ইতিহাস

ইলবার্ট বিল আন্দোলন

Contents

ইলবার্ট বিল আন্দোলন

১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ফৌজদারি আইন বিধি অনুসারে ইউরােপীয়দের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় বিচারকদের ছিল না । অথচ তাদের অধস্তন ইউরােপীয় বিচারকগণ ওই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন । জাতিভেদ সৃষ্টিকারী এই জঘন্য আইন পরিবর্তন করার জন্য ভাইসরয় লর্ড রিপনের পরামর্শে তাঁর আইন সচিব কোর্টনে ইলবাট একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করেন যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত ।

Support for the Ilbert Bill
ইলবার্ট বিল আন্দোলন

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের বিষয়বস্তু

ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় আগাগােড়াই বর্ণ বৈষম্য নীতি বজায় ছিল । এই জাতিগত বৈষম্যের অবসান ঘটানাের জন্যই লর্ড রিপন এই আইন প্রণয়ন করেন । এই আইনের বিষয় বস্তুরুপে বলা হয় এখন থেকে ভারতীয় বিচারকগণ শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন ।

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া

এদেশের সরকারি ও বেসরকারি শ্বেতাঙ্গ মহল ইলবার্ট বিল আইনের খসড়া প্রস্তাবটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার ব্রানসন – এর নেতৃত্বে শ্বেতাঙ্গরা একটি প্রতিরক্ষা সভা ( Defence Association ) গঠন করে । ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি ইংল্যান্ডেও এই ডিফেন্স অ্যাসােসিয়েশনের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় । ভারতের ইংলিশম্যান পত্রিকা ও ইংল্যান্ডের দি টাইমস পত্রিকা রিপন প্রবর্তিত এই বিলের তীব্র সমালােচনা করে । এই সমিতিটির অধীনে দেড়লাখ টাকার চাঁদা তুলে শ্বেতাঙ্গরা আন্দোলন পরিচালনা করে । ইলবার্ট বিল বিরােধী এই শ্বেতাঙ্গ আন্দোলনের প্রত্যুত্তরে সুরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ভারতসভা ওই বিলের সমর্থনে একটি প্রতি-আন্দোলন গড়ে তােলে ।

ইলবার্ট বিলের সংশোধিত রূপ

শ্বেতাঙ্গদের তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের জেরে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয় বিলটি সংশােধন  করতে । সংশােধনের পর ইলবার্ট বিল আইনে ঘােষণা করা হয় যে , এখন থেকে ভারতীয় বিচারকগণ ইউরােপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁকে জুড়ির সাহায্য নিতে হবে । বলাই বাহুল্য এই জুড়ির অধিকাংশই  ছিল ইউরােপীয় । বিলটির সংশােধিত রূপ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ব্লান্ট বলেছেন — ভারতের সংস্কার বিরােধী অ্যাংলাে ইন্ডিয়ান আমলাদের কাছে সরকার নির্লজ্জ ভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল ।

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব

শ্বেতাঙ্গদের অর্থ সমৃদ্ধ জোটবদ্ধ আন্দোলনের কাছে সরকারের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণের ফলে ( ১৮৮৪ খ্রি. ) বিলটির প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় । তা সত্ত্বেও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ।

  1. শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি ছিল ব্রিটিশ শাসনের মূল কথা — ব্রিটিশের এই ভূমিকা জাতিবর্ণে বিশ্বাসী ভারতীয়দের কাছেও অপমানকর ছিল ।
  2. বিলটির সংশােধনে শ্বেতাঙ্গদের জয় এই ধারণার জন্ম দেয় যে — সুসংহত , অর্থসমৃদ্ধ রাজনৈতিক সমিতির মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সম্ভব ।
  3. স্বাধীনতা অর্জিত হওয়া পর্যন্ত ভারতের জাতীয় মর্যাদা লাভ করা সম্ভব নয় ।

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের ফলাফল

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের সুফলরূপে এক বছরের মধ্যেই সুরেন্দ্রনাথের উদ্যোগে একটি সর্বভারতীয় জাতীয় তহবিল গঠিত হয় এবং মাদ্রাজে বীর রাঘবাচারী প্রমুখের নেতৃত্বে  মহাজন সভা ও বােম্বাইয়ে ফিরােজ শাহ মেহতা প্রমুখের নেতৃত্বে বােম্বাই প্রেসিডেন্সি অ্যাসােসিয়েশন স্থাপিত হয় । ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের  মতে — ভারতীয় রাজনীতির অগ্রগতিতে ইলবার্ট বিল বিশালভাবে সাহায্য করেছিল (‘ The  Ilbert Bill greatly helped the cause of Indian political advance ‘ ) ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!