শক্তি সংকট কাকে বলে
শক্তি সংকট কাকে বলে
কাঠ , কয়লা , পেট্রোল , ডিজেল , প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি হল শক্তির চিরাচরিত বা প্রচলিত উৎস । প্রকৃতির ভান্ডারে এগুলি সীমিত । অপরপক্ষে , সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে এদের চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে । সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে পৃথিবীর জানা তেল ভান্ডারগুলি আগামী 50 বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে । প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা দিয়ে হয়ত আরও কিছুদিন চলবে । কিন্তু তারপর কী হবে ? তাছাড়া এইসব প্রচলিত উৎস ব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে । পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারও খুব নিরাপদ নয় কারণ এই শক্তি ব্যবহারের ফলে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় দূষণ সৃষ্টি হয় । তাই বিজ্ঞানীরা বিকল্প অচিরাচরিত বা অপ্রচলিত ( non – conventional ) এবং পুনর্নবীকরণ – যােগ্য ( renewable ) শক্তির ব্যবহারের কথা বলছেন । যেমন —

1. সূর্য থেকে বিশাল পরিমাণ শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌছায় । সৌরকোষের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব । সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ থেকে শুরু করে মহাকাশে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহে এই সৌরকোষের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ।
2. উপযুক্ত প্রতিফলকের সাহায্যে সৌরশক্তিকে ফোকাস করে সােলার ( solar ) হিটার , সােলার কুকার , সোলার ড্রায়ার প্রভৃতি তৈরি করা হচ্ছে ।
3. সৌরশক্তির অপ্রত্যক্ষ ব্যবহার হল বায়ুশক্তি ও জলপ্রবাহের শক্তির ব্যবহার । সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় যেখানে সারা বছর বায়ুপ্রবাহ থাকে সেখানে বায়ুশক্তির সাহায্যে বায়ুমিল চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় । আমাদের দেশে রাজস্থান , গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে এই পদ্ধতিতে কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ।
4. পাহাড়ি নদীর জলস্রোতের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় । জোয়ার – ভাটা ও মহাসমুদ্রের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলেছে । এইসব শক্তির উৎসগুলির প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিনিয়ত পুনর্নবীকরণ হচ্ছে । তাই এগুলিকে পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তি বলে ।
বর্তমানে অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনে খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি । উন্নত মানের উপযুক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলে এই অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদন সহজ হবে । তাছাড়া প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি ফুরিয়ে গেলে এই অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না ।