দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন/ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট

দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন/ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট

জনমত গঠনের ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী মাধ্যম হল সংবাদপত্র। ব্রিটিশ শাসনকালে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র গুলি ব্রিটিশবিরােধী সমালােচকের ভূমিকা  পালন করেছিল ‌। দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির টুটি টিপে ধরে ভারতবাসীর কণ্ঠরােধ করার‌ জন্য লর্ড লিটন জারি করেন দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন বা ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট ( ১৮৭৮ খ্রি. ১৪ মার্চ ) । ঐতিহাসিক এ. আর. দেশাই  এর মতে — ভারতীয় জাতীয়তাবাদের গঠনে এবং বিকাশে সংবাদপত্র ছিল এক গুরত্বপর্ণ মাধ্যম ( ‘ The press was powerful factor for the building and developing Indian Nationalism ‘ )

images 29
লর্ড লিটন

স্বাধীনতা আন্দোলন পর্বে সংবাদপত্রের ভূমিকা

মহাবিদ্রোহের পর থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রায় ৮৭টি পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয় । হরিশচন্দ্র মুখােপাধ্যায়ের সম্পাদনায় হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকাটি মহাবিদ্রোহ বা নীল বিদ্রোহের সময় তীব্র ব্রিটিশবিরােধী ভূমিকা পালন করে । এ ছাড়াও অন্য যেসব পত্রিকাগুলি ব্রিটিশবিরােধী ভূমিকা পালন করেছিল তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল – ঈশ্বর গুপ্তের সম্পাদনায় সংবাদ প্রভাকর , কেশবচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় ইন্ডিয়ান মিরর , শিশিরকুমার ঘােষ সম্পাদিত অমৃতবাজার পত্রিকা , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত দি বেঙ্গলি , কিশােরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত ইন্ডিয়ান ফিল্ড প্রভৃতি ।

দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইনের ধারা

লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করালে , তার বিভিন্ন ধারার বলা হয় —

1. সংবাদপত্রের সম্পাদক ও মুদ্রাকর এমন কিছু সংবাদ ছাপবেন না যাতে পাঠক সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে ।

2. সংবাদপত্রে এমন কিছু ছাপা যাবে না যে সংবাদগুলি ব্রিটিশ ও ভারতবাসীর মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষকে আরও বাড়িয়ে তুলবে ।

3. সংবাদপত্রের সম্পাদক ও মুদ্রাকর উপরোক্ত দুটি নিয়ম মেনে সংবাদ ছাপবেন — এই লক্ষ্যে জামিন ও অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করতে হবে ।

4. কোনাে দেশীয় সংবাদপত্র এইসব নিয়মগুলি  অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের অর্থএবং প্রয়ােজনে মুদ্রাযন্ত্র সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে ।

দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইনের প্রতিক্রিয়া

সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইনকে ফাঁকি দেবার লক্ষ্যে বাংলা ভাষার অমৃতবাজার পত্রিকাকে রাতারাতি ইংরেজি পত্রিকায় পরিণত করা হয় ( ১৮৭৮ খ্রি. ) । ইংরেজি সংবাদপত্রগুলিকে এই আইনের আওতার বাইরে রেখে শুধুমাত্র দেশীয় ভাষার সংবাদপত্রের ওপর এদেশের ব্রিটিশ সরকার এ আইন কার্যকর করতে চাওয়ায় সমগ্র দেশ ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে । কলকাতার টাউন হলে রেভারেন্ড কৃষ্ণমােহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় । এমনকি ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টেও বিরােধীপক্ষ তীব্র প্রতিবাদের সুরে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x
error: Content is protected !!