ইতিহাস

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ

Contents

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ

সামাজিক , রাজনৈতিকঅর্থনৈতিক কারণের মতােই সিপাহি বিদ্রোহের অপর অন্যতম কারণটি ছিল সামরিক । সেনাবাহিনীতে ব্রিটিশের একপেশে নীতি ও বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতীয় সিপাহিদের মনে দিনের পর দিন ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে । উল্লেখ্য , ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের আগেও সিপাহিরা মােট চারবার ছােটোখাটো বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল ।

unnamed 4
মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ

ব্রিটিশ অফিসারদের অভদ্র আচরণ

সেনাবাহিনীতে ইংরেজরাই সাধারণত অফিসার পদগুলিতে নিযুক্ত ছিল । তারা এতটাই দাম্ভিক ও উদ্ধত ছিল যে , ভারতীয় সিপাহিদের প্রতি কারণে – অকারণে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করত । ব্রিটিশ ঐতিহাসিক হােমস  বলেছেন — একজন সিপাহি হায়দার আলির মতাে নৈপুণ্য ও দক্ষতা দেখিয়েও একজন সাধারণ ইংরেজ সৈনিকের মতাে মর্যাদা আশা করতে পারত না ।

সিপাহিদের সমুদ্রযাত্রা

তৎকালীন হিন্দুসমাজে সমুদ্রযাত্রা জাতিচ্যুত হওয়ারই শামিল ছিল । জেনারেল সার্ভিস এনলিস্টমেন্ট নামে এক আইন জারি ( ১৮৫৬ খ্রি. ) করে বলা হয় — প্রত্যেক সিপাহিকে প্রয়ােজনে সমুদ্রপথেই বিদেশ যেতে হবে । সরকারের এই আদেশ সিপাহিদের বিশেষভাবে ক্ষুদ্ধ করে ।

বেতনের তারতম্য

কোম্পানির ইংরেজ সেনা ও ভারতীয় সিপাহিদের মধ্যে বেতনের এক বিরাট ব্যবধান ছিল । একজন ভারতীয় পদাতিক সিপাহি বেতন পেতেন মাসে ৭ টাকা । এই সামান্য বেতনে পােশাক , খাওয়া ও ঘােড়া প্রতিপালনের পর হাতে থাকত সামান্য কিছু টাকা । অথচ ব্রিটিশ সেনারা বেতন পেত এর থেকে বহুগুণ বেশি ।

বাট্টা রদ

সামরিক কারণে দূরদেশে অবস্থানকালে ভারতীয় সিপাহিরা একটি অতিরিক্ত ভাতা বা বাট্টা পেত । দীর্ঘদিন ধরে সিন্ধু ও পাঞ্জাব অঞ্চলে মােতায়েনরত সিপাহিরা এই ভাতা পেয়ে আসছিল । কিন্তু ওই অতিরিক্ত ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হলে সিপাহিদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয় ।

পদোন্নতির পথে বাধা

সিপাহিদের পদোন্নতির সম্ভাবনাও ছিল খুব কম । কোনাে ভারতীয়ের পক্ষে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেও সুবেদারের চেয়ে উঁচু কোনাে পদে পৌঁছােনা সম্ভব হত না । অথচ অনভিজ্ঞ ইংরেজ কর্মচারী বা সেনাদের যথেচ্ছভাবে উচ্চপদে নিয়ােগ করা হত । ব্রিটিশ কর্মচারী কায়ে স্বীকার করেছিলেন , ভারতীয়দের পদোন্নতিজনিত ক্ষোভ যথেষ্ট তীব্র ছিল ।

আত্মবিশ্বাস

প্রথম আফগান যুদ্ধ ( ১৮৩৮ – ৪২ খ্রি . ) , পাঞ্জাব যুদ্ধ ( ১৮৪৫ – ৪৯ খ্রি . ) ও ইউরােপে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ( ১৮৫৪ – ৫৬ খ্রি . ) ইংরেজ বাহিনীর সীমাহীন দুর্দশার কাহিনি সিপাহিদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল । এ ছাড়াও সেনাবাহিনীতে ইংরেজ ও ভারতীয় সেনার অনুপাত ছিল ১ : ৫ । সংখ্যায় বেশি হওয়ায় ভারতীয় সিপাহিরা বিদ্রোহ ঘােষণা করার সাহস দেখিয়েছিল । ইংরেজদের এ দেশ থেকে উৎখাত করা যে কঠিন ব্যাপার নয় , তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে উঠেছিল ।

উপসংহার

ব্রিটিশ সামরিক কর্তৃপক্ষের কিছু অন্যায় নির্দেশ এবং সামরিক অফিসারদের ভারতীয় সিপাহিদের অবমাননা ও অবহেলা বিদ্রোহের পটভূমি রচনায় সাহায্য করে । সেসময়কার সাধারণ ভারতীয় সিপাহিদের মধ্যে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছিল তার বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায় এই বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে । টমাস মনরাে  বলেছেন — ইংরেজদের ব্যবহারে ভারতীয়রা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!