নীল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো
Contents
নীল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো
বাংলার লক্ষ লক্ষ দরিদ্র অসহায় কৃষকদের ওপর নীলকর সাহেবরা যেভাবে ক্রীতদাসের মতাে অত্যাচার ও নিপীড়ন করত , তার বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক প্রতিবাদ ছিল নীল বিদ্রোহ ( ১৮৫৯ – ৬০ খ্রি. ) । নীল বিদ্রোহের অন্যতম নেতা দীনু মণ্ডল বলেছিলেন , লাভ বা ক্ষতি যাই হােক আমি নীলচাষ করার আগে আমার যেন মৃত্যু হয় (‘ Let there be profit or let there be loss . I will die sooner than cultivate Indigo ‘) ।

নীলকরদের অত্যাচার
কোম্পানি ১৮৩৩ -এর সনদ আইন অনুযায়ী নীলচাষকে ইউরােপীয়দের কাছে উন্মুক্ত ঘােষণা করলে বহু ইউরােপীয় ভারতে এসে নীলচাষের ব্যাবসায় নামে । অনিচ্ছুক নীলচাষিদের ঘরে আগুন লাগানাে , চাষের সরঞ্জাম লুঠ করা , বাড়ির মেয়েদের সম্মানহানি করা ইত্যাদি অত্যাচার চালানাে হত , যা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে নীলচাষিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ।
দাদন প্রথা
রায়তি পদ্ধতিতে জমিতে নীলচাষের জন্য কষকদের বিঘা প্রতি দুই টাকা করে দাদন ( অগ্রিম ) দেওয়া হত । দাদনের দ্বারা এককালীন কিছু টাকা পেয়ে কৃষক পরিবারগুলির সাময়িক দারিদ্রমােচন হলেও তারা দাদনের ঋণের জালে যেভাবে জড়িয়ে পড়ত তা থেকে কোনােদিনই আর মুক্তি পাওয়ার আশা ছিল না ।
পঞ্চম আইন
লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে যে পঞম আইন পাস করান তাতে বলা হয় দাদন নিয়ে নীলচাষ না করলে তা বেআইনি গণ্য হবে এবং অপরাধীর কারাদণ্ড হবে । এ প্রসঙ্গে বেন্টিঙ্কের আইন সচিব ব্যাবিংটন মেকলেকে পর্যন্ত বলতে হয়েছিল – নীল চুক্তিগুলি নীতিগত , তবে অত্যন্ত আপত্তিকর ।
প্রতারণা
অশিক্ষিত অসহায় নীলচাষিদের কাছ থেকে উৎপাদিত নীল কেনার সময় ওজনে বেশি নিয়ে কম দাম দিয়ে প্রতারণা করা হত । এ ছাড়াও নীলচাষিদের কাছ থেকে নীল কিনে দাম দেওয়ার সময় নীলকররা দাদনের কিস্তি ও সুদের টাকা কেটে রাখত । উপরন্তু নীলকুঠির কর্মচারীরা জোর করে নীলচাষিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত ।
পূর্বেকার বিদ্রোহের প্রভাব
নীল বিদ্রোহকে প্রভাবিত করেছিল এর পূর্বেকার বিভিন্ন কৃষক উপজাতি বিদ্রোহগুলি । ফরাজি , ওয়াহাবি , সাঁওতাল , কোল বিদ্রোহের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নীলচাষিরা বিদ্রোহ ঘটিয়েছিল ।ব্লেয়ার বি. ক্লিং তাঁর ‘ দি ব্লু মিউটিনি ’ গ্রন্থে লিখেছেন , নীলচাষিরা ফরাজি – সাঁওতাল বিদ্রোহ ছাড়াও সিপাহি বিদ্রোহ থেকে প্রভাবিত হয়েছিল ।
অন্যায্য বিচার
প্রশাসন , এমনকি বিচারকরাও নীলকরদের পক্ষে থাকায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বা প্রতিকার চেয়ে নীলচাষিরা কোনাে সুবিচার পেত না । কৃষকরা ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ হলে মহাজন আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের জমির মালিকানা পেত ।
উপসংহার
নীলচাষিদের ওপর নীলকরদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হয়েছিল সেই সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় । ‘ হিন্দু পেট্রিয়ট ’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখার্জি , অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশিরকুমার ঘােষ , তত্ত্ববােধিনী পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত নীলচাষিদের মনে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার রসদ জুগিয়েছিলেন ।
Nice web