খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে গান্ধীজীর ভূমিকা
Contents
খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে গান্ধীজীর ভূমিকা

গান্ধীজী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্নে যে তিনটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন , সেগুলি ছিল চম্পারন , খেদা এবং আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলন । এই তিনটি আন্দোলনেই গান্ধীজী প্রথম সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়ােগ ঘটান ও সফল হন । এই তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে গান্ধীজী জাতীয় নেতা হিসেবে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ।
খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত
গুজরাতের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে ও রাজনৈতিক দক্ষতার কারণে গান্ধীজী গুজরাত সভার সভাপতি হন । এসময় গান্ধীজীর সঙ্গে গুজরাতের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের যােগাযােগ গড়ে ওঠে । উপর্যুপরি শস্যহানি , বিলম্বিত বর্ষণ , মুদ্রাস্ফীতি , রােগের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি সত্ত্বেও সরকার রাজস্ব আদায়ের জন্য খেদার কৃষকদের উপর উৎপীড়ন অব্যাহত রাখে । এর প্রতিকারে গান্ধীজী খেদার কৃষকদের পাশে দাঁড়ানাের সিদ্ধান্ত নেন ।
অনুসন্ধান
খেদার কৃষকদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য গান্ধীজী বিঠলভাই প্যাটেল ও সারভেন্টস অব ইন্ডিয়া সােসাইটির সদস্যদের নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন । তিনি জানতে পারেন যে , খেদার কৃষকগণ স্বাভাবিক উৎপাদনের মাত্র চারভাগের একভাগ ফসল উৎপাদন করতে পেরেছে । এক্ষেত্রে রাজস্ব আইন অনুসারে খেদার কৃষকেরা ভূমিরাজস্ব সম্পূর্ণরূপে ছাড় পাওয়ার অধিকারী । কিন্তু রাজস্ব আইনকে অমান্য করে , কৃষকদের খাজনা মকুবের আবেদনকে উপেক্ষা করে সরকার জোর করে খাজনা আদায় অব্যাহত রেখেছে ।
খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দান
গান্ধীজী প্রথমে গুজরাত সভার মাধ্যমে আবেদন নিবেদনের নীতি গ্রহণ করেন এবং সরকারের কাছে আবেদন জানান । কিন্তু সরকার তাঁর আবেদন অগ্রাহ্য করে । পরে সরকারের অনমনীয় মনােভাবের জন্য গান্ধীজী বল্লভ ভাই প্যাটেল , ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ তরুণদের সঙ্গে নিয়ে সত্যাগ্রহের পথ গ্রহণ করেন ।
খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সফলতা
গান্ধীজীর নেতৃত্বাধীন খেদা কৃষক আন্দোলনের চাপে অবশেষে ব্রিটিশ সরকার নতিস্বীকার করে । সরকার বাধ্য হয়ে ঘােষণা করে এখন থেকে যারা খাজনা দিতে সক্ষম , তাদের কাছ থেকেই খাজনা আদায় করা হবে । আন্দোলনে সফল ভাবে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে গান্ধীজী গ্রামীণ কৃষকশ্রেণির সঙ্গে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির যােগসূত্র স্থাপন করেন ।
মূল্যায়ন
চম্পারন , আমেদাবাদ ও খেদার আন্দোলন পরিচালনার মাধ্যমে গান্ধীজী দেশবাসীর সামনে অহিংস সত্যাগ্রহ আদর্শ মেলে ধরেন । আন্দোলনগুলির সফলতার দরুন গান্ধীজীর নেতৃত্বের সুনাম আঞ্চলিকতাবাদের গণ্ডি টপকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে । এ প্রসঙ্গে ড. বিপানচন্দ্র বলেছেন — যথা সময়ে তিনি ( গান্ধীজী ) দরিদ্র , জাতীয়তাবাদী ও বিদ্রোহী ভারতের প্রতীক হয়ে ওঠেন । ( ‘ In time he became the symbol of poor India , nationalist India and rebellious India ’. )।