ইতিহাস

চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে গান্ধীজীর ভূমিকা

Contents

চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে গান্ধীজীর ভূমিকা

images 2
চম্পারন সত্যাগ্রহ

গান্ধীজী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্নে যে তিনটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন , সেগুলি ছিল চম্পারন , খেদা এবং আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলন । এই তিনটি আন্দোলনেই গান্ধীজী প্রথম সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়ােগ ঘটান ও সফল হন । এই তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে গান্ধীজী জাতীয় নেতা হিসেবে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ।

আন্দোলনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত

নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে বিহারের চম্পারন জেলার চাষিরা যখন অতিষ্ঠ , তখন গান্ধীজী তাদের পাশে দাঁড়ানাের সিদ্ধান্ত নেন । গান্ধীজী এসময়ে ( ১৯১৭ খ্রি. ) কাথিওয়াড় – এর ভিরামগাম রেলওয়ে স্টেশনে সরকারি শুল্ক কর্মচারীদের বেআইনি শুল্ক আদায়ের প্রতিবাদে রত ছিলেন । এখানে নেতৃত্বদানকালেই তিনি রাজকুমার শুক্লা নামে জনৈক কৃষকের কাছ থেকে চম্পারনে নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনি শােনেন এবং তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন চম্পারনে যাওয়ার ।

অনুসন্ধান

গান্ধীজী তাঁর কয়েকজন সঙ্গী আচার্য কৃপালনী , মহাদেব দেশাই , রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রমুখকে নিয়ে চম্পারনে এসে কৃষকদের দুর্দশার কারণ এবং নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেন । তিনি উপলদ্ধি করেন কৃষকরা সত্যিই তিন কাঠিয়া ব্যবস্থা ( বিশভাগের তিনভাগ জমিতে বাধ্যতামূলকভাবে নীলচাষপ্রথা ) র দ্বারা শােষিত হচ্ছে ।

চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দান

চম্পারনে গান্ধীজীর ভূমিকায় ক্ষুদ্ধ হয়ে সরকার তাকে চম্পারন ত্যাগের নির্দেশ দেন । কিন্তু গান্ধীজী সেই নির্দেশ অমান্য করে প্রায় আট হাজার কৃষকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন । অবশেষে গান্ধীজীকে বন্দি করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হলেও অবশেষে ব্রিটিশ তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ।

চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সফলতা

1. গান্ধীজীর অদম্য প্রচেষ্টার ফলেই শেষপর্যন্ত তিনকাঠিয়া ব্যবস্থার অবসান ঘটে ।

2. গান্ধীজীর সঙ্গে আপসরফা হিসেবে স্থির হয় — কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে ও বেআইনিভাবে আদায় করা অর্থের শতকরা ২৫ ভাগ নীলকররা ফিরিয়ে দেবেন ।

3. গান্ধীজীর চাপেই শেষপর্যন্ত সরকার নীলচাষিদের প্রকৃত অবস্থা অনুসন্ধানের জন্য এক তদন্ত কমিটি নিয়ােগ করতে বাধ্য হয় । এবং চম্পারন কৃষি বিল পাশ করায় ।

মূল্যায়ন

চম্পারন , আমেদাবাদ ও খেদার আন্দোলন পরিচালনার মাধ্যমে গান্ধীজী দেশবাসীর সামনে অহিংস সত্যাগ্রহ আদর্শ মেলে ধরেন । আন্দোলনগুলির সফলতার দরুন গান্ধীজীর নেতৃত্বের সুনাম আঞ্চলিকতাবাদের গণ্ডি টপকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে । এ প্রসঙ্গে ড. বিপানচন্দ্র  বলেছেন — যথাসময়ে তিনি ( গান্ধীজী ) দরিদ্র , জাতীয়তাবাদী ও বিদ্রোহী ভারতের প্রতীক হয়ে ওঠেন । ( ‘ In time he became the symbol of poor India , nationalist India and rebellious India ’. )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!