ডালটনের পরমাণুবাদ
Contents
ডালটনের পরমাণুবাদ
ভারতীয় ঋষি কণাদ প্রথম বলেন যে প্রত্যেক পদার্থ অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি । তিনি এই কণাগুলির নাম দেন পরমাণু । গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাসও এই পরমাণু তত্ত্বের কথা বলেন । তবে পরমাণু সম্পর্কে প্রথম সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক মতবাদ প্রচার করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডালটন । এটি ডালটনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত ।

ডালটনের পরমাণুবাদ এর বৈশিষ্ট্য
বিজ্ঞানী ডালটনের মতে সব পদার্থ পরমাণু দ্বারা গঠিত এবং এদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
1. প্রত্যেক মৌলিক পদার্থ অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য নিরেট কণা দ্বারা গঠিত । এই ক্ষুদ্রতম কণাগুলি হল পরমাণু ।
2. একই মৌলিক পদার্থের প্রতিটি পরমাণুর ভর ও ধর্ম অভিন্ন ।
3. বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ভর ও ধর্ম বিভিন্ন ।
4. রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থ গঠন করে ।
5. নানা পরীক্ষা – নিরীক্ষার মাধ্যমে বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে যে ডালটনের পরমাণুবাদে কিছু ত্রুটি – বিচ্যুতি রয়েছে । যেমন , ‘ পরমাণু অবিভাজ্য ’ — ডালটনের এই মত ঠিক নয় । বিজ্ঞানী জে. জে. টমসন , রাদারফোর্ড , নিলস্ বাের , স্যাডউইক প্রমুখ বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে দেখান যে পরমাণু বিভাজ্য এবং একে ভেঙে আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তিন ধরনের কণা পাওয়া যায় । এগুলি হল — ইলেকট্রন , প্রােটন এবং নিউট্রন ।
ইলেকট্রন
বিজ্ঞানী জে. জে. টমসন ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন । মৌলের পরমাণুর একটি অন্যতম মূল কণিকা হল ইলেকট্রন । এটি অপেক্ষাকৃত হালকা কণিকা । এর ভর 9.1 x 10−³¹ কেজি । ইলেকট্রন একটি ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণিকা । এর আধানের মান হল 1.6 X 10−19 কুুুলম্ব। এটিই হল তড়িতাধানের ক্ষুদ্রতম মান । অন্য যে কোনাে বস্তুর আধান সর্বদা ইলেকট্রনের আধানের সরল গুণিতক হয় ।
প্রােটন
সব মৌলের পরমাণুর আরেকটি মূল কণিকা হল প্রােটন । প্রােটন অপেক্ষাকৃত ভারী । এর ভর 1.6725 × 10−27 কেজি অর্থাৎ একটি ইলেকট্রনের ভরের প্রায় 1836 গুণ । প্রােটন ধনাত্মক আধানযুক্ত কণিকা । এর আধান ইলেকট্রনের আধানের সমান কিন্তু বিপরীতধর্মী । অতএব প্রােটনের আধান 1.6 × 10−19 কুলম্ব ।
নিউট্রন
বিজ্ঞানী স্যাডউইক নিউট্রন কণা আবিষ্কার করেন । সাধারণ হাইড্রোজেন ছাড়া অন্য সব মৌলের পরমাণুতে নিউট্রন থাকে । নিউট্রন একটি নিস্তড়িৎ কণিকা । এর কোনাে আধান নেই । নিউট্রনের ভর 1.6750 × 10−27 কেজি অর্থাৎ নিউট্রন কণা প্রােটন কণার চেয়ে সামান্য ভারী ।
এই তিনটি কণা ছাড়াও বর্তমানে আরও কয়েকটি মূল কণিকা আবিষ্কৃত হয়েছে ।