ইতিহাস

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের ধর্মীয় কারণ

Contents

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের ধর্মীয় কারণ

সাধারণ ভারতবাসী খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মমূলক কার্যকলাপে রুষ্ট ছিলেন । এ ছাড়াও সরকারি তরফে মন্দির , মসজিদের খাসজমির ওপর কর আরােপ করাকে ভারতবাসী ভালােভাবে মেনে নিতে পারেনি । সরকার কর্তৃক ২১নং রেগুলেশন আইন পাসের দ্বারা ধর্মান্তরিত ভারতীয়দের সম্পত্তির উত্তরাধিকার স্বীকৃত হলে সাধারণ ভারতবাসী ব্রিটিশ প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ হয় ।

μάχη της Αλαμάνας
মহাবিদ্রোহ

খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার

একদিকে খ্রিস্টান পাদরিরা যেমন প্রকাশ্যে হিন্দু – মুসলিম ধর্ম সম্পর্কে বিষােদ্গার করে সেগুলির অসারতা প্রমাণের চেষ্টা করত , অন্যদিকে তেমনি খ্রিস্টধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করতে তারা বিদ্যালয় , হাঁট বাজার , হাসপাতাল , এমনকি জেলখানায় ভারতীয় কয়েদিদের কাছেও অবাধে যাতায়াত করত । শুধু তাই নয় , দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তারা দরিদ্র অনাথ হিন্দু – মুসলমানদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করতে শুরু করে । লর্ড মেকলে তাঁর মাকে এক পত্রে লিখেছিলেন — আগামী ত্রিশ বছরের মধ্যে একজন পৌত্তলিকও বাংলা দেশে থাকবে না ।

রক্ষণশীলতায় আঘাত

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন , গঙ্গার জলে সেচের ব্যবস্থা , সতীদাহ ও সাগরে সন্তানবিসর্জন নিবারণ , বিধবা বিবাহ আইন পাস , রেলভ্রমণে জাতপাত প্রথার অবসান , টেলিগ্রাফ – টেলিফোনের প্রচলন প্রভৃতি প্রগতিশীল কার্যকলাপ রক্ষণশীল ভারতবাসী মেনে নেয়নি । ধর্মান্তরিত হিন্দুদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাদের মনে ধর্মনাশের আশঙ্কাকে ঘনীভূত করে তােলে । ভারতবাসী মনে করে ব্রিটিশ তাদের চিরাচরিত প্রথাগুলির ওপর হস্তক্ষেপ করে তাদের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করছে । শুধু তাই নয় সেনাবাহিনীতে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রচার , পাগড়ি পরা বা দাড়ি রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে উচ্চবর্ণজাত সিপাহিরা ক্ষিপ্ত হয় ।

ধর্মীয় কর আরোপ

বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরােপ ভারতবাসীর ধর্মবিশ্বাসের ওপর প্রচন্ড আঘাত হানে । কারণ , বিভিন্ন ধর্মীয় ও দাতব্য সংস্থাগুলির অধীনস্থ জমিগুলি এতদিন ছিল নিষ্কর । মন্দির ও মসজিদের এসব জমির ওপর নির্ভরশীল ছিল প্রচুর ব্রাক্ষ্মণ ও মুসলিম পরিবার । তারা একসঙ্গে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ।

ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রভাব

ওয়াহাবি আন্দোলন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তীব্র জেহাদরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল । এই আন্দোলনের নেতৃবর্গ ঘােষণা করেছিলেন , সমস্ত মুসলমানের কর্তব্য হল এক ধর্মযুদ্ধ শুরু করা , না হলে তাদের পরিবার এবং সন্তানদের সর্বনাশ হবে এবং তারা ধ্বংস হয়ে যাবে । ওয়াহাবি আন্দোলনের সমর্থকরা স্বাভাবিকভাবেই এই বিদ্রোহে যােগ দিয়েছিল ।

এনফিল্ড রাইফেল

সিপাহি বিদ্রোহে সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলেছিল ধর্মীয় কারণের ভিন্ন দিকগুলি । এই কারণগুলির মধ্যে প্রত্যক্ষ কারণ ছিল এনফিল্ড রাইফেলে ব্যবহুত কার্তুজ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় পুরাতন ‘ ব্রাউন বেস ‘ নামে গাদা বন্দুকের পরিবর্তে এখন থেকে সিপাহিদের এনফিল্ড রাইফেল ব্যবহার করতে হবে । এনফিল্ড রাইফেলের টোটার খােলসটি গােরু ও শুয়ােরের চর্বি দ্বারা তৈরি হত । রাইফেলের টোটার খােলসটি দাঁত দিয়ে ছিড়তে হত । এতে ভারতীয় মুসলমান ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের সিপাহিরাই ধর্মনাশের আশঙ্কায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । এ ছাড়াও সিপাহিদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ময়দা বা ছাতুতে সকৌশলে গােরু বা শূকরের হাড়ের গুঁড়াে মিশিয়ে ধর্মনাশের চেষ্টা করে ব্রিটিশ ।

One thought on “সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের ধর্মীয় কারণ

  • Falguni Mazumder

    Good article

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!