ইতিহাস

অকালি আন্দোলন বলতে কী বোঝো

Contents

অকালি আন্দোলন বলতে কী বোঝো

উনিশ শতকে সমগ্র ভারত জুড়ে যে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল তা পাঞ্জাবেও আছড়ে পড়ে । সমগ্র পাঞ্জাব জুড়ে শিখদের নেতৃত্বে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় । পাঞ্জাবের এই সংস্কার আন্দোলন অকালি আন্দোলন নামে পরিচিত । এই সংস্কার আন্দোলন মূলত দুটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল — প্রথমটি  নিরঙ্কারী আন্দোলন এবং দ্বিতীয়টি  নামধারী আন্দোলন । দয়াল সিং বলেন — মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে যােগসূত্র রক্ষার জন্য পুরােহিতের দরকার নেই ।

unnamed 9
অকালি আন্দোলন

নিরঙ্কারী আন্দোলন

বাবা দয়াল সিং ( ১৭৮৩ – ১৮৫৫ খ্রি. ) ছিলেন পাঞ্জাবের নিরঙ্কারী ( আকারহীন ) আন্দোলনের প্রবর্তক । তিনি শিখ ধর্মকে কলুষতা মুক্ত করতে চেয়েছিলেন । তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বাবা দরবারা সিং ( ১৮১৪ – ১৮৭০ খ্রি. ) নিরঙ্কারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।

নিরঙ্কারী আন্দোলনের গুরুত্ব

নিরঙ্কারী আন্দোলন বলতে বােঝায় আকারহীন ঈশ্বরের উপাসনা । নিরঙ্কারী আন্দোলনের কয়েকটি গুরুত্ব ছিল —

  • গুরু গােবিন্দ সিং প্রবর্তিত খালসার সামরিক আদর্শ নিরঙ্কারীরা ত্যাগ করেছিলেন ।
  • নিরঙ্কারীদের ধর্মীয় উপাসনা বা পূজাকেন্দ্রগুলি পরিচালনা করতেন তাঁদের নিজেদের ধর্মের পুরােহিতরাই ।
  • ব্রিটিশ ও নিরঙ্কারী অনুগামীদের মধ্যে কোনাে সংঘর্ষ না বাধায় আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার কোনাে বিধিনিষেধ আরােপ করেনি ।

নামধারী আন্দোলন

অকালি আন্দোলনের অংশ রূপে শুরু হওয়া নামধারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বাবা বালক সিং । কিন্তু নামধারী আন্দোলন ব্যাপকতা পায় বাবা বালক সিংয়ের প্রধান শিষ্য বাবা রাম সিং ( ১৮১৬ – ৮৫ খ্রি. ) – এর নেতৃত্বে ।

নামধারী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

মুক্তির জন্য নাম করাকে আদর্শ বলে মনে করত নামধারীরা । নামের ওপর অধিক গুরুত্ব আরােপ করা হয় বলেই এই আন্দোলনের নাম নামধারী আন্দোলন । নামধারী আন্দোলনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল —

  • নামধারী আন্দোলনের অনুগামীরা ‘ গ্রন্থসাহিব ’ কে প্রকৃত সত্য বলে মানতেন ।
  • জাতিগত বৈষম্যের বিরােধিতা করেছিল এই আন্দোলন ।
  • নারী – পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ছিল এই আন্দোলন ।
  • অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবাবিবাহের প্রতি সমর্থন ও বাল্যবিবাহের বিরােধিতা করেছিল নামধারীরা ।

অকালি আন্দোলনের গুরুত্ব

অকালি আন্দোলনের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি গুরুত্ব ছিল —

আদর্শ বিচ্যুতি :

অকালি আন্দোলনের অংশ রূপে পরিচালিত নিরঙ্কারীরা নামধারী আন্দোলনের মূল আদর্শ থেকে অনেকটাই সরে এসেছিল ।

গুরুদ্বার গুলির সমৃদ্ধি : 

বহু বিত্তবান শিখ অর্থ ও জমি দান করে গুরুদ্বার গুলিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল ।

সমান্তরাল সরকার গঠন :

পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় নামধারীরা সংগঠন গড়ে তুলে এক সমান্তরাল সরকার গঠন করে , যা ব্রিটিশকে উদবিগ্ন করে তােলে ।

গুরুদ্বার আইন প্রবর্তন : 

অকালি আন্দোলনের তীব্রতায় অবশেষে , ব্রিটিশ এক নতুন শিখ গুরুদ্বার আইন প্রবর্তনে ( ১৯২১ খ্রি. ) বাধ্য হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!