জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী বিভাজন / বিরোধ
Contents
জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী বিভাজন / বিরোধ
জাতীয় কংগ্রেসের প্রথমযুগে ব্রিটিশের সঙ্গে আপস রফার মাধ্যমে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , দাদাভাই নওরােজি সহ নরম পন্থী নেতৃবন্দ ভারতবাসীর আশা – আকাক্ষা পূরণ করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু বিপিনচন্দ্র পাল , লালা লাজপত রায় , অরবিন্দ ঘােষ প্রমুখ চরমপন্থী নেতৃবর্গ প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে, বিশ্বাসী ছিলেন ।

জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী বিরোধের কারণ
পরাধীনতার শৃঙ্খল মােচনে জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ , লক্ষ্য ও পদ্ধতিগত মতপার্থক্যের দরুন কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গােষ্ঠীর মধ্যে বিরােধ সৃষ্টি হয় । বিরােধের কারণগুলি হল —
আদর্শগত পার্থক্য :
নরম পন্থী রাজনীতিকদের আদর্শ , আশা – আকাঙ্ক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিল পাশ্চাত্য সভ্যতা । অপরদিকে চরমপন্থীদের রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তি ছিল সনাতন হিন্দুধর্ম , ভারতের গৌরবময় অতীত ও পূর্ণ স্বাদেশিকতা।
উদ্দেশ্যগত পার্থক্য :
ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনই নরম পন্থীদের মূল লক্ষ্য ছিল । অন্যদিকে ‘ পূর্ণ স্বরাজ ’ অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জন ছিল চরমপন্থীদের একমাত্র লক্ষ্য ।
পদ্ধতিগত পার্থক্য :
ব্রিটিশের কাছে আবেদন – নিবেদনই ছিল নরম পন্থীদের লক্ষ্যে পৌছােবার কর্মপদ্ধতি । পক্ষান্তরে ‘ বয়কট ‘ , ‘ স্বদেশি ’ এবং আত্মশক্তি ছিল চরমপন্থীদের কর্মপদ্ধতি ।
প্রকৃতিগত পার্থক্য :
প্রকৃতির দিক থেকে চরমপন্থী আন্দোলন ছিল ভবিষ্যতের গণ আন্দোলনেরই প্রাথমিক রূপ । অপরদিকে নরম পন্থীদের আন্দোলন ছিল শুধুমাত্র শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চশিক্ষিত চাকুরিজীবী , শিক্ষক , ব্যারিস্টারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ এক আন্দোলন ।
চেতনার পার্থক্য :
চরমপন্থী আন্দোলন আত্মনির্ভরশীলতার আদর্শে বিশ্বাসী ছিল । অপরদিকে নরম পন্থী আন্দোলন ব্রিটিশের কার্যকলাপের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় নরম পন্থী এবং চরমপন্থীদের মধ্যে বিরােধ বাঁধে ।
সামাজিক ভিত্তিগত পার্থক্য :
নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে সামাজিক ভিত্তিগত পার্থক্য বিদ্যমান ছিল । নরমপন্থীদের সামাজিক ভিত্তি ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও শহুরে উচ্চবিত্ত শ্রেণি । অপরদিকে চরমপন্থীদের সামাজিক ভিত্তি ছিল ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত অথচ যােগ্য মর্যাদা ও সম্মান থেকে বঞ্চিত শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ।
মন্তব্য
নরমপন্থীরা ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন লাভেই সন্তুষ্ট ছিলেন । তারা মনে করতেন ভারতবাসীর মঙ্গলের জন্যই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজত্বের স্থায়িত্ব বাড়ুক । তাই গান্ধিজির রাজনৈতিক গুরু গােপালকৃষ্ণ গােখলে বলেছিলেন — পাগলা গারদের বাইরে থাকা পাগলারাই একমাত্র স্বাধীনতার কথা বলতে পারে ( Only madmen outside lunatic asylums could think or talk of independence ‘ ) । অপরদিকে চরমপন্থীরা চেয়েছিলেন পূর্ণ স্বরাজ অর্জন করতে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পেতে । পূর্ণ স্বরাজ প্রসঙ্গে তিলক বলেছিলেন — বিদেশি শাসনের সর্বোত্তমরূপ অপেক্ষাও স্বরাজ মঙ্গলজনক ( ‘ Swaraj is better than the best form of a foreign rule ‘ ) ।
নরমপন্থি ও চরমপন্থী কাকে বলে চাই
নরমপন্থী কাদের বলা হত ?
উত্তর :-সূচনাকাল অর্থাৎ ১৮৮৫ থেকে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশদের প্রতি আন্দোলনের পরিবর্তে আবেদন – নিবেদন নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এই নরমপন্থার জন্য জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম যুগের নেতৃবৃন্দকে নরমপন্থী বলা হয়।
জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম কুড়ি বছরের রাজনৈতিক কাযকে মোটামুটি ভাবে নরমপন্থী বলা হয়.প্রথম অবস্থায় এটি রাজনৈতিক দলও ছিল না, বার্ষিক অধিবেশনে সীমাবদ্ধ ছিল, তিন দিন ব্যাপী এক তামাশায় সেই অধিবেশনে বক্তব্য রাখা হতো এবং কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়
Thank you sir🙏🙏🙏🙏🙏
চরমপন্থী কাদের বলা হত ?
উত্তর :-কংগ্রেসের মধ্যে একদল নেতৃত্ব নরমপন্থীদের আবেদন – নিবেদন নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন ; তাঁরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ গণ আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন ; তাঁদের মূল দাবি ছিল ” স্বরাজ। ” কংগ্রেসের এই সকল নেতৃবৃন্দকে বলা হত চরমপন্থী। চরমপন্থী নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – বিপিনচন্দ্র পাল , বাল গঙ্গাধর তিলক , লালা লাজপত রাই , অরবিন্দ ঘোষ – প্রমুখ।