ইতিহাস

রংপুর বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা কর

Contents

রংপুর বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা কর

১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে রংপুর পরগনা জুড়ে ইজারাদার দেবী সিংহের বিরুদ্ধে কৃষক সম্প্রদায় যে বিদ্রোহ ঘােষণা করেছিল তা রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত । এই বিদ্রোহ ছিল কোম্পানি তাঁবেদার ইজারাদারদের কর সংগ্রহের বিরুদ্ধে এক তীব্র জেহাদ । নরহরি কবিরাজের  মতে , “ ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ একটি সফল কৃষক অভ্যুত্থান ছিল । ”

borga munda 1068x559 1
রংপুর বিদ্রোহ

দেবী সিংহের দায়িত্ব

পশ্চিম ভারতের পানিপথের কাছে এক গ্রামের বৈশ্য সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ব্যবসায়ী ছিলেন দেবী সিংহ । সেসময়কার বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁকে দিনাজপুরের নাবালক রাজা রাধানাথ সিংহের দেওয়ান পদ দেন । দেবী সিংহ বাৎসরিক ১৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের শর্তে দিনাজপুর , রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনার ইজারার দায়িত্ব নেন । কিন্তু ৬ লক্ষ টাকার বেশি রাজস্ব না ওঠায় তিনি তার সহকারী হরেরামের সাহায্যে কৃষকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন । হেস্টিংস এসব জানতে পেরে তাকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু হেস্টিংসকে প্রচুর অর্থের টোপ দিয়ে দেবী সিংহ প্রাদেশিক রেভেনিউ বাের্ডের সভাপতি হন । এবার তিনি স্বনামে ও বেনামে বহু ইজারা নিলামের দ্বারা করায়ত্ত করেন । তারপর তিনি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে, মাঠের ধান কেটে নিয়ে কৃষকদের সর্বস্বান্ত করেন ।

রংপুর বিদ্রোহের কারণ

রংপুর বিদ্রোহের মূলে কতকগুলি কারণ ছিল 一

ব্রিটিশের অত্যাচার : 

উপযুক্ত সময়ে রাজস্ব দিতে না পারায় ব্রিটিশ – কৃষক , সাধারণ প্রজা ও জমিদারদের ওপরও অকথ্য অত্যাচার শুরু করে ।

জমিদারি বাজেয়াপ্তকরণ : 

খাজনা দিতে অক্ষম হওয়ায় মন্থনার জমিদার জয়দুর্গা চৌধুরানি , বামনডাঙার জমিদার জগদীশ্বরী চৌধুরানি , টেপাগ্রামের জমিদারসহ বেশকিছু জমিদারের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হয় ।

মহাজনদের শােষণ : 

মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে বা ঘরবাড়ির দলিল বন্ধক রেখে রাজস্ব দেওয়ার চেষ্টা করত কৃষক পরিবারগুলি । যার পরিণামে তারা সর্বস্বান্ত হত ।

রাজস্বপ্রদানের কঠোরতা : 

প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটলেও কৃষক – প্রজাদের রাজত্ব দিতে হত ।

বিপ্লবীদের স্বাধীন সরকার গঠন : 

দেবী সিংহের অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কৃষকরা প্রথমে রংপুরের কালেক্টরের কাছে আবেদন জানায় । কিন্তু তাতে কোনাে ফল না হওয়ায় কৃষকরা দিরজি নারায়ণনুরুলউদ্দিনের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘােষণা করে । নুরুলউদ্দিনের নেতৃত্বে ( ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ) রংপুর এলাকায় ফতেপুর , ডিমলা , শাকিনা , কাজিরহাট , চাকলা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা টেপাগ্ৰামে মিলিত হন ও একটি স্বাধীন স্থানীয় সরকার গড়ে তােলেন যার স্থায়িত্ব ছিল একমাস ।

রংপুর বিদ্রোহের অবসান 

হাজার হাজার বিদ্রোহী কৃষক দেবী সিংহের প্রাসাদে আক্রমণ চালায় ও ডিমলার জমিদার গৌড়মোহন চক্রবর্তীকে হত্যা করে । দেবী সিংহ ইংরেজদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে রংপুরের কালেক্টার গডল্যান্ড সেনাপতি ম্যাকডােনাল্ডের নেতৃত্বে এক বিশাল সেনাবাহিনী পাঠান । বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইংরেজ সেনাদের মােগালহাটির যুদ্ধ বাঁধে । নুরুলউদ্দিন আহত হলে তাকে বন্দি করা হয় । নুরুলউদ্দিনের সহকারী দয়ারাম শীলসহ উভয়পক্ষে অনেকেই নিহত হন । অবশেষে রংপুর বিদ্রোহের অবসান ঘটে ( ১৭৮৩ খ্রি. ২২ ফেব্রুয়ারি ) ।

রংপুর বিদ্রোহের তাৎপর্য

এই বিদ্রোহ একটি আঞ্চলিক বিদ্ৰোহরূপে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত এটি ব্রিটিশবিরােধী সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল । ইজারাদার প্রথার পরিণতি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কোম্পানি এই বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছিল । এই বিদ্রোহ একাধারে জমিদার , ইজারাদার , তহসিলদারদের শোষণ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র জেহাদরূপে আত্মপ্রকাশ করে । ঐতিহাসিক ড. নরহরি কবিরাজের  মতে , এই বিদ্রোহ ছিল হিন্দু – মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কৃষকদের মিলিত বিদ্রোহ (‘ The revolt was that it was through out marked by a rare Combination of Hindus and Muslims ’) ।

One thought on “রংপুর বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা কর

  • Anonymous

    বাহত বাড়িয়া

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!