আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ
Contents
আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসহযােগের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম অহিংস গণ আন্দোলন ছিল আইন অমান্য আন্দোলন । ১৯৩০ – এর ফেব্রুয়ারিতে ‘ ইয়ং ইন্ডিয়া ’ পত্রিকায় গান্ধিজি আইন অমান্য আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা ও কর্মসূচি ঘােষণা করেন । ১৯২৭-৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালের ভারতবাসীর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত ও মতাদর্শগত বিভেদ আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল ।
অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতা
কোনাে ফলাফলে আসার আগেই গান্ধিজি অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই আন্দোলন ব্যর্থ হয় । ভারতবাসী বহু আশা নিয়ে এই আন্দোলনে যােগ দিয়েছিল কিন্তু আন্দোলন প্রত্যাহৃত হওয়ায় তাদের সে আশা পূরণ হয়নি । ফলে ভারতীয়রা পুনরায় আর একটি গণ আন্দোলনের অপেক্ষায় দিন গুণতে থাকে ।
স্বরাজ্য দলের ব্যর্থতা
স্বরাজ্য দল ভারতের রাজনীতিতে গতি ও প্রাণােচ্ছলতার প্রসার ঘটানাের জন্য গঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত এই দল তার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল । প্রবল গােষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ও দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর নেতৃত্বের অভাবে এই দল ক্রমশ ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে । ফলে লবণ আইন অমান্য আন্দোলন পুনরায় এক নতুন জাতীয় আন্দোলনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয় ।
কৃষক শ্রেণীর দুরবস্থা
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কায় ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে বেসামাল হয়ে পড়ে । পাট , তুলাে , তৈলবীজসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে থাকায় কৃষকরা দুরবস্থার শিকার হয় । এই সংকট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কৃষক সভাগুলি ও কমিউনিস্ট দল একজোট হয় ও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে পা বাড়ায় ।
শ্রমিক অসন্তোষ
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আঁচ শ্রমিকদের গায়েও লেগেছিল । বেতন হ্রাস , কাজের সময়সীমা বৃদ্ধি , ছাঁটাই , লক আউট ইত্যাদি কারণে তাদের মনে যে ক্ষোভ জমতে থাকে তা তারা উগরে দিতে চেয়েছিল এক বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে ।
অনুন্নত শ্রেণীর জাগরণ
বহুদিন ধরেই হিন্দু সমাজের অনুন্নত ও নিম্নবর্ণের লােকেরা উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের হাতে শােষিত হয়ে আসছিল । বিহারে গােয়ালা ও যাদব সম্প্রদায়ের আন্দোলন , মহারাষ্ট্রে সত্যশােধক আন্দোলন অনুন্নত শ্রেণির জাগরণ ঘটাতে প্রয়াসী হয় । গান্ধিজি বলেন — উচ্চবর্ণের হিন্দুরা হরিজনদের প্রতি যে পাপ করেছেন , এবার তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে ।
যুব আন্দোলনের প্রভাব
দেশের মধ্যে যখন বিভিন্ন ক্ষোভ ও অসন্তোষগুলি আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত লাভার মতাে জ্বলছে তখন যুব সমাজ তাকে আরও তীব্র করে তােলে । জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু এই যুব শক্তির নেতৃত্ব দেন । উভয়ে ‘ ইনডিপেনডেন্স লিগ ’ গঠন করে ডােমিনিয়ন স্টেটাসের বিরােধিতা করেন ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানান ।
সাইমন কমিশন
ভারতে নতুন সংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয় পর্যালােচনার জন্য সাইমন কমিশন গঠন করা হলেও এতে কোনাে ভারতীয় সদস্যকে নেওয়া হয়নি । এই উপেক্ষাকে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত দেশবাসী জাতীয় অপমান বলে মনে করে । সারাদেশ জুড়ে ব্রিটিশ বিরােধী ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে । জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে ( ১৯২৭ খ্রি. ডিসেম্বর ) সাইমন কমিশন বর্জনের প্রস্তাব গৃহীত হয় । শুরু হয় সাইমন কমিশন বর্জন আন্দোলন । সকলে স্লোগান তােলে— ‘ Simon Commission Go Back ‘ । বিশিষ্ট সাংবাদিক দুর্গা দাস তাঁর ‘ India from Curzon to Nehru & After ‘ গ্রন্থে লেখেন , সাইমন কমিশন বর্জনের ক্ষেত্রে যে উত্তেজনা দেখা দেয় , তা ভারতের সুপ্ত জাতীয়তাবাদকে জাগিয়ে তুলেছিল ।
নেহরু রিপোর্ট
ভারত সচিব লর্ড বার্কেনহেড ও বড়ােলাট আরউইন বলেন — ভারতীয়দের সংবিধান রচনার যােগ্যতা নেই । তাদের এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাদ্রাজ কংগ্রেসের প্রস্তাব অনুযায়ী দিল্লিতে এক সর্বদলীয় সম্মেলন আহূত হয় । এই সম্মেলনে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে এক কমিটির ওপর সংবিধান রচনার ভার দেওয়া হয় । লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে ( ২৮-৩১ আগস্ট , ১৯২৮ খ্রি. ) মতিলাল সংবিধান রচনার খসড়াপত্র পেশ করেন যা নেহরু রিপাের্ট নামে পরিচিত । গান্ধিজির হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রিপাের্টের প্রস্তাবগুলি এক বছরের মধ্যে কার্যকর করতে হবে , না হলে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করবে ।
বিপ্লবী কার্যকলাপ
নেহরু রিপাের্টের প্রকাশ , ভগৎ সিং – সুখদেব রাজগুরুর ফাঁসি , যতীন দাসের দীর্ঘ অনশন ও মৃত্যু , মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন , কৃষক – শ্রমিক – আদিবাসীদের আন্দোলন সারা ভারত জুড়ে ভবিষ্যতের এক বৃহৎ গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে ।
Thank you🙏
Thank you so much 🙏🙏
Please help me answers