Contents
1878 সালের অস্ত্র আইন বলতে কী বোঝো
কট্টর সাম্রাজ্যবাদী শাসক বড়োলাট লর্ড লিটন ভারতে জাতীয়তাবাদী জাগরণকে ধ্বংস করার জন্য জারি করেন কুখ্যাত অস্ত্র আইন ( ১৮৭৮ খ্রি. ) । সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতীয়দের আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ হয় । লর্ড লিটন প্রবর্তিত ভারতীয়দের স্বার্থ বিরােধী আইনগুলি ব্যাপক জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিকাশ ঘটিয়েছিল । এ প্রসঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ বেঙ্গলি পত্রিকায় লেখেন — লর্ড লিটন তাঁর বিভিন্ন কার্যকলাপের দ্বারা ভারতে জনমত গঠনে সহায়তা করেছেন এবং তাঁর এই অবদানের জন্য আমাদের দেশ তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে ।

১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের উদ্দেশ্য
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরেই ব্রিটিশ ভারতবাসীকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা নেয় । ব্রিটিশের এই পরিকল্পনারই বাস্তবরূপ হল এই আইন । এই আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতবাসীকে নিরস্ত্র করে নির্বিঘ্নে আরও বেশিমাত্রায় শােষণ করতে চেয়েছিল । আইনটির উদ্দেশ্য ছিল —
- ভবিষ্যতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মতাে কোনাে সশস্ত্র বিদ্রোহ যেন আর দেখা না দেয় ।
- এর দ্বারা ভারতীয় ও ইংরেজের মধ্যে আইনগত সুবিধাভােগের ফারাক যেন সুস্পষ্ট হয় ।
১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
এই আইনের বিরুদ্ধে শিক্ষিত ভারতবাসী রুখে দাঁড়ায় । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে শুরু করেন । সুরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ভারতসভা অস্ত্র আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয় । কৃষ্ণমােহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে কলকাতার টাউন হলে এক প্রতিবাদ সভার আয়ােজন করা হয় ( ১৮৭৮ খ্রি. ১৬ এপ্রিল ) ।
মন্তব্য
লর্ড লিটন প্রবর্তিত অস্ত্র আইন ভারতবাসীর রাজনৈতিক চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়েছিল । এই আইন ব্রিটিশ ও ভারতীয়দের মধ্যে কতটা ফারাক তা স্পষ্টরূপে ভারতবাসীকে উপলদ্ধি করায় । আসলে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষা এবং ভারতে ব্রিটিশদের জীবন নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার লক্ষ্যেই লিটন এই আইন প্রয়ােগ করেন । রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ এই কারণে মন্তব্য করেছিলেন — অস্ত্র আইন আমাদের ওপর জাতিগত অধীনতার ছাপ মেরে দিয়েছে ।