আইন অমান্য আন্দোলনে জনসাধারণের ভূমিকা
Contents
আইন অমান্য আন্দোলনে জনসাধারণের ভূমিকা

ভারতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় যে আইন অমান্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার সূত্রপাত করেন মহাত্মা গান্ধি স্বয়ং । ১২ মার্চ ( ১৯৩০ খ্রি. ) সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ গুজরাতের সবরমতি আশ্রম থেকে ৭৯ জন অনুগামী নিয়ে তিনি ২৪১ মাইল পথ ২৪ দিনে অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল ক্যাম্বে উপসাগরের তীরে ডান্ডি গ্রামে পৌছান । ৬ এপ্রিল ভােরে আরব সাগরে স্নান করে সাগরের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন ও আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা ঘটান ।
আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার জনগণের ভূমিকা
লবণ আইন ভঙ্গ :
বাংলার ২৪ পরগনা জেলার মহিষবাথান , নীলা , কালিকাপুর , ডায়মন্ডহারবার এবং মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমায় বিরাট আকারে লবণ আইন ভঙ্গ করা হয় । কাঁথি মহকুমার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে লবণ আইন ভঙ্গ করার জন্য কর্মী শিবির স্থাপিত হয় এবং নিয়মিত ভাবে লবণ সত্যাগ্রহ চলতে থাকে ।
অন্যান্য আইন ভঙ্গে :
পাশাপাশি সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের অভ্যন্তর ভাগে অন্যান্য আইন ভঙ্গ করার কর্মপদ্ধতি গৃহীত হয় । কলকাতার মেয়র যতীন্দ্রমােহন সেনগুপ্ত প্রকাশ্য জনসভায় ব্রিটিশ কর্তৃক নিষিদ্ধ গ্রন্থ পাঠ করে রাজদ্রোহ আইন ভঙ্গ করেন । যশােহর , বাঁকুড়া , ২৪ পরগনায় ইউনিয়ন বাের্ড – বিরােধী আন্দোলন শুরু হয় । কাঁথি , আরামবাগ , বালুরঘাট প্রভৃতি স্থানে কর বর্জন আন্দোলন শুরু হয় ।
আইন অমান্য আন্দোলনে অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের ভূমিকা
মধ্যপ্রদেশ ও বােম্বাইয়ে :
মধ্যপ্রদেশ ও বােম্বাই অঞ্চলে বন সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে দলে দলে সত্যাগ্রহীরা সরকারি বনাঞ্চল থেকে ঘাস ও শুকনাে কাঠ কেটে আইন অমান্য করেন । বােম্বাইয়ে সমানে পিকেটিং চলতে থাকে ।
বিহারে :
বিহারের চম্পারন , সারন , মুঙ্গের , পাটনা , শাহাবাদ প্রভৃতি স্থানে বিদেশি বস্ত্র ও মাদক দ্রব্য বিক্রির বিরুদ্ধে পিকেটিং চলে ।
গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে :
গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে কর ও খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু হয় ।
মাদ্রাজ ও ওড়িশায় :
মাদ্রাজে চক্রবর্তী রাজাগােপালাচারী ও ওড়িশায় ‘ উৎকলমণি ’ গােপবন্ধু চৌধুরীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন যথার্থ গণ আন্দোলনে পরিণত হয় ।
উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে :
উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে খ্যাতনামা পাঠান নেতা খান আবদুল গফফর খান – এর অসাধারণ নেতৃত্বে যুদ্ধবাজ পাঠানরাও আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । তারা সরকারি খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দিলে এই আন্দোলন সেখানে প্রবল আকার ধারণ করে ।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা
উল্লেখযােগ্য যে , এই আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন । ১০ এপ্রিল ( ১৯৩০ খ্রি. ) ‘ ইয়ং ইন্ডিয়া ‘ পত্রিকায় গান্ধিজি নারী সমাজকেও এই আন্দোলনে শামিল হতে আহ্বান জানান । ফলে এত অধিক সংখ্যায় মহিলারা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন যে , ইতিপূর্বে আর কোনাে আন্দোলনে তা দেখা যায়নি । হাজার হাজার ভারতীয় নারী এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন । শুধুমাত্র দিল্লি শহরেই ১৬০০ মহিলা আইন অমান্য করে গ্রেফতার হন । কস্তুরবা গান্ধি , কমলা নেহরু , বাসন্তী দেবী , নেলী সেনগুপ্ত , সরোজিনী নাইডু , সরলাবালা দেবী প্রমুখ বিশিষ্ট মহিলা এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন ।
TnQ sir