পৃথিবীর আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতির প্রমান
Contents
পৃথিবীর আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতির প্রমান
পৃথিবী যে নিজ মেরুদণ্ডের চারদিকে অবিরাম আবর্তন করে চলেছে, তা বিভিন্নভাবে প্রমান করা যায়, যথা 一

সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখে
আমরা সূর্যকে পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যেতে দেখি। এ থেকে স্বাভাবিকভাবে মনে হয় 一 পৃথিবী স্থির হয়ে আছে এবং সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু, সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় 15 কোটি কিমি দূরে আছে। এত দূরে থেকে সূর্যের পক্ষে 24 ঘন্টায় একবার পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে হলে যে প্রচন্ড গতিবেগের প্রয়োজন তা আলোর গতিবেগের চেয়ে অনেক বেশি। অথচ গণিতশাস্ত্র অনুসারে কোন পদার্থই আলোর গতিবেগের চেয়ে দ্রুতগামী নয়। সুতরাং, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে না।
আবার দেখা যায়, সূর্য পৃথিবীর তুলনায় 13 লক্ষ গুণ বড়ো। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে বৃহৎ সূর্য কখনো ক্ষুদ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে পারে না। সুতরাং, দু-ভাবেই প্রমাণ করা যায় যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।
নিশ্চল বায়ুতে প্রস্তরখন্ডের পরীক্ষার দ্বারা
খুব উঁচু স্থান থেকে একটি প্রস্তরখণ্ড নিশ্চল বায়ুর মধ্য দিয়ে নীচে ফেলে দিলে দেখা যায়, পাথরটি ভূপৃষ্ঠে সোজাসুজি না পড়ে পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য (পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘরে বলে) একটু পূর্বদিকে এগিয়ে পড়ে।
পৃথিবীর অভিগত গোলীয় আকৃতি দেখে
কোন নমনীয় বস্তু তার অক্ষরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করলে মাঝখানেই সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তির উদ্ভব হয়। এর ফলে ঐ বস্তুর মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত এবং প্রান্তদ্বয় কিছুটা চাপা হয়। পৃথিবী নিজ মেরুদন্ডের চারদিকে অনবরত আবর্তন করে চলেছে, তাই নমনীয় থেকে কঠিন হওয়ার সময় পৃথিবীরও মেরুদ্বয় চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত হয়। সুতরাং, পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতিই পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রমাণ।
বিজ্ঞানী ফুকোর পরীক্ষার মাধ্যমে
1851 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ফুকো একটি বড়ো লোহার দোলকের তলায় পিন লাগিয়ে ওই দোলকটিকে প্যারিস শহরের একটি গির্জার চূড়া থেকে প্রায় 61 মিটার লম্বা তারের সাহায্যে নীচে ঝুলিয়ে দেন এবং মাটিতে কিছু বালি ছড়িয়ে রাখেন। এবার দোলকটিকে ধীরে ধীরে উত্তর-দক্ষিণে দুলিয়ে দিয়ে লক্ষ্য করলেন, দোলকটি একই দিকে উত্তর-দক্ষিণে সমানভাবে দুললেও বালির ওপর পিনের দাগ কিন্তু ধীরে ধীরে পশ্চিম থেকে পূর্বে সরে যাচ্ছে। পৃথিবী আবর্তন না করলে পিনের দাগ একই স্থানে পড়ত।
অন্যান্য গ্রহের দৃষ্টান্ত দেখে
শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলি নিজ নিজ মেরুদণ্ডের চারদিকে ঘুরছে। পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ। সুতরাং, পৃথিবীও নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে ঘুরবে 一 এটাই স্বাভাবিক।
মহাকাশ থেকে পরীক্ষার দ্বারা
সম্প্রতি নীল আমস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন প্রমূখ মহাকাশচারী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর আবর্তন গতি লক্ষ্য করেছেন।
ফেরেলের সূত্রের মাধ্যমে
আমেরিকার বিজ্ঞানী ফেরেলের মতানুসারে পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যই বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে বেঁকে যায়।