নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফল
Contents
নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফল
ব্রিটিশ বণিক কার্ল ব্ল্যাম সর্বপ্রথম ভারতে নীল শিল্প গড়ে তােলেন । তিনি হুগলিতে প্রথম নীলকুঠি স্থাপন করেন । পরবর্তীকালে এই নীল চাষকে কেন্দ্র করে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে নীল চাষিরা ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ ঘােষণা করে তা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত । অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশিরকুমার ঘােষ লেখেন , নীল বিদ্রোহই সর্বপ্রথম ভারতবাসীকে সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়ােজনীয়তা শিখিয়েছিল ।

নীল কমিশন গঠন
নীল বিদ্রোহের তীব্রতায় সরকার বাধ্য হয়ে বাংলার ছােটোলাট জে. পি. গ্রান্ট – এর সভাপতিত্বে নীল কমিশন গঠন করে ( ১৮৬০ খ্রি. ৩১ ডিসেম্বর ) । এই কমিশন তার রিপাের্টে জানায় —
- তিন কাঠিয়া প্রথা অর্থাৎ বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে নীলচাষ করা যাবে ।
- নীলকরদের ব্যাবসাপদ্ধতি দুর্নীতিপূর্ণ , ক্ষতিকারক ও ভ্রান্ত ।
- নীলকরদের বিরুদ্ধে আনা নীলচাষিদের অভিযােগগুলি সত্য ।
নীলকর সাহেবদের পশ্চাদপসরণ
নীল বিদ্রোহের তীব্রতায় ভীত হয়ে সরকারি তরফে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা বেশিরভাগই নীলকরদের বিপক্ষে চলে যাওয়ায় নীলকর সাহেবরা তাদের পুঁজি বাংলার নীলচাষ থেকে সরিয়ে বিহারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ােগ করতে শুরু করে । অনেকে পার্বত্য এলাকায় চা শিল্পে তাদের মূলধন বিনিয়ােগ করতে শুরু করে ।
কৃষকদের জয় প্রতিষ্ঠা
নদীয়ার পােড়াগাছা গ্রামের দিগম্বর বিশ্বাস ও বিষ্ণুচরন বিশ্বাসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নীল বিদ্রোহের মাধ্যমে কৃষকরা জয়ী হয়েছিল । বিদ্রোহীদের সাফল্য প্রমাণ করেছিল বাংলার কৃষককুল দুর্বল ও অসহায় নয় । চরম অত্যাচারের পরেও তারা নিজেদের স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ছিল ।
বাঙালি জাতির মনােবল বৃদ্ধি
নীল বিদ্রোহের সাফল্য ভবিষ্যতের কৃষক আন্দোলনের শক্তি যে জাগ্রত বাঙালি জাতির মধ্যেই রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল । নীল বিদ্রোহই ছিল সর্বপ্রথম ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ গণ আন্দোলন । বাঙালি জাতি যে কতটা আত্মবলে বলীয়ান তা প্রমাণ করেছিল এই বিদ্রোহ । এল. নটরাজন তাঁর ‘ ইন্ডিগাে কাল্টিভেটর’স স্ট্রাইক ( ১৮৬০ খ্রি. ) ‘ নামক প্রবন্ধে লেখেন — বাংলার নীলচাষিরা নীলচাষ করতে অস্বীকার করে প্রথম ধর্মঘট পালন করে ।
জাতীয় চেতনার উন্মেষ
এই বিদ্রোহে জয়ের মাধ্যমে নীলচাষিরা যে নৈতিক শক্তির অধিকারী হয়ে উঠেছিল , তার দ্বারা জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে ।
উপসংহার
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসানের পর ব্রিটিশ রাজত্বে নীল বিদ্রোহ ছিল সংগঠিত গণবিদ্রোহ । সামন্ত প্রথা ও উপনিবেশবাদী শােষণের বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহ একটি তীব্র জেহাদরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । তাই লর্ড ক্যানিং মহাবিদ্রোহের থেকেও নীল বিদ্রোহকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছিলেন ।‘ অমৃতবাজার পত্রিকা’য় লেখা হয়েছিল — এই বিদ্রোহ অর্ধমৃত বাঙালির শিরায় স্বাধীনতার উষ্ণ শােণিত প্রবাহিত করে ।
It is very good. I grateful the teacher who wrote the note