ধী আরউইন চুক্তি কী

প্রথম গােলটেবিল বৈঠকের পর ব্রিটিশ এটা বুঝেছিল যে , জাতীয় কংগ্রেস ছাড়া ভারতীয় রাজনীতিতে কোনাে শান্তিপূর্ণ ও সমাধানযােগ্য আলােচনা সম্ভব নয় । তাই ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ও গান্ধীজিসহ সমস্ত শীর্ষ নেতাদের কারামুক্ত করে ( ১৯৩১ খ্রি. জানুয়ারি ) কংগ্রেসের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী হয়ে ওঠে । সরকারি মনােভাবের এই পরিবর্তন লক্ষ করে গান্ধীজি ভাইসরয় আরউইন এর সঙ্গে আলােচনায় বসতে রাজি হন । 

mi
গান্ধী আরউইন চুক্তি

গান্ধী আরউইন চুক্তি স্বাক্ষর

দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে আলােচনার পর রাজধানী দিল্লিতে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ গান্ধী আরউইন চুক্তি সম্পাদিত হয় । গান্ধী আরউইন চুক্তির অপর নাম হলো দিল্লি চুক্তি । 

গান্ধী আরউইন চুক্তির পটভূমি

প্রথম গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ :

সাম্প্রদায়িক মতভেদে জাতীয় কংগ্রেসের অনুপস্থিতির কারণে প্রথম গােলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয় । ব্রিটিশ তাই জাতীয় কংগ্রেসের গুরুত্ব অনুভব করে কংগ্রেসের ওপর আরােপিত সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দিয়ে মৈত্রীর পটভূমি গড়ার চেষ্টা করে । 

আপস মিমাংসার উদ্যোগ : 

জাতীয় নেতাদের মধ্যে তেজ বাহাদুর সপ্রু , জয়াকার প্রমুখ উদারপন্থী নেতৃবৃন্দ গান্ধিজি এবং বড়ােলাট আরউইন উভয়কেই আপস মিমাংসার অনুরােধ জানালে এক মৈত্রীর পটভূমি রচিত হয় ।

বণিক ও শিল্পপতি গোষ্ঠী চাপ :

ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন শিল্পের শুল্ক আদায়ের ব্যাপারে নমনীয় নীতি গ্রহণ করলে দেশীয় বণিক ও শিল্পপতি গােষ্ঠীগুলি পরবর্তী গােলটেবিল বৈঠকগুলিতে যােগ দেওয়ার জন্য গান্ধীজিকে অনুরােধ জানান । অপরদিকে কংগ্রেসের একটানা আন্দোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টারের বস্তু ব্যবসায়ীরাও কংগ্রেসের সঙ্গে আপস মিমাংসায় আসার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে চাপ দেয় । ফলে গান্ধী আরউইন চুক্তির পটভূমি গড়ে ওঠে ।

গান্ধী আরউইন চুক্তির শর্ত

গান্ধী – আরউইন চুক্তির ধারাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল 一

1. সমস্ত দমনমূলক আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহৃত হবে ; 

2. হিংসাত্মক কার্যকলাপে অভিযুক্ত বন্দি ছাড়া অন্য সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে । 

3. সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যােগদানের অপরাধে বাজেয়াপ্ত অর্থ ও সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হবে ; 

4. সমুদ্রতীরবর্তী অধিবাসীদের খাওয়ার জন্য নুন তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হবে ; 

5. বিলাতি কাপড় ও মদের দোকানে শান্তিপূর্ণ পিকেটিং বেআইনি ঘােষিত হবে না ; 

6. দেশীয় শিল্পের উন্নতির জন্য ভারতীয়দের বিদেশি পণ্য বর্জন নীতি ব্রিটিশকে মানতে হবে ; 

7. পুলিশের দমনপীড়নমূলক কাজের জন্য কোনাে তদন্তের দাবি জানানাে যাবে না ; 

8. অনাদায়ি জরিমানা সরকার মকুব করবে , কিন্তু আদায় করা জরিমানা সরকার ফেরত দেবে না ; 

9. পদত্যাগী সরকারি কর্মীদের আবার কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হবে । 

অপরপক্ষে কংগ্রেস আইন অমান্য ও কর বন্ধ আন্দোলন প্রত্যাহার এবং দ্বিতীয় গােলটেবিল বৈঠকে যােগদান করতে রাজি হয় ।

গান্ধী আরউইন চুক্তির গুরুত্ব

জাতীয়তাবাদীদের স্বরাজের দাবি এবং ভগৎ সিং ও তাঁর সহকর্মীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মকুবের দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় সুভাষচন্দ্র প্রমুখ তরুণ নেতৃবৃন্দ গান্ধী আরউইন চুক্তিতে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হন । জাতীয় নেতারা মনে করেছিলেন এই চুক্তি আসলে আইন অমান্য আন্দোলনের পিছনে ছুরিকাঘাত । এই চুক্তিকে কঠোর ভাষায় সমালােচনা করেছিলেন বামপন্থীরাও । কেননা তাঁদের মতে , এই চুক্তি দ্বারা কৃষক আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল । করাচি কংগ্রেসের অধিবেশনে তাই গান্ধীজির সামনেই স্লোগান ওঠে — ভগৎ সিং – এর ফাঁসির জন্য গান্ধিজি দায়ী । সুভাষচন্দ্র বসু এই চুক্তির কঠোর সমালােচনা করে লেখেন— এটি ছিল দেশের রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ ও যুব সংগঠনের কাছে এক চরম নৈরাশ্যজনক চুক্তি ( ‘ The agreement was a great disappointment to the politically minded section of the people and the youth organisation of the country ‘ )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!