ইতিহাস

ভারতীয় নবজাগরণের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের অবদান

Contents

ভারতীয় নবজাগরণের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের অবদান

কলকাতার দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ির পুরােহিত গদাধর চট্টোপাধ্যায়ই পরবর্তী জীবনে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব নামে পরিচিতি লাভ করেন । সহজ – সরল জীবন , অসীম ঈশ্বর বিশ্বাস ও কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ ছিল তাঁর জীবনাদর্শ । তিনি যেভাবে সংস্কার মুক্ত মন নিয়ে ধর্ম , সমাজ , সাহিত্য , সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বিশ্লেষণ করেছেন তা পরবর্তী প্রজন্মকে নবজাগরণে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল । সুবিখ্যাত ফরাসি পণ্ডিত ড. সিলভেন লেভি বলেছেন — “ রামকৃষ্ণের হৃদয় ও মন যেমন ছিল সব দেশের জন্য , তেমনি তাঁর নামও ছিল মানবজাতির কাছে এক সাধারণ সম্পদ ” ( As Ramakrishna ‘s heart and mind were for all countries , his name too is a common property of mankind ) ।

maxresdefault 1
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব

মানবাদর্শ প্রচার

তথাকথিত ডিগ্রিধারী না হয়েও প্রায় নিরক্ষর এই মহামানবটি যেভাবে অত্যন্ত সহজ – সরল ভাষায় মানব সেবার আদর্শ বর্ণনা করে গেছেন তাতে রামকৃষ্ণকে অবশ্যই একজন মানবতার দেবদূত বলা চলে । আমাদের সনাতন প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র গুলির মূল নির্যাসটুকু তিনি যেভাবে তাঁর ভক্তদের মধ্যে বিশেষত বিবেকানন্দের মনে রােপণ করেছিলেন , তারই ফলশ্রুতিরূপে নবজাগরণের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল ।

সর্বধর্মসমন্বয়ের শিক্ষা দান

রামকৃষ্ণ বলেছেন , যত্র জীব তত্র শিব । অর্থাৎ মানব সেবাই ঈশ্বর সেবার নামান্তর । সেইসঙ্গে যত মত তত পথ এই উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন সমস্ত ধর্মের মূল কথা এক , আর তা হল ঈশ্বরের অনুসন্ধান । এইভাবে ভারতবাসীকে তিনি ধর্ম বিরােধের বদলে ধর্মের সমন্বয় সাধনের শিক্ষা দেন ।

নারী মুক্তির আদর্শ প্রচার

ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য নারী মুক্তির আদর্শকে রামকৃষ্ণ পূর্ণতার পথে এগিয়ে দেন । তাঁর কাছে নারী হল সাক্ষাৎ জগন্মাতার প্রতিমূর্তি । কেবল নারীর মহিমা ঘােষণাই নয় , নারী জাতির দুর্দশা মােচন ও সে কাজে নারীর নেতৃত্বকে তিনি স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ।

ধর্মের সংকীর্ণতা দূরীকরণ

তাঁর প্রচারের ফলে জাতপাতের বেড়াও ভেঙে যায় ; আচার – অনুষ্ঠান সর্বস্ব হিন্দু ধর্ম সহজ – সরল , উদার , প্রাণবন্ত ও সর্বজনীন হয়ে ওঠে । ভক্তি ও আত্মনিবেদনই ছিল তাঁর কাছে ঈশ্বর সাধনার প্রকৃত পথ । শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব ত্যাগ ও বৈরাগ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিলেও ধর্ম পালনের জন্য সংসার ত্যাগ করতে বলেননি । হাঁস যেমন জলে ভাসলেও তার পালক ভেজে না , তেমনভাবে গৃহী মানবকে সংসারে থেকে ধর্ম পালন করার উপদেশ দিয়েছেন তিনি । ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইহলােক ত্যাগ করেন ।

মূল্যায়ন

রামকৃষ্ণ স্বয়ং কোনাে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেননি । কিন্তু তাঁর বাণী ও আদর্শ গুলি সংস্কার আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছিল । উনিশ শতকের বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব । আজকের যুগেও শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব কতটা প্রাসঙ্গিক , সে প্রসঙ্গে তাঁর প্রিয়তম শিষ্য নরেন বলেছিলেন — “ আমি নিশ্চয় করিয়া বলিতেছি এই নামে ( শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব ) সকলকে মাতিতে হইবে । ” ঐতিহাসিক টয়েনবির  মতে — “ রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবন কাহিনি হল ধর্মীয় অভ্যাসের কাহিনি ” ( The story of Ramakrishna Paramahansa ‘s life is a story of religion in practice ) ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!