ইতিহাস

ভারতের সংস্কার আন্দোলনে আর্য সমাজের অবদান

Contents

ভারতের সংস্কার আন্দোলনে আর্য সমাজের অবদান

হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ( ১৮২৪-৮৩ খ্রি. ) -র নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত পাঞ্জাবের আর্য সমাজ ( ১৮৭৫ খ্রি. ১০ এপ্রিল ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল । আর্য সমাজের ধর্মীয় প্রচারের জোরেই হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে ।

thumb11
 স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী

আর্য সমাজের আদর্শ

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে লাহােরে আর্য সমাজের গঠনতন্ত্র ও আদর্শ রচিত হয় । একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী দয়ানন্দ ছিলেন ধর্মীয় গোঁড়ামি , কুসংস্কার , অস্পৃশ্যতা , পৌত্তলিকতাবাদ প্রভৃতির ঘােরতর বিরােধী । তিনি মনে করতেন পৃথিবীর সকল ধর্ম , বৈজ্ঞানিক সত্য ও তত্ত্বের সারমর্ম বেদের মধ্যেই নিহিত আছে । কিন্তু সমাজের কিছু স্বার্থপর ব্যক্তি বেদের ভুল ব্যাখ্যা করে সনাতন হিন্দুধর্মকে কলুষিত করতে চাইছে । ইংরেজি ভাষায় অজ্ঞ , সংস্কৃতে পণ্ডিত দয়ানন্দ ‘ বেদভাষ্য ’ ও ‘ সত্যার্থ প্রকাশ ’ নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেন এবং গােরক্ষিণী সভা প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮৮২ খ্রি. ) ।

আর্য সমাজের কর্মসূচি

শুদ্ধি আন্দোলন :

আর্য সমাজের অন্যতম কর্মসূচি ছিল শুদ্ধি আন্দোলন । শুদ্ধির প্রধান লক্ষ্য ছিল অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হিন্দুদের পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে এনে এবং বিধর্মী প্রভাব রােধ করে ভারতকে এক জাতি , এক ধর্ম ও এক সমাজ রূপে প্রতিষ্ঠা করা ।

নারীদের উন্নতি :

স্বামী দয়ানন্দ সমাজে নারীদের সকল প্রকার সুযােগ সুবিধা , স্বাধীনতা দেওয়া এবং স্ত্রী শিক্ষার সার্বিক উন্নতি ঘটানাের কর্মসূচি গ্রহণ করেন ।

হিন্দু ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা :

দয়ানন্দ বেদের ওপর নির্ভর করে সকল চিন্তাধারা ও আদর্শ নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন , যাতে বৈদিক যুগের গৌরব এবং পবিত্রতা হিন্দুধর্মে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় । তাই তিনি বলতেন — বৈদিক শাস্ত্রে ফিরে যাও ( ‘ Go back to the Vedas ‘ ) ।

সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব :

সংস্কৃত ভাষার ওপর আরও গুরুত্ব আরােপ করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করাও ছিল আর্য সমাজের একাধিক কর্মসূচির একটি ।

আর্য সমাজের প্রসার

দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুর পর আর্য সমাজের পরিচালনার ভার নেন লালা হংসরাজ , পণ্ডিত গুরু দত্ত , লালা লাজপত রায় , স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ ( লালা মুন‌্শী রাম ) প্রমুখ । লাহােরে লালা হংসরাজ প্রতিষ্ঠা করেন দয়ানন্দ অ্যাংলাে বৈদিক কলেজ ( ১৮৮৬ খ্রি. ) , আর হরিদ্বারে স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ প্রতিষ্ঠা করেন গুরুকুল আশ্রম ( ১৯০২ খ্রি. ) । অল্প সময়ের মধ্যেই আর্য সমাজ পাঞ্জাব , গুজরাত , রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তার সংস্কার আন্দোলনকে গণমুখী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল ।

আর্য সমাজের অবদান

আর্য সমাজের সংস্কার আন্দোলনের ফলে

  • হিন্দুদের হীনম্মন্যতা দূর হয় ;
  • বৈদিক হিন্দুধর্ম তার হৃতগৌরব ফিরে পায় ;
  • হিন্দু জনসাধারণ নিজেদের গৌরবময় ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে ;
  • হিন্দুসমাজে জাতপাতের বিভিন্নতা দূর হয়ে ঐক্যবােধ গড়ে ওঠে ;
  • প্রাচীন রীতিনীতিকে অমান্য না করে পশ্চিমি ধাঁচে আধুনিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে ।

উপসংহার

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজ পাশ্চাত্য শিক্ষাকে দূরে সরিয়ে শুধুমাত্র বেদের ওপর নির্ভর করে হিন্দু সমাজ ও ধর্মের যে উত্থান ঘটিয়েছিলেন , তা সত্যই অসামান্য । শেষের দিকে আর্য সমাজের এই আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ ধারণ করেছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!