সমাজ সংস্কার ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শ্রী নারায়ণ গুরুর অবদান
Contents
সমাজ সংস্কার ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শ্রী নারায়ণ গুরুর অবদান
উনিশ শতকের শেষার্ধে কেরালায় যে ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন পরিচালিত হয় তার নেতৃত্ব দেন বিশিষ্ট সাধক , চিন্তাবিদ ও সংস্কারক শ্রী নারায়ণ গুরু ( ১৮৫৬ – ১৯২৮ খ্রি. ) । ত্রিবান্দ্রমের কাছে ইজহাভা নামক এক অস্পৃশ্য জাতির সন্তান নারায়ণ গুরুর মূলমন্ত্র ছিল এক জাতি , এক ধর্ম এবং এক ঈশ্বর ( ‘ One religion , one caste and one God for mankind ‘ ) ।

শ্রী নারায়ণ গুরু ভাবাদর্শ
নারায়ণ গুরু প্রচারিত ভাবাদর্শের মূল তিনটি বিষয় ছিল —
- নিজেকে শিক্ষিত করে কুসংস্কার মুক্ত হওয়া ,
- শক্তি অর্জনের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়া এবং
- শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানাে । তিনি তাঁর আদর্শ প্রচারের লক্ষ্যে শ্রীনারায়ণ ধর্ম পরিপালন যােগম নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন ( ১৯০৩ খ্রি. ১৫ মে ) ।
অস্পৃশ্যতার বিরােধিতা
‘ মানুষের একটিই জাতি , একটিই ধর্ম ও একই ঈশ্বর ’ — শ্রীনারায়ণ গুরুর এই ছিল মূল মন্ত্র । তাই অস্পৃশ্যতার মূলে কুঠারাঘাত করতে তিনি মন্দিরে অনুন্নত শ্রেণির প্রবেশ অবাধ করার দাবিতে ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জনমত গঠনে সচেষ্ট হন । এই লক্ষ্যে তিনি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তােলেন ।
ভাইকম সত্যাগ্রহ
কেরালার মােট জনসংখ্যার অর্ধেকই ছিল ইজহাভা সম্প্রদায়ের মানুষ । দক্ষিণ ভারতের ভাইকমে একটি হিন্দু মন্দিরের রাস্তা এই নিম্নবর্ণের মানুষদের ব্যবহারের জন্য নিষিদ্ধ ছিল । নিম্নবর্ণের মানুষরা যাতে সেই রাস্তা ব্যবহার করতে পারে তা নিয়ে নারায়ণ গুরুই প্রথম আন্দোলন শুরু করেন যা ‘ ভাইকম সত্যাগ্রহ ‘ নামে পরিচিত ( ১৯২৪ খ্রি. ) । এর ফলে মন্দিরে পুজোর জন্য যেমন ‘ ইজহাভা পুরােহিত ’ সম্প্রদায় গড়ে তােলা হয় , তেমনি রন্ধনশালা গুলিতে তথাকথিত অস্পৃশ্যদের রান্নার জন্য নিয়ােগ করা হয় । এতে নিম্নশ্রেণির মানুষেরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ।
শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন
নারায়ণ গুরু চেয়েছিলেন শিক্ষার মাধ্যমে দলিত অচ্যুত জাতিদের সাংস্কৃতিক ও নৈতিক মানের উন্নতি ঘটুক । তাই তিনি শিক্ষার সুষ্ঠু প্রসারের লক্ষ্যে একটি অর্থভাণ্ডার খােলেন ও প্রতিটি ইজহাভা পরিবারকে বিবাহসহ যে – কোনাে অনুষ্ঠানের সময় ওই অর্থভাণ্ডারে অর্থদানের নির্দেশ দেন ।
মূল্যায়ন
নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে সংস্কার আন্দোলন প্রথমদিকে ইজহাভাদের উন্নতির লক্ষ্যে পরিচালিত হলেও পরে তা জাতিভেদ প্রথা বিরােধী হয়ে ওঠে । এইভাবে কেরালায় অনুন্নত শ্রেণির সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রীনারায়ণ গুরু হিন্দু সংস্কার আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যােগ করেন ।