মহারানীর ঘোষণাপত্র বলতে কী বোঝো
Contents
মহারানীর ঘোষণাপত্র বলতে কী বোঝো
মহাবিদ্রোহ দমন করার পর ভারতে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন করা হয় । বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার কেড়ে নিয়ে তা ইংল্যান্ডেশ্বরী মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় । মহারানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি রূপে ভারতে এসে ভাইসরয় ক্যানিং এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত এক দরবারে যে ঘােষণাপত্র পাঠ করেন ( ১৮৫৮ খ্রি. ১ নভেম্বর ) তা মহারানির ঘােষণাপত্র নামে পরিচিত ।

মহারানীর ঘোষণাপত্রের পটভূমি
সিপাহি বিদ্রোহ ঘটে যাওয়ার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসনভার আর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামক একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে রাখতে সাহস পেল না । ব্রিটিশ কর্তপক্ষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ উন্নততর ভারত শাসন আইন ’ পাস করায় । এই আইনের বলে ভারতের শাসনভার মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় । ইংরেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন থেকে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষ শাসন করবে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রী থেকে নির্বাচিত একজন সচিব । এই সচিবকে শাসনকাজে সাহায্য করার জন্য থাকবে ১৫ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল । এভাবেই মহারানির প্রতিনিধিরূপে গভর্নর জেনারেল ‘ ভাইসরয় ’ উপাধি ধারণ করে ঔপনিবেশিক ভারতের প্রশাসন পরিচালনা করবে ।
মহারানীর ঘােষণাপত্রের সুপারিশসমূহ
ঘােষণাপত্রে বলা হয় যে ,
- স্বত্ববিলােপ নীতি পরিত্যক্ত হবে এবং দেশীয় রাজন্যবর্গ দত্তক গ্রহণ করতে পারবে ।
- দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে কোম্পানি ইতিপূর্বে যেসব চুক্তি করেছে সেগুলো মেনে চলবে ।
- বিদ্রোহে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ছাড়া আর সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে ।
- বাজেয়াপ্ত সম্পত্তিও ফিরিয়ে দেওয়া হবে ।
- নতুন কোনাে রাজ্য দখল কিংবা দেশীয় রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হবে না ।
- জাতিধর্মনির্বিশেষে যোগ্য ভারতীয়দের উপযুক্ত সরকারি চাকরি দেওয়া হবে ।
- ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতিতে সরকার আর কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না ।
মহারানীর ঘােষণাপত্রের পরিণতি / ফলাফল
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দীর্ঘ ১০০ বছরের অপশাসনের ক্ষতে প্রলেপ দিতে ইংল্যান্ডেশ্বরী ভিক্টোরিয়া তাঁর ঘােষণাপত্রে ( ১৮৫৮ খ্রি. ) ভারতীয়দের বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । কিন্তু ওইসব প্রতিশ্রুতির কোনােটিই সঠিকভাবে পালিত হয়নি । তাই ঐতিহাসিক বিধান চন্দ্র মহারানির ঘােষণাপত্রকে রাজনৈতিক ধাপ্পা ( ‘ Political Bluff ‘ ) বলে উল্লেখ করেছেন । অন্যদিকে ইংল্যান্ডের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি ভারতের ম্যাগনাকার্টা হিসেবে বিবেচিত হয় । কারণ এই ঘােষণাই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পূর্ব পর্যন্ত এদেশে প্রায় ৬০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি রচনা করে দিয়েছিল । ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে — মহারানির শাসনকাল ছিল প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অধ্যায় (‘ The period of administration by the crown was thus a period of broken pledges ‘ ) ।