ইতিহাস

আন্টার্কটিকা মহাদেশের আয়তন/ভূপ্রকৃতি/জলবায়ু

Contents

আন্টার্কটিকা মহাদেশের আয়তন/ভূপ্রকৃতি/জলবায়ু

পৃথিবীর মেরুরেখার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত দুটি বিন্দুতে মিলিত হয়েছে । উত্তরের বিন্দুটিকে উত্তর মেরুবিন্দু বা সুমেরুবিন্দু এবং দক্ষিণের বিন্দুটিকে দক্ষিণ মেরুবিন্দু বা কুমেরু বিন্দু বলে । দক্ষিণ গােলার্ধের কুমেরুর চারদিক ঘিরে একটা বিশাল বরফে ঢাকা ভূ – ভাগ আছে । এই শীতলতম ভূ – ভাগ বা মহাদেশটিকে আন্টার্কটিকা বা কুমেরু মহাদেশ বলে । এটি বরফের রাজ্য এবং এর শতকরা ৯৮ ভাগ স্থান কঠিন বরফে ঢাকা । এই অঞ্চলটিকে তুষার অঞ্চল বা তুষার রাজ্য বলা হয় ।

Physiographic map of the Antarctic continent showing the locations of previous detrital 1
Antarctica

কুমেরু মহাদেশ বা আন্টার্কটিকা আবিষ্কারের ইতিহাস

দক্ষিণ মেরুর এই ভূ – খণ্ডটি পৃথিবীর মানুষের কাছে দীর্ঘদিন অজ্ঞাত ছিল । অষ্টাদশ শতাব্দীর তৃতীয়ার্ধে এর আবিষ্কারের কাজ শুরু হয় । ১৭৭২ সালে দুঃসাহসিক নাবিক ক্যাপ্টেন কুক এই দুর্গম তুষারাবৃত মহাদেশটি আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন , কিন্তু তিনি মূল ভূ – খণ্ডে পৌঁছাতে পারেন নি । এরপর জেমস ওয়েডেল , জেমস ক্লার্করস প্রমুখ অভিযাত্রীরা কুমেরুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন । কিন্তু কেউই মূল জায়গায় পৌছাতে পারেননি । তবে পরপর কয়েকটি অভিযাত্রিদলের ব্যর্থতা কাউকে হতাশ করেনি এবং কুমেরু আবিষ্কারের স্বপ্নও মন থেকে মুছে যায়নি ।

১৯১১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নরওয়ের নাবিক রােনাল্ড আমুন্ডসেন সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কখনাে বরফস্তূপের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে , কখনাে বা লেজ গাড়িতে চেপে কুমেরু মহাদেশের মূল ভূ – খণ্ডে পৌছান । ইনিই প্রথম কুমেরুতে নরওয়ের জাতীয় পতাকা ওড়ান । এর একবছর পরে ইংরেজ অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন স্কট চারজন সঙ্গী নিয়ে কুমেরুতে হাজির হন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফেরার পথে তাঁরা সকলেই প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রাণ হারান । এর পর ইউরােপের বিভিন্ন দেশ , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশের অভিযাত্রীদল কুমেরু পাড়ি দিয়ে সফল হন । ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার ভিভিয়ান ফুচ ১৯৫৫ – ৫৮ সালে মহাদেশের সর্বত্র পথ পরিক্রমা করার গৌরব অর্জন করেন । ভারতও ১৯৮২ সালে ভারতের একটি অভিযাত্রী দল কুমেরুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং ওই বছর ৯ই জানুয়ারি মহাদেশে অবতরণ করেন । সমুদ্র উপকূল থেকে ৯০ কি. মি. ভিতরে একটি অনুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপন করেন । এটির নাম ‘ দক্ষিণ গঙ্গোত্রী ’ । এর পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে পর পর মােট ৯টি অভিযাত্রী দল কুমেরু মহাদেশে অভিযান চালায় ।

এইভাবে বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টায় আজ কুমেরু মহাদেশ পৃথিবীর সভ্য মানুষের কাছে পরিচিত হতে পেরেছে । যে সমস্ত দেশ কুমেরু মহাদেশে পৌঁছাতে পেরেছে তারাই মহাদেশের এক একটি অঞ্চল দখল করে নিয়েছে । বৈজ্ঞানিকরাও মহাদেশের  বিভিন্ন অংশে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন কোথাও খনিজসম্পদ আছে কিনা ।

আন্টার্কটিকার আয়তন

মহাদেশটির আয়তন বিশাল । এর মােট আয়তন ১ কোটি ৪০ লক্ষ বর্গ কিলােমিটার । আমাদের ভারতের প্রায় ৬ গুণ বড় ।

আন্টার্কটিকার ভূ প্রকৃতি

কুমেরু মহাদেশ বা আন্টার্কটিকায় আছে কেবল বরফের বিশাল পাহাড় , দীর্ঘতম ও বৃহত্তম হিমবাহ এবং বরফের সমভূমি । বিশাল আন্টার্কটিকা মহাদেশকে ভূ – প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পূর্ব আন্টার্কটিকাপশ্চিম আন্টার্কটিকা এই দুই ভাগে ভাগ করা যায় । পূর্ব আন্টার্কটিকা আয়তনে সবচেয়ে বড়াে । আন্টার্কটিকার একটি বিখ্যাত উপসাগরের নাম রস উপসাগর । এই রস উপকূলে ১৬০ মিটার লম্বা বিয়ার্ডমাের হিমবাহ পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ এবং রস উপকূলীয় সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম তুষার সমভূমি

পশ্চিম আন্টার্কটিকা কতকগুলি দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত । বৈজ্ঞানিকগণ এই দ্বীপপুঞ্জগুলিকে আন্দিজ পর্বত মালার অংশ বলে মনে করেন । এগুলি সমুদ্রের নীচ দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে বলে মনে করা হয় । পশ্চিম আন্টার্কটিকার একটি উপসাগরের নাম ওয়েডেল সাগর

মহাদেশের সমস্তটাই বরফে ঢাকা । এখানে বরফের গভীরতা প্রায় ৪,৫০০ মিটার এবং বরফের স্তরগুলি সদা সচল । এই সচল বরফ স্তুূপকে হিমবাহ বলে । ৫১২ মিটার লম্বা এবং ৬৫ মিটার চওড়া একটি হিমবাহ এখানে দেখা যায় । এটি পৃথিবীর বৃহত্তম হিমবাহ । এর নাম ল্যামবার্ট হিমবাহ । এই মহাদেশের পর্বতগুলির বেশির ভাগ আগ্নেয় শিলায় গঠিত । এখানকার মাউন্ট ইরিবাস আগ্নেয়গিরি থেকে এখনাে মাঝে মাঝে অগ্ন্যুৎপাত হয়

আন্টার্কটিকার জলবায়ু

এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান । শীতকালে সবসময়ই তুষারপাত হয় । শুধু তাই নয় , গ্রীষ্মকালেও উষ্ণতা হিমাঙ্কের  –৪০° সেঃ নীচে থাকে । এখানকার ভােস্টক গবেষণা কেন্দ্রে ( কুমেরুর কাছে ) এক সময় তাপমাত্রা  –৮৮° হিমাঙ্কের নীচে রেকর্ড করা হয়েছিল । এখানে প্রায়ই তুষার ঝড় হয় ।

এই শীতলতম মহাদেশে মস ও শৈবালজাতীয় উদ্ভিদ ছাড়া অন্য কোনাে উদ্ভিদ দেখা যায় না । এখানকার সীল , পেঙ্গুইন ও অ্যালবাট্রস পাখি বিখ্যাত । তিমি মাছও এখানে যথেষ্ট পাওয়া যায় । বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে তিমি মাছ শিকার করতে আসে।

এখানে কোনাে লােকবসতি নেই । গবেষণারত বিজ্ঞানীরাই এখানকার একমাত্র অধিবাসী । এই তুষার অঞ্চলের একমাত্র সম্পদ তিমি মাছ । তবে এখানে কিছু কয়লাতামার সন্ধান পাওয়া গেছে । কিন্তু প্রতিকূল অবস্থার জন্য সেগুলি তোলা সম্ভব হয়নি । এখানকার কুইন মাডল্যান্ড , অ্যানডাবার ল্যান্ড , অ্যাডিলি ল্যান্ড কয়েকটি উল্লেখযোগ‍্য দ্বীপ । এগুলি নৌবহর ও মাছ ধরার কেন্দ্র হিসাবে প্রধানত ব্যবহৃত হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!