তাপ কাকে বলে/তাপের প্রকারভেদ

Contents

তাপ কাকে বলে/তাপের প্রকারভেদ

তাপ এক প্রকার শক্তি কারণ তাপের কাজ করার সামর্থ্য আছে । তাপ গ্রহণে ঠান্ডা বস্তু উত্তপ্ত হয় এবং বর্জনে উত্তপ্ত বস্তু ঠান্ডা হয়

তাপ

তাপের প্রকারভেদ

তাপ প্রধানত তিনপ্রকার । যথা —

  1. বােধগম্য তাপ ,
  2. লীন তাপ এবং
  3. বিকীর্ণ তাপ ।

বােধগম্য তাপ

অবস্থার পরিবর্তন না ঘটিয়ে কেবলমাত্র উন্নতার পরিবর্তনের সময় বস্তু কর্তৃক যে তাপ গৃহীত বা বর্জিত হয় , তাকে বােধগম্য তাপ বলে । বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত এই বােধগম্য তাপ ক্যালােরিমিটারের সাহায্যে পরিমাপ করা যায় ।

লীন তাপ

উষ্ণতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে কেবলমাত্র অবস্থার পরিবর্তনের সময় কোনাে পদার্থ কর্তৃক যে তাপ গৃহীত বা বর্জিত হয় , তাকে ওই পদার্থের ওই অবস্থার পরিবর্তনের লীন তাপ বলে । লীন তাপ ক্যালােরিমিটারের সাহায্যে পরিমাপ করা যায় না ।

বিকীর্ণ তাপ

কোনাে উৎস থেকে মাধ্যম ছাড়া বা মাধ্যম থাকলেও তাকে উত্তপ্ত না করে যে তাপ সঞ্চালিত হয় , তাকে বিকীর্ণ তাপ বলে । সূর্য থেকে যে তাপ পৃথিবীতে আসে তা বিকীর্ণ তাপ ।

তাপের ক্যালরিক মতবাদ

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে , তাপ একপ্রকার অদৃশ্য ভরহীন তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ যা কমবেশি সব বস্তুর মধ্যে থাকে । তাঁরা এর নাম দেন ক্যালরিক । কোনাে বস্তুতে ক্যালােরিক প্রবেশ করলে বস্তুটি গরম হয় । এবং বস্তু থেকে ক্যালোরিক বেরিয়ে গেলে বস্তুটি ঠান্ডা হয় । এই মতবাদকে তাপের ক্যালরিক মতবাদ বলে ।

তাপের গতীয় মতবাদ

এই মতবাদ অনুসারে পদার্থের অণুগুলির গতিশক্তিই হল বস্তুর তাপ শক্তির পরিমাণ । পদার্থের অণুগুলির গতিশক্তি বাড়লে পদার্থটি উত্তপ্ত হয় এবং গতিশক্তি কমলে পদার্থটি ঠান্ডা হয় ।

বস্তুর ওপর তাপ প্রয়ােগের ফল

তাপ প্রয়ােগের ফলে পদার্থের ভৌত ধর্মের এবং কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে রাসায়নিক ধর্মেরও পরিবর্তন ঘটে ।

অবস্থার পরিবর্তন

তাপ প্রয়ােগে কঠিন পদার্থ তরলে এবং তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয় । তাপ বর্জনে বাষ্প তরলে এবং তরল কঠিনে পরিণত হয় । কর্পূর , আয়ােডিন , নিশাদল ( অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড ) , ন্যাপথলিন প্রভৃতি কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়ােগ করলে এরা সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় ।

উষ্ণতার পরিবর্তন

পদার্থের অবস্থান পরিবর্তন না ঘটলে তাপ প্রয়ােগের ফলে বস্তুর উষ্ণতা বাড়ে এবং তাপ নিষ্কাশন করলে উষ্ণতা কমে ।

রাসায়নিক পরিবর্তন

তাপ প্রয়ােগের ফলে অনেক সময় পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে । যেমন কয়লাকে উত্তপ্ত করলে বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

আয়তনের পরিবর্তন

তাপ প্রয়ােগে পদার্থের আয়তন বাড়ে এবং তাপ নিষ্কাশন করলে পদার্থের আয়তন কমে । যেমন — তামা , দুধ , বায়ু ইত্যাদি পদার্থকে তাপ দিলে এদের আয়তন বাড়ে । ব্যতিক্রম — ঢালাই লােহা , বরফ , বিসমাথ , অ্যান্টিমনি , পিতল । তাপ প্রয়ােগে এদের আয়তন কমে যায় ।

বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ধর্মের পরিবর্তন

তাপ প্রয়ােগে পরিবাহীর রােধ সাধারণত বাড়ে । যেমন — লােহা , রূপা , তামা ইত্যাদি পরিবর্তন । পরিবাহীর রােধ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বৃদ্ধি পায় । ব্যতিক্রম — জারমেনিয়াম , সিলিকনকার্বনের রােধ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে হ্রাস পায় । চুম্বককে উত্তপ্ত করলে একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায় ।

দহন

কাঠ , কয়লা , কেরােসিন প্রভৃতি দাহ্য পদার্থ তাপ প্রয়ােগে জ্বলে ওঠে ।

আলোর উৎপত্তি

বৈদ্যুতিক বালবের তার খুব উত্তপ্ত হলে আলাে প্রদান করে ।

বৈদ্যুতিক শক্তি সৃষ্টি

ভিন্ন ধাতুর দুটি তারের দু – প্রান্ত জোড়া লাগিয়ে যে – কোনাে এক প্রান্তকে গরম এবং অন্য প্রান্তকে ঠাণ্ডা করলে তার দুটির মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয় ।

প্রাণনাশ

অতিরিক্ত তাপে প্রাণী , উদ্ভিদ সমস্ত জীবজগতের বিনাশ হয় । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!