ইতিহাস

প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠা ও লক্ষ্য / কার্যাবলী

Contents

প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠা ও লক্ষ্য / কার্যাবলী

উনিশ শতকে মহারাষ্ট্রে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রার্থনা সমাজ এক প্রশংসনীয় অবদান রেখে গেছে । ধর্ম সংস্কার অপেক্ষা সমাজ সংস্কারের প্রতিই প্রার্থনা সমাজ বেশি নিয়ােজিত ছিল । নামদেব , তুকারাম , রামদাস প্রমুখ মহারাষ্ট্রীয় হিন্দু ধর্ম গুরুদের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রার্থনা সমাজ গড়ে উঠেছিল । প্রার্থনা সমাজের অন্যতম প্রাণপুরুষ মহাদেব গােবিন্দ রাণাডে বলতেন — “ আমরা আমাদের অতীত এবং আমাদের সমাজের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন বা রুদ্ধ করতে চাই না ” ( We do not want to break with the past and cease all connections with our society ) ।

Atmaram Pandurang
আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ

প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠা ও লক্ষ্য

ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের পৃষ্ঠপােষকতায় আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তবে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক রামকৃষ্ণ গােপাল ভাণ্ডারকর ও বােম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতি মহাদেব গােবিন্দ রাণাডে ছিলেন , এর দুই প্রাণপুরুষ । প্রার্থনা সমাজের লক্ষ্য ছিল — সমাজ থেকে জাতিভেদ প্রথা , পর্দা প্রথা , অস্পৃশ্যতা , বাল্যবিবাহ প্রভৃতি কুসংস্কার দূর করা ।

প্রার্থনা সমাজের কার্যাবলী

সমাজ সংস্কার :

প্রার্থনা সমাজের অনুগামীরা পৌত্তলিকতা বিরােধী ও একেশ্বরবাদের সমর্থক হলেও কখনােই ব্রাহ্ম সমাজের মতাে হিন্দু ধর্ম বা হিন্দু সমাজ বিরােধী ছিলেন না । এ ছাড়াও প্রার্থনা সমাজের সদস্যরা বিধবা বিবাহ , অসবর্ণ বিবাহ , নারী শিক্ষার বিস্তার , পঙক্তি ভােজনে উৎসাহ , দলিত সম্প্রদায়ের কল্যাণ সাধন ইত্যাদি কাজে নিজেদেরকে নিয়ােজিত করেছিল । রাণাডের উদ্যোগে বিধবা সমিতি ( ১৮৬১ খ্রি. ) ও সারদা সদন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রার্থনা সমাজের উদ্যোগে অনেকগুলি শিশু সদন , অনাথ আশ্রম , বিধবা আশ্রম ও চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ।

শিক্ষা বিস্তার :

পুনা শহরে রাণাডে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ ( ১৮৮৪ খ্রি. ) । শিক্ষা সমাজের উদ্যোগে কোনাে প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই পুনায় তৈরি হয় ফারগুসন কলেজ ও সাংলিতে উইলিংডন কলেজ এবং অনেকগুলি ছােটোখাটো স্কুল । শীঘ্রই দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ সমগ্র মহারাষ্ট্র , মাদ্রাজ ও অন্ধ্রের তেলুগু ভাষা ভাষী অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।

সার্বজনিক সভা গঠন : 

ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে রাণাডে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে পুনায় সার্বজনিক সভা গঠন করেন । প্রসঙ্গত , ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পিছনেও তাঁর প্রেরণা কাজ করেছিল ।

মূল্যায়ন

প্রার্থনা সমাজের অনুগামীরা নিজেদেরকে হিন্দু ধর্মের থেকে আলাদা কোনাে ধর্ম মতের সমর্থক বলে দাবি করতেন না । এর সদস্যরা হিন্দু ধর্মের মধ্যে থেকেই , হিন্দু ধর্মের অংশরূপেই ধর্ম , সমাজ সংস্কার আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । এইভাবে বাস্তব ও গঠনাত্মক কর্ম প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে প্রার্থনা সমাজ উনিশ শতকের মহারাষ্ট্রে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছে । রাণাডে তাঁর ‘ Religions and Social reforms ‘ গ্রন্থে লিখেছেন — ঐতিহ্য আর বাস্তবকে অস্বীকার করে যুক্তির আশ্রয়ে সংস্কার মূলক কাজ অর্থহীন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!