রাজা রামমোহন রায়ের শিক্ষা সংস্কার
Contents
রাজা রামমোহন রায়ের শিক্ষা সংস্কার
রামমােহন বিশ্বাস করতেন যে জাতিকে অজ্ঞতা ও জড়তা থেকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদ । তাই তিনি প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ ও শাশ্বত চিন্তাধারার সঙ্গে পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ ভাবধারার সমন্বয় ঘটিয়ে নবভারত গড়ে তােলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ।

রাজা রামমোহন রায়ের শিক্ষা বিষয়ক চিন্তাধারা
রামমােহনের শিক্ষা চিন্তায় ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবের সঙ্গে আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের মিলন ঘটানাের প্রয়াস ছিল । তাই তিনি সারা জীবন ধরেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করে গেছেন । রামমােহনের শিক্ষা বিস্তারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে বাস্তব জগতের উপযুক্তরূপে গড়ে তােলা ও তাদেরকে সমাজ কল্যাণে নিয়ােগ করে দেশ ও জাতিকে প্রগতি ও উন্নতির পথে চালিত করা ।
পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থক
প্রথম জীবনে রামমােহন কোম্পানির দেওয়ান হিসেবে কাজ করার সময়ে ( ১৮০৫ – ১৮১৪ খ্রি. ) কোম্পানির আমলা জন ডিগবির প্রভাবে পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হন । রামমােহন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে এক পত্র মারফত ( ১৮২৩ খ্রি. ) ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার জন্য সরকারি অর্থ ব্যয়ের অনুরােধ জানান । এর পাশাপাশি তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের গণিত , রসায়ন , পদার্থবিদ্যা ও প্রাকৃতিকবিদ্যা পড়ানাে হােক । তাই তিনি ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ডাফকে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন । ক্যালকাটা বুক সােসাইটির তিনি একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন ।
রাজা রামমোহন রায়ের স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠা
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে তিনি স্কুল , কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও যত্নবান হন । তিনি নিজের প্রচেষ্টায় অ্যাংলাে হিন্দু স্কুল ( ১৮১৭ খ্রি. ) প্রতিষ্ঠা করেন । বেদান্ত শিক্ষার লক্ষ্যে কলকাতায় গড়ে তােলেন বেদান্ত কলেজ ( ১৮২৬ খ্রি. ) । তিনি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় ( ১৮১৭ খ্রি. ) সাহায্য করেন ।
বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রাণ প্রতিষ্ঠা
শ্রীরামপুর মিশনারিগণ বাংলা গদ্যের যে কাঠামাে নির্মাণ করে গিয়েছিলেন রামমােহন তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলা চলে । রামমােহন রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি ছিল বেদান্ত গ্রন্থ ( ১৮১৫ খ্রি. ) , বেদান্ত সার ( ১৮১৫ খ্রি. ) , ভট্টাচার্য্যের সহিত বিচার ( ১৮১৭ খ্রি. ) , মাণ্ডক্যোপনিষৎ ( ১৮১৭ খ্রি. ) , মুণ্ডকোপনিষৎ ( ১৮১৯ খ্রি. ) , সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবৰ্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ ( ১৮১৯ খ্রি. ) , সুব্ৰহ্মণ্য শাস্ত্রীর সহিত বিচার ( ১৮২০ খ্রি. ) , ব্রাহ্মণ সেবধিঃ ( ১৮২১ খ্রি . ) , বজ্ৰসূচি ( ১৮২৭ খ্রি. ) ।
বিবিধ সংবাদপত্র প্রকাশনা
রামমােহন সংবাদপত্রের পরিবেশনের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের দিশারি ছিলেন । তিনি বাংলা , হিন্দি , ইংরাজি ও ফারসি ভাষায় বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশ করেন । বাংলা ভাষায় সম্বাদ কৌমুদী ( ১৮২১ খ্রি. ) এবং ফারসিতে প্রকাশিত মিরাৎ – উল – আখবর ( ১৮২২ খ্রি. ) ইত্যাদি ছিল তাঁর প্রকাশিত সংবাদপত্রের উল্লেখযােগ্য নিদর্শন । ড. বিপান চন্দ্রের মতে — “ রামমােহন ভারতের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও একজন অগ্রদূতের ভূমিকা নিয়েছিলেন ” ( Rammohan Roy was a pioneer of Indian Journalism ) ।
এটা আমার খুব দরকার ছিল, আপনারা এত সুন্দর করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর, অনবদ্য পোষ্ট