সূর্য সকল শক্তির উৎস
সূর্য সকল শক্তির উৎস

সূর্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি নিউক্লীয় সংযােজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়ামে পরিণত হয় । এর ফলে ভরের হ্রাস হয় এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় । এই শক্তি তাপ ও আলােক শক্তি রূপে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার একাংশ পৃথিবীতে এসে পৌছায় । প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 18 X 1015 জুল সৌরশক্তি পৃথিবীতে এসে পৌছায় । দেখা যায় যে পৃথিবীতে প্রায় সমস্ত প্রকার শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ উৎস হল এই সৌরশক্তি । যেমন —
1. সূর্যালােকের সাহায্যে গাছ সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদন করে নিজের দেহ পুষ্ট করে । সমস্ত প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে এই উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল । সুতরাং উদ্ভিদ বা প্রাণীজগতের পুষ্টি বা শক্তির মূল উৎস হল সূর্য । কাঠ পুড়িয়ে যে তাপশক্তি পাওয়া যায় তার উৎসও হল এই সূর্য ।
2. সুদূর অতীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে গাছপালা ও জীবজন্তু মাটির নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল । হাজার হাজার বছর মাটির নীচে তাপ ও চাপের প্রভাবে এগুলি কালক্রমে কয়লা ও খনিজ তেলে পরিণত হয়েছে । সুতরাং কয়লা , ডিজেল , পেট্রোল প্রভৃতি জ্বালানির মূল উৎস হল সূর্য ।
3. ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে সৌরশক্তি সমানভাবে আসে না । ফলে উষ্ণতার তারতম্য হয় এবং বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । এই বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নৌকা চালানাে বা উইন্ডমিলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায় ।
4. সৌরশক্তির প্রভাবেই মেঘ ও বৃষ্টি হয় এবং তার ফলে নদী – নালায় জলপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । এই জলপ্রবাহের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে আমরা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করি ।
5. বর্তমানে সৌরচুল্লির মাধ্যমে সূর্যের তাপশক্তিকে সরাসরি রান্নার বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয় । আবার সৌরকোষের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় ।
6. জোয়ার – ভাটা সৃষ্টিতে সূর্যের মহাকর্ষ বলের ভূমিকা আছে । এই জোয়ার – ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে ।
এইসব উদাহরণ থেকে সহজেই বােঝা যায় যে সূর্যই পৃথিবীতে শক্তির প্রধান উৎস ।