রক্তাক্ত রবিবার বলতে কী বোঝো
Contents
রক্তাক্ত রবিবার বলতে কী বোঝো

রাশিয়ার পেট্রোগ্রাড শহরে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি রবিবারে ৬০০০ শ্রমিকের একটি দল ফাদার গ্যাপোঁ নামক এক নেতার নেতৃত্বে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের শীতকালীন প্রাসাদ সেন্ট পিটার্সবার্গে তাদের কিছু দাবি আদায়ের জন্য জমায়েত করেন । জারের সেনারা তাদের ওপর নৃশংসভাবে গুলি চালায় । ইতিহাসে এই ঘটনাটি ‘ রক্তাক্ত রবিবার ’ নামে পরিচিত । স্বৈরাচারী জারতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম গণ অভ্যুত্থান । এই ঘটনা ১৯০৫ – এর রুশ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ বলা চলে । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯০৫ – এর বিপ্লব প্রসঙ্গে ট্রটস্কি বলেছেন , ১৯০৫ – এর ঘটনা কোনাে বিপ্লব ছিল না কিন্তু এটা ছিল বিপ্লবের মহড়া । অ্যালান উডও এ মতের সমর্থন করে ‘The Origins of Russian Revolution ‘ গ্রন্থে লিখেছেন — ( ‘ Lenin described the events of 1905 not as a revolution , but as a dress rehearsal for revolution ’ ) ।
রক্তাক্ত রবিবার পটভূমি
রুশ – জাপান ( ১৯০৪-০৫ খ্রি. ) যুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে একের পর এক রুশ বাহিনীর পরাজয়ের সংবাদ একদিকে যখন জারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলছিল , অন্যদিকে তখন ওই যুদ্ধের কারণেই আর্থিক দুরবস্থা , উৎপাদনহীনতা , দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি , শ্রমিকদের বেতন হ্রাস ইত্যাদি দেশবাসীর দুঃখ দুর্দশাকে সীমাহীন করে তুলেছিল । এইরকম এক পরিস্থিতিতে ১৯০৫ – এর ৯ ( নতুন পঞ্জিকা মতে ২২ ) জানুয়ারি প্রতিবাদী রুশরা —
1. রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ,
2. সংবিধান সভার আহ্বান ,
3. কারখানায় কাজের সময়সীমা ৮ ঘণ্টা নির্ধারণ ইত্যাদি বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে জারের কাছে একটি আবেদনপত্র পেশ করে ।
ওই আবেদনপত্রে শ্রমিকদের নিজস্ব দাবিদাওয়া ছাড়াও শাসন তান্ত্রিক সংস্কারের জন্য কিছু দাবিও জানানাে হয়েছিল । কিন্তু যে – কোনাে কারণেই হােক , জারের নির্দেশে তাঁর পুলিশ ও কসসাক ( Cossak ) বাহিনী ওইসব শ্রমিক ও তাদের পরিবার – পরিজনের ওপর গুলি বর্ষণ করলে বহু মানুষ হতাহত হয় ।
রক্তাক্ত রবিবার এর প্রতিক্রিয়া
হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সারা দেশজুড়েই । পেট্রোগ্রাড শহর ছাড়িয়ে রাশিয়ার অন্যান্য শহরগুলিতেও ধর্মঘট শুরু হয় , দেখা দেয় কৃষক বিদ্রোহ । বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসবাদী হত্যালীলা বেঁধে যায় । এ ছাড়াও জারের সেনাবাহিনীতেও এই ঘটনা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে , যার নিদর্শন কৃষ্ণসাগরে পােটেমকিন নামক যুদ্ধ জাহাজে নাবিকদের বিদ্রোহ ( ১৯০৫ খ্রি. জুন ) ।
রক্তাক্ত রবিবার এর ফলাফল
ঘটনাটি প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সর্বত্র প্রতিবাদ , বিক্ষোভ ও হরতালের ঝড় বয়ে যায় । পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে দ্বিতীয় নিকোলাস অক্টোবর ইস্তাহার জারি করে কিছু শাসন তান্ত্রিক সংস্কারের কথা ঘােষণা করেছিলেন । এই ঘােষণার দ্বারা জার দ্বিতীয় নিকোলাস রুশ জনগণকে শাসন কার্যে অংশগ্রহণের যােগ দিতে বাধ্য হন ।