ইতিহাস

ডয়েস পরিকল্পনার গুরুত্ব / ফলাফল / ত্রুটি

Contents

ডয়েস পরিকল্পনার গুরুত্ব / ফলাফল / ত্রুটি

চার্লস জি. ডয়েস ছিলেন একজন মার্কিন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ । তাঁর নেতৃত্বে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর ব্রিটেন , ফ্রান্স , ইতালি ও বেলজিয়ামের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে তােলা হয় । ডয়েস কমিটি নামে পরিচিত এই কমিটির ওপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজিত জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধানের ভার দেওয়া হয় । ডয়েস কমিটি এই সমস্যা সমাধানের জন্য যে সমস্ত সুপারিশ করে সেটিই ডয়েস পরিকল্পনা নামে খ্যাত । গ্যারথন হার্ডির মতে — ডয়েস পরিকল্পনা মিত্রশক্তি ও জার্মানির মধ্যে বােঝাপড়ার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটায় । 

index 1
চার্লস জি. ডয়েস

ডয়েস কমিটির সুপারিশ 

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল ডয়েস কমিটি যেসব সুপারিশ করেছিল সেগুলি হল— 

1. ক্ষতিপূরণের প্রশ্নটিকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিয়ে বিচার করতে হবে , রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে নয় । 

2. জার্মানিকেই নিজের অর্থনীতি নির্ধারণ করতে দিতে হবে , বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া চলবে না । 

3. জার্মানিকে তার অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব ভােগ করতে দিতে হবে । 

4. শিল্পসমৃদ্ধ রুর অঞ্চলকে ফরাসি ও বেলজিয়ামের দখল থেকে মুক্ত করতে হবে । 

5. জার্মানির শিল্পোন্নয়নে মিত্রশক্তিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে । 

6. জার্মানির মুদ্রাস্ফীত রােধ করার জন্য পূর্ব প্রচলিত মুদ্রা রেনটন মার্কের ( Reneten Mark ) বিনিময় হার বজায় রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীনে নতুন মুদ্রা ‘ রাইস মার্ক ’ চালু করা হবে । 

7. স্থির হয় জার্মানিকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে । ওই অর্থ থেকে জার্মানি প্রথম দিকে ক্ষতিপূরণের কিস্তি দেবে । 

8. প্রথম ৫ বছর জার্মানি বার্ষিক ৫ কোটি পাউন্ড হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেবে । পাঁচ বছর পরে ওই কিস্তির পরিমাণ হবে বার্ষিক ১২৫ কোটি পাউন্ড । 

9. ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে মূলত জার্মানির তিনটি মূল আয়ের সূত্র থেকে , যথা— ( i ) রেলপথের বন্ড , ( ii ) শিল্পের বন্ড , ( iii ) মদ , তামাক ও চিনির রাজস্ব থেকে ।

ডয়েস পরিকল্পনার গুরুত্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজিত জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল , তা সমাধানের ব্যাপারে ডয়েস পরিকল্পনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য । 

বিরােধ মিমাংসা : 

এই পরিকল্পনাই জার্মানি ও মিত্রশক্তির মধ্যে ক্ষতিপূরণ সমস্যা নিয়ে বিরােধের অবসান ঘটায় । এর দ্বারা ক্ষতিপূরণ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও ভবিষ্যৎ সমাধানের ভিত্তি যে এখানেই রচিত হয়েছিল তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। 

বিশ্ব শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি : 

পরবর্তীকালে ইউরােপীয় নেতৃবর্গ যে বিশ্ব শান্তির প্রতি মনােযােগী হতে পেরেছিলেন , তা নিঃসন্দেহে এই পরিকল্পনারই এক পরােক্ষ ফসল । 

অন্যান্য চুক্তিতে সাহায্য :

এই পরিকল্পনা লােকার্নো চুক্তির ইয়ং পরিকল্পনার পথকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল । 

ডয়েস পরিকল্পনার ফলাফল

ডয়েস পরিকল্পনার বিশ্লেষণে যায় 一

অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে সহায়তা : 

এই পরিকল্পনা জার্মানিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করে । 

জার্মানিকে চাপ মুক্ত করা : 

জার্মানি ক্ষতিপূরণ দিতে না পারলেও তার বিরুদ্ধে কোনাে রকম সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে কমিশন জানিয়ে দেয় , ফলে জার্মানি কিছুটা চাপ মুক্ত হয়েছিল । 

সম্পর্কের উন্নতি সাধন : 

এই পরিকল্পনা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায় । 

ডয়েস পরিকল্পনার ত্রুটি

ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনার সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালােচনার জন্য মার্কিন বিশেষজ্ঞ সেমুর পার্কার গিলবার্টকে নিযুক্ত করা হলেও এর কিছু ত্রুটি রয়েই যায় । যথা 一

ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নিয়ে অস্পষ্টতা : 

এই পরিকল্পনাতে জার্মানি কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেবে বা কত বছর ধরে সেই কাজ চালিয়ে যাবে তার কোনাে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল না । 

জার্মানির ঋণগ্রস্ততা :

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী জার্মানিকে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় , যার পরিণামে জার্মানি ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে । 

শিল্প বাণিজ্যের অবনতি :

এই পরিকল্পনায় বলা হয় জার্মানির অর্থনীতি উন্নত হতে থাকলে ঋণ পরিশােধের কিস্তির পরিমাণও বাড়াতে হবে , যার ফলে উদ্বৃত্ত অর্থ জার্মানি শিল্প বাণিজ্যে কাজে লাগাতে পারেনি । পরিণামে শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি ব্যাহত হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!