আইন অমান্য আন্দোলনে খান আবদুল গফফর খান এর ভূমিকা
Contents
আইন অমান্য আন্দোলনে খান আবদুল গফফর খান এর ভূমিকা

উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যিনি দক্ষ হাতে আইন অমান্য আন্দোলনকে পরিচালনা করেছিলেন তিনি হলেন পাঠান নেতা আবদুল গফফর খান , ভারতের ইতিহাসে যিনি সীমান্ত গান্ধী নামে পরিচিত । তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বেই গান্ধীজীর প্রদর্শিত পথে আইন অমান্য আন্দোলন মুসলিম অধ্যুষিত সীমান্ত প্রদেশে পেশােয়ার পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল । জওহরলাল ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ গ্রন্থে লিখেছেন — উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে দুর্ধর্ষ ও কলহপ্রিয় মানুষদের যেভাবে আবদুল গফফর খান শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করিয়েছিলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর ।
খোদা-ই-খিদমতগার দল গঠন
১৯৩০ – এর জানুয়ারি মাসে গফফর খান ‘ খোদা-ই-খিদমতগার ’ ( ঈশ্বরের সেবক ) নামক একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন । এর সদস্যরা সীমান্ত অঞ্চলের প্রাচীন পােশাক লাল রঙের কুর্তা ব্যবহার করত বলে এরা ‘ লাল কোর্তা ’ ( Red Shirt ) নামেও পরিচিত ছিল ।
আবদুল গফফর খানের আন্দোলনের কর্মসূচি
আবদুল গফফর খানের সুদক্ষ নেতৃত্বে ‘ লাল কোর্তা ’ বাহিনী কংগ্রেসের তেরঙা পতাকা হাতে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে সভা সমিতি ও শােভাযাত্রার আয়ােজন করত । শত প্ররােচনা সত্ত্বেও এই বাহিনী ছিল শান্তিপূর্ণ । তারা এই অঞ্চলে আইন অমান্য আন্দোলনকে সার্থক করে তােলে ।
দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের জাগরণ
আবদুল গফফর খানের নেতৃত্বে সীমান্ত প্রদেশ অঞ্চল জুড়ে সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালিত হয় । খোদা-ই-খিদমতগার দল সীমান্ত উপজাতিদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবােধ জাগিয়ে তােলে ।
অহিংস আদর্শ স্থাপন
যখন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে , ঠিক তখনই ব্রিটিশের পুলিশ ও সেনাবাহিনী লাল কোর্তা বাহিনীর মিছিল ও শােভাযাত্রায় গুলি চালায় । ৬০০ জন লাল কোর্তা সদস্যের মধ্যে ৩০০ জন মারা যায় । তবুও আবদুল গফফর খান আন্দোলনে হিংসার অনুপ্রবেশ ঘটতে দেননি ।
মূল্যায়ন
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত আবদুল গফফর খান , তরানজাই – এর এক রক্ষণশীল হাজির সংস্পর্শে আসার পর প্রবল ব্রিটিশ বিরােধী হয়ে উঠেছিলেন । এ সময়ে তিনি অহিংস সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত হন এবং আইন অমান্য আন্দোলনে নিজেকে নিয়ােজিত করার সিদ্ধান্ত নেন । পাঠান হয়েও ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়ে অসামান্য কৃতিত্ব দেখানাের জন্যই ভারত সরকার তাঁকে মরণােত্তর ‘ ভারতরত্ন ’ উপাধি দান করেছে ।