ইতিহাস

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ

Contents

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ

লর্ড ক্যানিং এদেশের বড়ােলাট হয়ে আসার ( ১৮৫৬ খ্রি . ) এক বছর পরেই সিপাহি বিদ্রোহ ঘটে । ব্রিটিশের সামরিক শক্তির কাছে মাথা নত করলেও দেশীয় রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ দেশবাসীর কেউই ব্রিটিশ শাসন মেনে নিতে পারেনি । ব্রিটিশ ভারতবাসীর রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে তাদের বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য করে ।

Remembering the 1857 Mutiny When Hindus and Muslims live with their hands 1
মহাবিদ্রোহ

স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়ােগ

লর্ড ডালহৌসি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে স্বত্ববিলােপ নীতি ( দত্তকপুত্রের উত্তরাধিকারের দাবি অগ্রাহ্য ) প্রয়ােগ করে ঝাঁসি ( ১৮৫৩ খ্রি. ) , সাতারা ( ১৮৪৮ খ্রি. ) , নাগপুর , সম্বলপুর ( ১৮৫০ খ্রি. ) , উদয়পুর ( ১৮৫২ খ্রি. ) সহ বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য গ্রাস করলে ওইসব রাজ্য ব্রিটিশের বিরুদ্ধে চলে যায় । এই নীতির প্রয়ােগ ঘটিয়ে ব্রিটিশ পেশােয়া দ্বিতীয় বাজিরাও – এর দত্তকপুত্র নানাসাহেবকে তাঁর প্রাপ্য বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করে । ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও ও নাগপুরের রাজা ভোঁসলে অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাঁদের রাজ্য গ্রাস করা হয়েছিল । দেশীয় রাজ্য দখলনীতির সমালােচনা করে হেনরি রাসেল  বলেছেন — আমি মনে করি ডালহৌসির দেশীয় রাজ্য দখলনীতি আমাদেরকে কফিনে ঢুকিয়ে দিয়েছে ।

বিটিশের লণ্ঠন ও আগ্রাসী নীতি

ব্রিটিশ নির্লজ্জভাবে কুশাসনের অজুহাত এনে অযােধ্যা ও নাগপুরের রাজপ্রাসাদ লুণ্ঠন করেছিল । ব্রিটিশ বাহিনী অযােধ্যায় নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ও তাঁর আত্মীয়দের রাজপ্রাসাদ থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং নাগপুরের ভোঁসলে রাজপরিবারের অবসান ঘটিয়ে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ লুণ্ঠন করে । ব্রিটিশ চিফ কমিশনার কোভারলি জ্যাকসন নবাবের আমলাদের বিভিন্ন ভাতা বন্ধ করে দেন । নবাবের প্রশাসন ব্যবস্থা ও নবাবের সেনাবাহিনীকে ভেঙে দেওয়া হয় । বিহারের জগদীশপুর অঞ্চলের জমিদার কুঁয়র সিংহের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ব্রিটিশ রাজস্ব বিভাগ । এ ছাড়াও ব্রিটিশ মােগল বাদশা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে তাঁর পূর্বপুরুষদের আবাসস্থল লালকেল্লা থেকে সরিয়ে অন্যত্র বসবাসের ব্যবস্থা করে । শুধু তাই নয় , লর্ড ক্যানিং এক ঘােষণায় বলেন — দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-এর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরগণ আর বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করতে পারবেন না । ব্রিটিশের এই লুণ্ঠন ও আগ্রাসী নীতিতে ক্ষুদ্ধ হয় হিন্দু – মুসলমান উভয়শ্রেণির ভারতবাসী ।

উপজাতিগােষ্ঠীর ক্ষোভ

ভারতে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হওয়ার পর কোল , ভিল , সাঁওতাল , মুন্ডা , মথুরার জাঠ , দিল্লির ফরাজি , ওড়িশার খন্দ , সিংভূমের কোলারি , মানভূমের ভূমজি এসব উপজাতিগােষ্ঠীর লােকদের ওপর ব্রিটিশের অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু হলে তাদের নিজস্ব জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটে । এইসব সম্প্রদায় আলাদা আলাদাভাবে নিজেদের মতাে করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তীব্র জেহাদ ঘােষণা করে ।

ব্রিটিশ-আশ্রিত রাজ্যগুলির বিদ্রোহ

ব্রিটিশ-আশ্রিত রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের সেনাদের ভাতা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তারা ক্ষিপ্ত হয় ( ১৮০৪ খ্রি. ) । ত্রিবাঙ্কুরের দেওয়ান ভেপু তাম্পি কালিকটের রাজাকে ব্রিটিশবিরােধী হয়ে উঠতে মদত দেন । আশ্রিত সামন্তশ্রেণিও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ উগরে দেওয়ার সুযােগ খোঁজে ।

ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের অত্যাচার

উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মচারীরা সবক্ষেত্রেই ভারতীয়দের নীচু নজরে দেখত এবং সুযােগ পেলেই অত্যাচার করত । শেষ মােগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠানাে হয় এবং সেনা অফিসার হাডসনের নির্দেশে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের পুত্র ও পৌত্রদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় । ব্রিটিশের এসব আচরণ ভারতবাসীর ব্রিটিশের প্রতি আনুগত্য বিনষ্ট করে । তাই স্কটিশ মিশনারি রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফ  বলেছেন — ইংরেজরাজের প্রতি ভারতীয়দের সামান্যতম আনুগত্য ছিল না ।

উপসংহার

ব্রিটিশ রাজত্বের একশাে বছরের মাথায় যে মহাবিদ্রোহ ঘটেছিল তার পেছনে এইসব রাজনৈতিক কারণগুলি কাজ করেছিল । ক্ষুদ্ধ সিপাহিরা বারুদের স্তূপে অগ্নিসংযােগ করেছিল মাত্র । ড. এ. আর. দেশাই-এর মতে – ১৮৫৭-এর বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনে নির্যাতিত বিভিন্ন শ্রেণির ভারতবাসীর সম্মিলিত অসন্তোষের ফল ।

2 thoughts on “সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ

  • Sir pls send full question and answer

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!