ঘনীভবন বলতে কী বোঝো আলোচনা করো
Contents
ঘনীভবন বলতে কী বোঝো আলোচনা করো
কোনাে পদার্থের বাষ্পীয় অবস্থা থেকে তরলে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে । কোনাে পদার্থের বাষ্পকে ঠান্ডা করলে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তরলে পরিণত হয় । যেমন একটি কেটলিতে জল ফোটালে কেটলির মুখ দিয়ে জলীয় বাষ্প বের হয়ে আসে । এখন একটি ঠান্ডা কাচের বা ধাতুর প্লেট কেটলির মুখে ধরলে দেখা যাবে যে প্লেটের গায়ে বিন্দু বিন্দু জল জমা হচ্ছে ।

গ্যাস ও বাষ্প
সাধারণভাবে আমরা কোনাে তরলকে উত্তপ্ত করে যে গ্যাসীয় পদার্থ পাই তাকে বাষ্প বা গ্যাস বলি । কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাস ও বাষ্প এক জিনিস নয় । দেখা যায় যে কোনাে গ্যাসীয় পদার্থকে একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বা তার চেয়ে কম উষ্ণতায় রেখে শুধুমাত্র চাপ প্রয়ােগ করে তরলে রূপান্তরিত করা যায় । কিন্তু গ্যাসীয় পদার্থের উষ্ণতা ওই নির্দিষ্ট উষ্ণতার বেশি হলে চাপ প্রয়ােগ করে একে তরলে রূপান্তরিত করা যায় না । এই নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে সংকট উষ্ণতা বলে । কোনাে গ্যাসীয় পদার্থ সংকট উষ্ণতার নীচে থাকলে তাকে বাষ্প বলা হয় আর সংকট উষ্ণতার উপরে থাকলে তাকে গ্যাস বলা হয় ।
সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প :
কোনাে তরলকে একটি আবদ্ধ পাত্রে রেখে বাষ্পীভূত হওয়ার সুযােগ দিলে ওই আবদ্ধ পাত্র ক্রমশ তরল বাষ্প দ্বারা পূর্ণ হয় । কিছুক্ষণ পর দেখা যায় , যে হারে তরল অণু বাষ্পে পরিণত হয় সেই হারে বাষ্পের অণু তরলে পুনরায় প্রবেশ করে । এই অবস্থায় আবদ্ধ স্থানে বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ হয় । অর্থাৎ কোনো আবদ্ধ স্থানের বাষ্পধারণ করার একটি সর্বোচ্চ সীমা আছে । তখন বলা হয় যে আবদ্ধ স্থানটি বাষ্প দ্বারা সংপৃক্ত হয়েছে । উষ্ণতা বাড়লে আবদ্ধ স্থানের বাষ্পধারণ ক্ষমতা বাড়ে ।
কোনাে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনাে আবদ্ধ স্থানে সবচেয়ে বেশি যে পরিমাণ বাষ্প থাকতে পারে তা ওই স্থানে থাকলে ওই বাষ্পকে সম্পৃক্ত বাষ্প বলে । অপরপক্ষে কোনাে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনাে আবদ্ধ স্থানে সবচেয়ে বেশি যে পরিমাণ বাষ্প থাকতে পারে তার চেয়ে কম পরিমাণ বাষ্প ওই স্থানে থাকলে ওই বাষ্পকে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলে ।
শিশির , কুয়াশা ও মেঘ
সমুদ্র , হ্রদ , নদী , পুকুর ইত্যাদি থেকে বাম্পায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে সব সময় জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় । এই জলীয় বাষ্প নানা কারণে বিভিন্ন অবস্থায় ঘনীভূত হয়ে শিশির , কুয়াশা , মেঘ প্রভৃতি সৃষ্টি করে ।
শিশির ( Dew ) :
সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে তার দ্বারা বায়ুমণ্ডল সংপৃক্ত হয় না । রাতে ভূপৃষ্ঠ এবং তার কাছাকাছি বস্তুগুলি তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হলে এদের সংলগ্ন বায়ুস্তরের উষ্ণতা কমতে থাকে এবং বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে । একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প দ্বারা বায়ু সংপৃক্ত হয়ে যায় । এই উষ্ণতাকে শিশিরাঙ্ক ( dew point ) বলে । বায়ুর উষ্ণতা যদি শিশিরাঙ্কের চেয়ে একটু কমে যায় তাহলে বায়ুমণ্ডলের কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষদ্র জলকণার আকারে ঘাস , পাতা ইত্যাদির উপর জমা হয় । একে শিশির বলে।
শিশির জমার শর্ত :
পরিষ্কার আকাশ — আকাশ পরিষ্কার থাকলে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হতে পারে , ফলে ভালাে শিশির জমে । কিন্তু আকাশ মেঘলা হলে বিকীর্ণ তাপ মেঘ থেকে প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে । ফলে ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হতে দেরি হয় এবং শিশির কম জমে বা জমতে পারে না ।
বায়ুর আর্দ্রতা — বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে বায়ুর উষ্ণতা সামান্য কমলেই বায়ু সংপৃক্ত হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি শিশির জমে ।
স্থির বাতাস — বায়ু চলাচল কম হলে ঠান্ডা বস্তুর সংস্পর্শে বায়ু বেশিক্ষণ থাকার সুযােগ পায় । ফলে বায়ুর ঠান্ডা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে । তাই বাতাস স্থির থাকলে বেশি শিশির জমে ।
ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুর উপস্থিতি — কোনাে বস্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে থাকলে বস্তুটির সংলগ্ন বায়ু ঠান্ডা হয়ে ভারী হয় বলে নীচে নেমে আসে এবং উষ্ণবায়ু আবার ওই বস্তুর সান্নিধ্যে আসে ও শিশির জমার মতাে ঠান্ডা অবস্থা সৃষ্টি হয় না । তাই উঁচু গাছের পাতা অপেক্ষা ঘাসে শিশির বেশি জমে ।
ভালাে বিকিরক এবং কুপরিবাহী বস্তুর উপস্থিতি — ভালাে বিকিরক ও কুপরিবাহী বস্তু তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায় , ফলে ওর উপর বেশি শিশির জমে ।
কুয়াশা ( Fog ) :
কোনাে কারণে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বাতাসের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কে নেমে গেলে বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প দ্বারা বায়ু সংপৃক্ত হয়ে পড়ে । এবার উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে বায়ুর কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গায়ে জলকণার আকারে জমে বাতাসে ভেসে বেড়ায় । একে কুয়াশা বলে । বায়ুপ্রবাহ থাকলে কিংবা বায়ু পরিষ্কার থাকলে ( অর্থাৎ ধূলিকণা , ধোঁয়া না থাকলে ) কুয়াশা জমার সম্ভাবনা কমে যায় । বড়াে বড়াে শহরে বা শিল্পাঞ্চলের বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া ও ধূলিকণা বাতাসে ভাসতে থাকে । এইসব জায়গায় প্রায়ই ধোঁয়া ও কুয়াশা মিলে বাতাসে একটি ঘন আবরণের সৃষ্টি করে । একে ধোঁয়াশা ( smog ) বলে |
মেঘ ( Cloud ) :
জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে যখন উপরে উঠে যায় সেখানে চাপ কম হওয়ায় ওই বায়ুর প্রসারণ ঘটে । ফলে বাতাসের উষ্ণতা কমে যায় । তাছাড়া বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশে উষ্ণতা এমনিতেই কম থাকে । ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্প আরও ঠান্ডা হয়ে যায় । উষ্ণতা কমে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় এবং ভাসমান ধূলিকণা বা অন্যান্য কণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায় । একেই মেঘ বলে । কুয়াশা ও মেঘের মধ্যে কোনাে মৌলিক পার্থক্য নেই । কুয়াশা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি এবং মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে সৃষ্টি হয় । মেঘের ক্ষুদ্র জলকণাগুলি মিলিত হয়ে যখন বড়াে বড়াে জলবিন্দুতে পরিণত হয় তখন অভিকর্ষের টানে মাটির দিকে নেমে আসে । একে বৃষ্টি বলে ।
it is useful 😁👍👌