ইতিহাস

উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতি কি

Contents

উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতি কি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পতন নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মার্কিন কংগ্রেসে তাঁর শান্তি পরিকল্পনা ঘােষণা করেন । এই ঘােষণায় তিনি চৌদ্দটি শর্ত দেন ( ১৯১৮ খ্রি. ৮ জানুয়ারি ) । এগুলি উইলসনের চৌদ্দ দফা দাবি নামে পরিচিত । উইলসন  বলেন — বিশ্বের শান্তি রাজনৈতিক স্বাধীনতার ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে হবে । কোনাে স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য আমাদের নেই । 

উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা দাবি 

উইলসন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে যে চৌদ্দটি দাবি জানান সেগুলি ছিল এরকম 一

1.আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কূটনৈতিক গােপন চুক্তির বদলে দেশগুলিকে খােলাখুলি শান্তি আলােচনা করতে হবে । 

2. মহাসাগরে নিরপেক্ষ দেশগুলির অবাধ জাহাজ চলাচলের অধিকার থাকবে । 

3. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিটি দেশের অবাধ অধিকার স্বীকৃতি পাবে । 

4. কোনাে দেশই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অতিরিক্ত সামরিক শক্তি বজায় রাখবে না । 

5. উপনিবেশগুলির ওপর বিভিন্ন দেশের দাবি নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে । 

6. রাশিয়াকে তার অধিকৃত অঞ্চলগুলি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং সেখান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে ।

7. বেলজিয়াম থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে তাকে স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে । 

8. ফ্রান্স থেকে জার্মান সৈন্যবাহিনী সরিয়ে নিতে হবে এবং তাকে আলসাস – লােরেন অঞ্চল ফিরিয়ে দিতে হবে । 

9. জাতিগত ভিত্তিতে ইতালির রাজ্য সীমা ঠিক করতে হবে । 

10. অস্ট্রিয়া – হাঙ্গেরির বিভিন্ন জাতিকে স্বায়ত্ত শাসনের সুযােগ দিতে হবে । 

11. বলকান রাজ্যগুলিকে স্বাধীনতা দিতে হবে ও সার্বিয়া অঞ্চলকে সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে । 

12. তুরস্কের সুলতানের সাম্রাজ্য ভুক্ত জাতিগুলিকে স্বায়ত্ত শাসনের সুযােগ দিতে হবে এবং দার্দানালিস প্রণালী নিরপেক্ষ রাখতে হবে । 

13. স্বাধীন ও সার্বভৌম পােল্যান্ড রাষ্ট্র গঠন করা হবে । 

14. বিশ্বের সব দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে । 

উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতির বৈশিষ্ট্য 

উইলসনের চৌদ্দ দফা দাবিগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল — 

1.এই দাবিগুলিতে জার্মানিকে শাস্তি প্রদান বা তার বিরুদ্ধে প্রতিশােধ গ্রহণের কোনাে উল্লেখ ছিল না । 

2. জার্মানির কাছ থেকে বিদেশি দেশগুলির ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও কোনাে উল্লেখ ছিল না । 

3. জার্মানি সহ বিশ্বের সব শক্তিশালী দেশগুলিকেই অস্ত্র কমানাের কথা বলা হয়েছিল । 

4. ইউরােপের পরাধীন জাতিগুলিকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে ইউরােপ পুনর্গঠনের কথা বলা হয় । 

5. যুদ্ধ বিজয়ী দেশগুলি বিশ্বজুড়ে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে এরও কোনাে আভাস ছিল না ।

উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতির গুরুত্ব

উইলসনের চৌদ্দ দফা দাবিগুলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কার বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছিল । 

1. চৌদ্দ দফা দাবিতে গােপন চুক্তি , বাণিজ্য শুল্ক , ঔপনিবেশিক বিবাদ , অস্ত্র প্রতিযােগিতা ইত্যাদির অবসান ঘটানাের কথা বলা হলে বিশ্বের বহু দেশই তা মেনে নিয়েছিল । 

2. উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতিগুলি যুদ্ধােত্তর বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পটভূমি রচনা করতে পেরেছিল । 

মূল্যায়ন

যখন বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু ও ধ্বংস যজ্ঞের তাণ্ডব লীলা চলছে , মানুষ যখন শুভবুদ্ধি ও মূল্যবােধ হারিয়ে ফেলেছে ঠিক তখন উইলসনের চৌদ্দ দফা দাবিগুলি এক নতুন মূল্যবােধের জন্ম দিয়েছিল । উইলসন আশা প্রকাশ করেছিলেন , প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হবে মানব জাতির শেষ যুদ্ধ , পৃথিবীতে আর এরূপ যুদ্ধ ঘটবে না ।

10 thoughts on “উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতি কি

  • Tanima Giri

    Thanks for the answer. ঠিক এরকমভাবে সকলের সবরকম help করা উচিত.

    Reply
    • Sayan Das

      দিদি রায় ও মার্টিনের ইসলাম সহায়িকার থেকে ভালো

      Reply
      • Susmita Dey

        সময়ে ভীষণ ভাবে সাহায্য করেছেন। পরীক্ষার সময় নোটটা পড়ে গিয়েছিলাম খাতায় ছিল না। অনেক সুবিধা হয়েছে, ধন্যবাদ।

        Reply
    • Souvik barai

      Thanks for help

      Reply
      • Anonymous

        Thanks for all answer separately

        Reply
  • Anonymous

    অসংখ্য ধন্যবাদ

    Reply
    • Goriashish Sen

      Thanks for all answer seperately Subtitle Good For All

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!