পরিমাপের একক কাকে বলে
Contents
পরিমাপের একক কাকে বলে
কোন ভৌত রাশির সঠিক পরিমাপ করতে হলে, ওই রাশির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে প্রমাণ ধরে প্রদত্ত রাশিটির পরিমাপ করা হয়। ওই নির্দিষ্ট পরিমাণটিকে উক্ত ভৌত রাশির একক বলা হয়।

এককের প্রয়োজনীয়তা
ভৌত রাশির সঠিক পরিমাপের জন্য একক একান্ত প্রয়োজন। একক ছাড়া কোন ভৌত রাশির পরিমাপ করা সম্ভব নয়। নিম্নলিখিত কারণে ভৌত রাশির একক ব্যবহৃত হয়।
- ভৌত রাশিটির স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার জন্য।
- বিভিন্ন ভৌত রাশির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য।
- ভৌত রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত ভৌত বস্তুর অবস্থা নিরূপণের জন্য।
- ভৌত রাশি-সমন্বিত সমীকরণ যাচাই করার জন্য।
প্রাথমিক বা মৌলিক বা মূল একক
যে সমস্ত একক স্বাধীনভাবে গঠিত হয় এবং কোনোরকমভাবে অন্য এককের ওপর নির্ভরশীল নয়, তাদের প্রাথমিক বা মূল একক বলা হয় ।
উদাহরণ : দৈর্ঘ্য , ভর , সময় এই তিনটি রাশির একক হল প্রাথমিক বা মূল একক। কারণ, এই তিনটি রাশির একক পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল নয় এবং এই তিনটি রাশির একক থেকে অন্যান্য রাশির একক গঠন করা যায়। SI – তে প্রাথমিক বা মূল এককগুলি হল দৈর্ঘ্য , ভর ,সময় ,তড়িৎ প্রবাহ , উষ্ণতা , দীপন প্রাবল্য প্রভৃতি রাশির একক।
লব্ধ একক
যেসব একক এক বা একাধিক মূল এককের সাহায্যে গঠিত হয়, তাদের লব্ধ একক বলা হয়।
উদাহরণ : ক্ষেত্রফলের একক একটি লব্ধ একক।
আমরা জানি, ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ
ক্ষেত্রফলের একক = দৈর্ঘ্যের একক × দৈর্ঘ্যের একক [যেহেতু প্রস্থ ও একরকম দৈর্ঘ্য, সেহেতু প্রস্থকে দৈর্ঘ্যের এককে প্রকাশ করা হয়।]
= (দৈর্ঘ্যের একক)²
সুতরাং, ক্ষেত্রফলের একক একাধিক মূল এককের সাহায্যে গঠিত। অতএব, ক্ষেত্রফলের একক লব্ধ একক।
বেগের একক একটি লব্ধ একক।
বেগ = সরণ/সময়
= দৈর্ঘ্যের একক/সময়ের একক
সুতরাং, বেগের একক দৈর্ঘ্যের এবং সময়ের একক দ্বারা গঠিত। অতএব, বেগের একক লব্ধ একক।
এছাড়া বল , ত্বরণ , ঘনত্ব , ভরবেগ , চাপ প্রভৃতি রাশির একক গঠনে একাধিক মূল এককের সাহায্য নেয়া হয় ; তাই এই রাশিগুলির একক লব্ধ একক।
মৌলিক একক ও লব্ধ একক নির্ধারণ
মৌলিক একক : দৈর্ঘ্য , ভর , সময় , উচ্চতা , সরণ।
লব্ধ একক : কার্য , ক্ষেত্রফল , আয়তন , ভরবেগ , ঘনত্ব , ভার , বেগ , বল , ত্বরণ।
একক বিহীন প্রাকৃতিক রাশি
যেসব প্রাকৃতিক রাশি দুটি একই প্রকার রাশির অনুপাত, তাদের কোন একক থাকে না । পারমাণবিক গুরুত্ব , আপেক্ষিক গুরুত্ব ইত্যাদি রাশি এককবিহীন।
যেমন : মৌলের পারমাণবিক গুরুত্ব = মৌলের 1টি পরমাণুর ভর/হাইড্রোজেনের 1টি পরমাণুর ভর
অতএব, পারমাণবিক গুরুত্ব দুটি একজাতীয় রাশির অনুপাত, তাই এটি এককবিহীন রাশি।
আবার, আপেক্ষিক গুরুত্ব = বস্তুর ওজন/4°C -এ সমআয়তন জলের ওজন
অতএব, আপেক্ষিক গুরুত্ব দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত হওয়ায় এটিও একক বিহীন রাশি।
একক প্রকাশের পদ্ধতিসমূহ
একক প্রকাশের চারটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যথা –
- cgs বা মেট্রিক পদ্ধতি,
- fps বা ব্রিটিশ পদ্ধতি,
- mks পদ্ধতি এবং
- SI বা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি।
তবে বর্তমানে বিজ্ঞান আলোচনায় প্রধানত দুটি পদ্ধতি – cgs এবং SI ব্যবহৃত হয়।
cgs পদ্ধতি (cgs system)
দৈর্ঘ্যের একক – সেন্টিমিটার (centimeter)
ভরের একক – গ্রাম (gram)
সময়ের একক – সেকেন্ড(second)
fps পদ্ধতি (fps system)
দৈর্ঘ্যের একক – ফুট (foot)
ভরের একক – পাউন্ড (pound)
সময়ের একক – সেকেন্ড (second)
mks পদ্ধতি (mks system)
দৈর্ঘ্যের একক – মিটার (meter)
ভরের একক – কিলোগ্রাম (kilogram)
সময়ের একক – সেকেন্ড (second)
আন্তর্জাতিক পদ্ধতি (SI)
দৈর্ঘ্যের একক – মিটার (meter)
ভরের একক – কিলোগ্রাম (kilogram)
সময়ের একক – সেকেন্ড (Second)
উষ্ণতার একক – কেলভিন (Kelvin)
তড়িৎপ্রবাহের একক – অ্যাম্পিয়ার (ampere)
দীপন প্রাবল্যের একক – ক্যান্ডেলা (candela)
পদার্থের পরিমাণের একক – মোল (mole)
মৌলিক একক বলার কারণ
cgs, fps, mks পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য, ভর, সময় এবং SI – তে দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, তড়িৎপ্রবাহ, উষ্ণতা, দীপনপ্রাবল্য ও মোল – এই রাশি গুলির একক পরস্পরের উপর নির্ভরশীল নয়। এদের একক থেকে অন্য ভৌত রাশির একক গঠন করা যায়। তাই এই রাশিগুলির একককে মৌলিক একক বলা হয়।