ইতিহাস

আমেরিকার ইতিহাসে অর্থনৈতিক তেজিভাব বলতে কী বােঝ

Contents

আমেরিকার ইতিহাসে অর্থনৈতিক তেজিভাব বলতে কী বােঝ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ আর্থিক দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে পড়লেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে এক শক্তিশালী দেশরূপে আত্মপ্রকাশ করে । বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন যুদ্ধজনিত ক্ষতে প্রলেপ দিতে ব্যস্ত তখন আমেরিকার চমকপ্রদ দৃঢ় অর্থনীতি বিশ্বকে অবাক করে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সময় শ্রমিক সংখ্যা না বৃদ্ধি করে কেবলমাত্র কৌশল প্রয়ােগ করে ১৯২১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে শিল্পের উৎপাদন দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি করে । এই সময় ইউরােপের অধিকাংশ দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণগ্রস্ত ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বের প্রধান উন্নত দেশ ।

আমেরিকার ইতিহাসে অর্থনৈতিক তেজিভাবের কারণ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে  শ্রীবৃদ্ধি বা তেজিভাবের কারণ গুলি ছিল —

নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত আবিষ্কার :

নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কার এবং নতুন নতুন উৎস শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভােগ্যপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদন বহুগুণ বাড়ায় ।

আয়কর নীতি :

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯২৬ ও ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মার্কিনবাসীর আয়কর হ্রাস করে । ফলস্বরূপ মার্কিনবাসীর ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে । ফলে পণ্যদ্রব্যের চাহিদাও বাড়ে ও অতিরিক্ত উৎপাদন কাজে লাগে ।

বিলাস দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি :

বিংশ শতাব্দীর দুই -এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিলাসদ্রব্য যেমন মােটরগাড়ি , রেফ্রিজারেটর , ওয়াশিং মেশিন , টেলিফোন , ভ্যাকুম ক্লিনার ইত্যাদির ব্যাপক ভাবে উৎপাদন শুরু হয় । বিশেষত এ সময় মােটরগাড়ি শিল্পে অভাবনীয় উন্নতি ঘটে ।

শিল্প সংরক্ষণ নীতি :

মার্কিন সরকার বিভিন্ন দেশীয় শিল্পকে রক্ষার লক্ষ্যে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা শিল্প পণ্যের ওপরে অধিক হারে আমদানি শুল্ক চাপায় ।

উদার আর্থিক নীতি :

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সরকারের তরফে শিল্প স্থাপন ও কৃষির উন্নতিতে সরকারি ঋণ প্রদানে উদারীকরণ নীতি গৃহীত হয় । এ ছাড়াও ব্যাবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ বা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সরকারি তরফে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় ।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ :

ক্রমবর্ধমান শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির বিদ্যুতের চাহিদা মেটানাের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয় । ফলে বিদ্যুতের সহজ জোগান থাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ।

নতুন কলাকৌশল ও পরিচালন পদ্ধতির প্রয়োগ :

বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে নতুন নতুন কৌশলের প্রয়ােগ ঘটিয়ে এবং পরিচালন পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে সস্তায় উন্নত মানের পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন শুরু হয় , যা ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ।

সিনেমা শিল্পে সমৃদ্ধি :

বিনােদনের অঙ্গরূপে মার্কিনিরা সিনেমা দেখাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলে । ফলে সিনেমা শিল্পে সমৃদ্ধি আসে । মার্কিনি চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হলিউড সমগ্র বিশ্বের কাছে অনুসরণযােগ্য হয়ে ওঠে । এইচ. বি. পাক্স  বলেছেন — ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সিনেমা দেখা আমেরিকাবাসী অভ্যাসে পরিণত করেছিল ( ‘ In the 1920’s movie going became a national habit ’ )।

উপসংহার 

বিংশ শতাব্দীর দুই – এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির তেজিভাব – এর স্থায়িত্ব ছিল সাময়িক । কারণ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকেই শুরু হয়েছিল মার্কিন অর্থনীতিতে মহামন্দা । যাই হােক ১৯২১-২৯ খ্রিস্টাব্দ এই সময়কাল মার্কিন ইতিহাসের প্রাচুর্যের যুগ নামে পরিচিত ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!