বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহ আলোচনা কর
Contents
বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহ আলোচনা কর
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু উপজাতি আন্দোলন গড়ে ওঠে । এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল সাঁওতাল বিদ্রোহ , মুন্ডা বিদ্রোহ , ত্রিপুরার তিপ্রা , জমাতিয়া , কুকি , আসামের ফুলাগুঁড়ি ও জয়ন্তিয়া বিদ্রোহ , কোলি বিদ্রোহ ইত্যাদি ।

সাঁওতাল বিদ্রোহ ( ১৮৫৫ খ্রি. )
শান্তিপ্রিয় , অরণ্যচারী সাঁওতাল উপজাতিরা বিভিন্ন ধরনের খাজনা ও উপশুল্ক , বন্ডপ্রথা , ব্যবসায়ীদের কারচুপি , রেলকর্মচারী ও ঠিকাদারদের অত্যাচার ইত্যাদির প্রতিবাদে বিদ্রোহী হয় । সিধু – কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল উপজাতিরা বিদ্রোহ ঘােষণা করলেও এই বিদ্রোহে সমাজের দরিদ্র কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষরাও যােগ দেয় । শুধুমাত্র জমিদার বা মহাজন বিরােধী নয় , সাঁওতাল বিদ্রোহ এক ব্রিটিশবিরােধী গণসংগ্রাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । সাঁওতাল বিদ্রোহের তীব্রতায় ভয় পেয়ে ব্রিটিশ অবশেষে আলাদা সাঁওতাল পরগনা গঠন ও সাঁওতালদের বিশেষ কিছু অধিকারের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় ।
ত্রিপুরার উপজাতি বিদ্রোহ
ত্রিপুরার তিনটি উপজাতি বিদ্রোহ সামন্ততন্ত্র ও বিদেশি শােষণের বিরুদ্ধে তীব্র জেহাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল । ত্রিপুরার মহারাজা চন্দ্ৰমাণিক্য ও তাঁর দুই অনুচর বলরাম ও শ্রীদাম হাজারিকার শােষণ ও শাসনে জর্জরিত হয়ে তিপ্রা উপজাতি পরীক্ষিত ও কীর্তির নেতৃত্বে বিদ্রোহী হয় ( ১৮৫০ খ্রি. ) । ত্রিপুরার জমাতিয়া উপজাতি রাজবংশ ও সামন্ততান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে । তারা পরীক্ষিতের নেতৃত্বে রাজাকে দেওয়া খাজনা বন্ধ করে দেয় ( ১৮৬৩ খ্রি. ) । কুকি সৈন্যদের দ্বারা এই বিদ্রোহ দমন করা হয় । কিন্তু ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে ত্রিপুরা রাজের অত্যাচার , সামন্ততন্ত্র , ইংরেজ শােষণ প্রভৃতি কারণে কুকি উপজাতি বিদ্রোহ করেছিল ।
ফুলাগুঁড়ি ( ১৮৬১ খ্রি. ) ও জয়ন্তিয়া ( ১৮৬০ , ১৮৬২ খ্রি. ) বিদ্রোহ
আসামের দুটি উপজাতির বিদ্রোহ ব্রিটিশবিরােধী ভূমিকা নেয় ।
- আসামের নওগঙ্গ জেলার ফুলাখুঁড়ি অঞ্চলের উপজাতি আদিবাসীরা ধান ,পান ও সুপারি চাষ করে কোনােমতে জীবিকা চালাত । তাদের এই জীবিকায় আসামের ব্রিটিশ শাসকরা কর চাপালে নরসিং লালুং , বাবু ডােম – এর নেতৃত্বে তারা বিদ্রোহ ঘােষণা করে । নওগঙ্গ জেলার ডেপুটি কমিশনার বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন ।
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসামের জয়ন্তিয়া পার্বত্য অঞ্চলটিকে নিজের শাসনাধীনে আনলে এখানকার সিন্টেঙ্গ উপজাতি বিদ্রোহ ঘােষণা করে । ব্রিটিশ বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে গেরিলা যুদ্ধে রত বিদ্রোহীদের দমন করে ।
কোলি বিদ্রোহ ( ১৮৭১ – ৭৫ খ্রি. )
বােম্বাই প্রদেশের পুনা ও থানে জেলার মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নিরীহ ও নিরক্ষর কোলি উপজাতি মাড়ােয়ারি মহাজনগােষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে । অধিক সুদে অর্থ ঋণ দিয়ে মাড়ােয়ারি মহাজনগােষ্ঠী জমিজমা হস্তগত করলে কোলিরা বিদ্রোহী হয় । তারা বাধ্য হয়ে জীবনধারণের জন্যই মাড়ােয়ারিদের গৃহ ও সম্পত্তি লুণ্ঠন করতে শুরু করে ।
মুন্ডা বিদ্রোহ ( ১৮৯৯ – ১৯০০ খ্রি. )
ব্রিটিশ কুন্তকাঠি ( বা খুঁৎকাঠি ) প্রথা অর্থাৎ জমির যৌথ মালিকানা প্রথার বিলােপ ঘটালে , সেই সঙ্গে আরও একাধিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা উপজাতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । মুন্ডা বিদ্রোহের তীব্রতায় ব্রিটিশ বাধ্য হয়ে ছােটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন ( ১৯০৮ খ্রি. ) পাশ করায় ও কুন্তকাঠি বা খুঁৎকাঠি প্রথার স্বীকৃতি দেয় ।
Ami khub upokrito holam thank u so much 🙂