কেন্দ্রমন্ডল / গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল / অশ্মমণ্ডল বা শিলামন্ডল

কেন্দ্রমন্ডল / গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল / অশ্মমণ্ডল বা শিলামন্ডল

ভূ – পৃষ্ঠ বর্তমানে কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হলেও ভূ – গর্ভটি এখনাে পর্যন্ত উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে । ভূ – পৃষ্ঠ থেকে যতই পৃথিবীর অভ্যন্তরের দিকে যাওয়া যায় , ততই চাপ ও তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে । এমন কী প্রতি ৩২ মিটার ভিতরে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বাড়ে । সুতরাং দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর অভ্যন্তরের কয়েকশ কিলােমিটার নীচে যে তাপমাত্রা হওয়ার কথা ( ৪০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ) তাতে কোনাে পদার্থই কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে না । অর্থাৎ তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকা উচিত । কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রকম ভূ – কম্প তরঙ্গের গতি – প্রকৃতি লক্ষ করে অনুমান করেন যে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূ – পৃষ্ঠ পর্যন্ত পদার্থগুলি কঠিন , তরল ও স্থিতিস্থাপক অবস্থায় স্তরে স্তরে সজ্জিত আছে ।

geothermal energy
পৃথিবীর অভ্যন্তরের স্তর

তােমরা নিশ্চয়ই জান হালকা জিনিস ভারী জিনিসের উপরে ভাসে । যেমন আমরা তেলকে জলের ওপর ভেসে থাকতে দেখি । সেইরকম উত্তপ্ত অবস্থা থেকে শীতল ও ঘনীভূত হওয়ার সময়ে পৃথিবীর নানা উপাদানগুলির মধ্যে যেগুলি ভারী ( যেমন — লােহা , নিকেল প্রভৃতি ) সেগুলি ভূ-কেন্দ্রের চারদিকে জমা হয়েছে । আর কেন্দ্র থেকে ভূ – পৃষ্ঠ পর্যন্ত ওপরের দিকে হালকা পদার্থগুলি তাদের ঘনত্ব অনুসারে স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়েছে ।

ভূ – বিজ্ঞানীগণ এই সব পদার্থের ঘনত্ব , ওজন , সজ্জিতকরণ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে ভূ – অভ্যন্তরকে প্রধান তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেছেন । যেমন — কেন্দ্রমণ্ডল , গুরুমণ্ডলঅশ্মমণ্ডল বা শিলামণ্ডল

কেন্দ্রমণ্ডল ( Centrosphere )

পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী পদার্থগুলি যেমন — লােহা , নিকেল প্রভৃতি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূ – কেন্দ্রের চারদিকে জমা হয়ে একটি স্তর গঠন করেছে । এই স্তরটিকে বলা হয় কেন্দ্রমণ্ডল । এর গভীরতা প্রায় ৩,৪৪৫ কিলােমিটার । এটি চারদিকে প্রায় ৩,৪৭৫ কিলােমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত । এই মণ্ডল সবচেয়ে ভারী এবং এর ঘনত্বও বেশি । এখানকার গড় উষ্ণতা প্রায় ৪,০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড । অত্যন্ত উত্তপ্ত অবস্থায় থাকলেও বিজ্ঞানীদের অনুমান উপরের স্তরগুলির প্রবল চাপে এখানকার স্তরটি এখনাে কঠিন ও তরলের মাঝামাঝি একপ্রকার স্থিতিস্থাপক অবস্থায় রয়েছে । বিজ্ঞানীরা কেন্দ্রমণ্ডলটিকে দুটি স্তরে ভাগ করেছেন — ভিতরের অংশটিকে অন্তঃকেন্দ্র মণ্ডল এবং তার চারদিকের অংশটিকে বহিঃকেন্দ্র মণ্ডল বলে আখ্যা দিয়েছেন ।

গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল ( Barysphere or Mantle ) 

কেন্দ্রমণ্ডলের ওপরে আর একটি স্তর আছে । এই স্তরটি লােহা – মিশ্রিত অপেক্ষাকৃত হালকা শিলা ঘনীভূত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে । এই স্তরের উপাদানগুলি জল অপেক্ষা প্রায় ৫ গুণ ভারী । একে গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল বলে । স্তরটি প্রায় ২,৮৭৮ কিলােমিটার পুরু । এখানকার উষ্ণতা ২,২০৫ সেলসিয়াস । অত্যাধিক তাপ ও চাপের ফলে এখানকার উপাদানগুলি একপ্রকার স্থিতিস্থাপক অবস্থায় রয়েছে । অগ্ন্যুৎপাত , ভূমিকম্প , ভূ – আলােড়ন প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণত এই স্তরেই দেখা যায় । গুটেনবার্গ বিযুক্তি সীমা এই স্তরটিকে কেন্দ্রমণ্ডল থেকে আলাদা করেছে । আবার এই স্তরটি দুটি স্তরে বিভক্ত —এই মণ্ডলের নীচের দিকে কিছুটা নিকেল ( Ni ) , ফেরাস ( Fe ) , সিলিকা ( Si ) এবং ম্যাগনেসিয়াম ( Mg ) থাকায় স্তরটিকে নিফেসিমা ( Ni – Fe – Si – Ma ) বলে । অপরদিকে ,গুরুমণ্ডলের ওপরের দিকে নিকেলের পরিবর্তে ক্রোমিয়াম ( Cr ) থাকায় স্তরটিকে ক্ৰফেসিমা ( Cr – Fe – Si – Ma ) বলে ।

অশ্মমণ্ডল বা শিলামণ্ডল ( Lithosphere )

গুরুমণ্ডলের ওপরে , অর্থাৎ পৃথিবীর সব থেকে ওপরের অংশকে শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডল বলে । এই অশ্মমণ্ডলের নীচ থেকে ওপরের দিকে পরপর ভারী থেকে হালকা পদার্থগুলি স্তরে স্তরে সজ্জিত । স্তরটি মােটামুটি ১৭ কিলােমিটার পুরু । এখানকার উষ্ণতা ৪৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এই স্তরের নীচের শিলাগুলি ব্যাসল্ট এবং ওপরের শিলাগুলি গ্রানাইট জাতীয় ভূ – ত্বক এই শিলামণ্ডলেরই অন্তর্ভুক্ত । মােহে বিযুক্তিরেখা এই শিলামণ্ডলকে নীচের গুরুমন্ডল থেকে আলাদা করেছে । 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x
error: Content is protected !!