জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহিত্যের ভূমিকা

Contents

জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহিত্যের ভূমিকা

সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ , আর সংবাদপত্র হল জনমত গঠনের অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম । ব্রিটিশ শাসনকালে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্য ও সংবাদপত্রগুলি ব্রিটিশবিরােধী সমালােচকের ভূমিকা পালন করে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছিল । সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা , যথা — কাব্য , নাটক , উপন্যাস , গল্প , প্রবন্ধ সবকিছুতেই ব্রিটিশের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতীয় জাগরণের লক্ষ্যে দেশাত্মবােধের পরিচয় মেলে । বিভিন্ন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলিতে সরকারি নীতি , ব্যর্থতা ও ব্রিটিশের শােষণমূলক নীতির উল্লেখ করে জাতীয় জাগরণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় । তাই ঐতিহাসিক এ. আর. দেশাই  বলেছেন — “ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের গঠন ও বিকাশে সংবাদপত্র ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।

y6jeq06h
সাহিত্যের ভূমিকা

জাতীয়তাবাদের বিকাশে কাব্য সাহিত্য

কাব্য সাহিত্যে স্বদেশ ভাবনা দেশবাসীকে দেশাত্মবােধে উদবুদ্ধ করে । কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ কর্মদেবী ’ , বিহারীলাল চক্রবর্তী রচিত ‘ বঙ্গসুন্দরী ‘ , হেমচন্দ্র রচিত ‘ ভারত বিলাপ ’ , ‘ ভারত সঙ্গীত ’ , নবীনচন্দ্র সেন রচিত ‘ পলাশীর যুদ্ধ ‘ ইত্যাদি কাব্য দেশাত্মবােধের বিকাশে গৌরবজনক ভূমিকা নেয় ।

জাতীয়তাবাদের বিকাশে নাট্য সাহিত্য

জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশ প্রীতির বিকাশে নাট্য সাহিত্যও স্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল । দীনবন্ধু মিত্রের ‘ নীলদর্পণ ’ , গিরিশচন্দ্র ঘােষের ‘ সিরাজউদদৌলা ‘ , ‘ ছত্রপতি শিবাজী ’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ মেবার পতন ‘ , ‘ শাহজাহান ’ , ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যা বিনােদের ‘ আলমগীর ’ , রবীন্দ্রনাথেররাজা ‘ ইত্যাদি নাটক জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্য করে ।

জাতীয়তাবাদের বিকাশে উপন্যাস ও প্রবন্ধ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ আনন্দমঠ ‘ , রবীন্দ্রনাথেরগােরা ’ , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ পথের দাবী ’ , স্বামী বিবেকানন্দেরবর্তমান ভারত ’ ইত্যাদি উপন্যাস , প্রবন্ধ , রচনাবলি গুলি জাতীয়তাবােধের বােধন ঘটায় ।

জাতীয়তাবাদের বিকাশে আঞ্চলিক সাহিত্য

অসমিয়া কবি ভােলানাথ দাস , ওড়িয়া সাহিত্যিক কবি লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া , গুজরাতি পণ্ডিত নর্মদাশঙ্কর লালশঙ্কর , মারাঠি সাহিত্যিক বিনায়ক করান্ডিকার , তামিল নাট্যকার বেদনায়কম্ পিল্লাই , তেলুগু সাহিত্যিক বীরসালিঙ্গম পানতুলু প্রমুখ তাঁদের সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটান ।

নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন

সংবাদপত্রের মতােই সমকালীন নাট্যসাহিত্যও জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশে সাহায্য করায় বড়োলাট নর্থব্রুক নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন পাশের মাধ্যমে নাটক প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ( ১৮৭৬ খ্রি. ১৪ মার্চ ) । এই আইনে বলা হয় —

  • নাটক প্রদর্শিত হওয়ার আগে নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে সেই নাটকের পাণ্ডুলিপি জমা দিতে হবে ।
  • পুলিশ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তবেই সেই নাটক মঞ্চস্থ হবে ।
  • জাতীয়তাবােধের বিকাশে সাহায্য করে এমন নাটক মঞ্চস্থ করা চলবে না ।

উপসংহার

ব্রিটিশের নির্লজ্জ ঔপনিবেশিক শােষণ ও শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে দেশবাসী ব্রিটিশ বিরােধী হয়ে ওঠে । দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্য , সংবাদপত্র গুলি এই ব্রিটিশ বিরােধী মনােভাবকে আরও তীব্র করে তােলে । তাই বড়োলাট লর্ড ডাফরিন বলেছিলেন “ ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি পাঠ করলে মনে হয় যে ইংরেজরা যেন মানব জাতির শত্রু — বিশেষ করে ভারতীয়দের । ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!