ইতিহাস

সংস্কার আন্দোলনে জ্যোতিবা ফুলের অবদান

Contents

সংস্কার আন্দোলনে জ্যোতিবা ফুলের অবদান

উনিশ শতকের মহারাষ্ট্রে সমাজসংস্কার আন্দোলনের ইতিহাসে জ্যোতিবা গােবিন্দ ফুলে ( ১৮২৭ – ১৮৯০ খ্রি. ) এক শ্রদ্ধেয় নাম । শূদ্রসহ নিম্ন শ্রেণির মানুষের সার্বিক উন্নয়নে জ্যোতিবা ফুলে ছিলেন বদ্ধ পরিকর । জ্যোতিবা-র জীবনীকার অধ্যাপক পাওয়ারের  মতে — “ ভারতে সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত বিপ্লবী ” ( He was a true revolutionist of India in social reforms and education ) ।

wreath laying on the death anniversary of mahatma jyotiba phule 303993
জ্যোতিবা গােবিন্দ ফুলে

যুক্তিবাদী সংস্কার

প্রথম জীবনে জ্যোতিবা ফুলে খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরক্ত ও হিন্দুধর্ম – বিরােধী ছিলেন । তিনি চেয়েছিলেন যুক্তিবাদ ও সাম্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাবলির সমাধান ও ধর্মীয় – সামাজিক কুসংস্কার গুলির অবসান ঘটুক । তিনি আদর্শের সঙ্গে বাস্তবের মিলন ঘটাতে চেয়েছিলেন ।

সমাজ সংস্কার

মহারাষ্ট্রের জনজীবনে ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া আধিপত্য , জাতিভেদ প্রথা এবং শূদ্র ও নারীদের সীমাহীন দুর্দশার বিরুদ্ধে তিনি সস্ত্রীক জেহাদ ঘােষণা করেন । শিশুহত্যা নিবারণের লক্ষ্যে তিনি গড়ে তােলেন ‘ হােম ফর প্রিভেনশান অব ইনফ্যানটিসাইড ’ , যেখানে সমাজের তথাকথিত অবৈধ ছেলে মেয়েরা ( পিতৃমাতৃ পরিচয়হীন ) আশ্রয় পেত । দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্যোতিবা ফুলে সত্যশােধক সমাজ ( ১৮৭৩ খ্রি. ) প্রতিষ্ঠা করেন ।

ব্রাহ্মণ্য বিরােধিতা

জ্যোতিবা ফুলে মনে করতেন — সমাজে দরিদ্র , অস্পৃশ্য ও নীচু জাতের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ব্রাহ্মণগণ । ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর লেখা গুলামগিরি গ্রন্থে তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদকে  চ্যালেঞ্জ জানান । পাশাপাশি কুনবি , মালি , মাঙ , মাহার প্রভৃতি নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য – বিরােধী প্রচার শুরুর মধ্য দিয়ে অব্রাহ্মণ আন্দোলনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন ।

নারী কল্যাণ

তিনি বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহের বিরুদ্ধে সরব হন এবং শিশু কন্যা হত্যা নিবারণের প্রচেষ্টা চালান । নিম্নবর্ণের নারীদের জন্য মহাত্মা ফুলে যেমন একাধিক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন , তেমনি বিদ্যাসাগরের মতাে বিধবা বিবাহের সমর্থনে মহারাষ্ট্রে প্রবল আন্দোলন গড়ে তােলেন ।

শিক্ষা সংস্কার

জ্যোতিবা মনে করতেন শূদ্রসহ বিভিন্ন নিম্নবর্ণের মানুষকে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার আলােয় নিয়ে আসা প্রয়ােজন । তাই তিনি ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী বাঈ পুনাতে পশ্চিম ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮৫১ খ্রি. ) । শিক্ষা সংস্কারক জ্যোতিবার শিক্ষামূলক কাজ গুলিতে সাহায্য করেন সদাশিব , বল্লাল পরাঞ্জপে প্রমুখ মারাঠা সংস্কারকগণ ।

মূল্যায়ন

যুক্তিবাদ ও আধুনিক মনের অধিকারী জ্যোতিবা ফুলে মহারাষ্ট্রীয় নিম্নবর্ণের মানুষদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আজীবন কাজ করে গেছেন । এমনকি ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রের কাঠামাে থেকে নিম্নবর্ণের মানুষদের রক্ষার জন্য তিনি ব্রিটিশ শাসনের সাহায্য নিতেও দ্বিধা করেননি । এম. আর. লেভারলের  মতে — “ সাম্য ও যুক্তিবাদিতার ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ কাঠামাে তৈরির লক্ষ্যে ফুলে কাজ করে গেছেন ” ( Phule worked for a new social structure built on quality and rationality ) ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!