রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কি আলোচনা কর
Contents
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কি আলোচনা কর
অষ্টাদশ শতকের শেষে কোম্পানি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি বাদে দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য জায়গায় স্যার টমাস মনরাের নেতৃত্বে এবং বােম্বাই প্রদেশে এলফিনস্টোনের নেতৃত্বে এক ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ( ১৮২০ খ্রি . ) , যা রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিতি লাভ করে । মাদ্রাজ বাদ দিয়ে মাদুরাই , কানাড়া , কুরনুল , রায়পুর , কোয়েম্বাটুর , মালাবার , চিংলিপুট ইত্যাদি অঞ্চলে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত প্রচলিত হয় । অধ্যাপক বিপান চন্দ্রের মতে , রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে ‘ চাষিই জমির মালিক ‘ এই নীতি অবশ্য কার্য হয়নি ।

রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের পটভূমি
দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনে কিছু অসুবিধা থাকায় এই ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় । যথা —
- দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারশ্রেণির অস্তিত্ব ততটা ব্যাপক ছিল না ।
- বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জমিদারের অস্তিত্ব থাকলেও তারা সরাসরি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল ।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের শর্তাবলি
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি শর্ত অনুসারে 一
- নির্দিষ্ট রাজস্বের বিনিময়ে প্রতিটি কৃষকের সঙ্গে সরকারের সরাসরি জমি বন্দোবস্ত করা হয় এবং কৃষকেরা জমির ভােগদখলি স্বত্ব লাভ করে ।
- ২০ – ৩২ বছর অন্তর আলােচনার মাধ্যমে ভূমিরাজস্বের পরিমাণ বাড়ানাে হবে বলে ঠিক হয় ।
- মােট উৎপাদিত ফসলের শতকরা ৪৫ – ৫৫ ভাগ রাজস্ব রূপে নির্ধারিত হয় ।
- জমি জরিপের মাধ্যমে এবং উৎপাদনের মাপকাঠিতে জমিকে ৯ ভাগে ভাগ করা হয় ।
- কৃষকদের জমি ভােগ করার স্বত্ব থাকলেও জমির মালিকানা স্বত্ব ছিল না ।
- বন্যা বা খরার জন্য শস্যহানি হলেও প্রজারা খাজনা দিতে বাধ্য থাকবে বলে এই ব্যবস্থায় ঘােষণা করা হয় ।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলাফল
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের কয়েকটি সুফল ছিল –
- এই বন্দোবস্তে সরকারের সঙ্গে রায়তদের সরাসরি সম্পর্ক গড়ে ওঠায় প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস পায় ও জমি – সংক্রান্ত ভুল বােঝাবুঝির অবসান ঘটে ।
- এই ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভােগীর কোনাে অস্তিত্ব না থাকায় কৃষকরা অন্যায় জোরজুলুম ও অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায় ।
- জমিদাররা নিজেদের খেয়ালখুশি মতাে কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত না । ফলে কৃষকরা জীবিকার জন্য জমির ওপর নির্ভর করতে পারত ।
- এই বন্দোবস্তে বেশির ভাগ রায়তেরই ভূমিদাস রাখার ক্ষমতা না থাকায় ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটে ।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের কুফল —
- কৃষকরা সরাসরি কোম্পানির কর্মচারীদের হাতে শােষিত ও অত্যাচারিত হত ।
- এই ব্যবস্থাতে জমির ওপর কৃষকের মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় কোম্পানি ভাড়াটে হিসেবে কৃষক – প্রজাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করত ।
- এই বন্দোবস্তে খাজনার হার অত্যন্ত বেশি হওয়ায় কোম্পানিকে খাজনা দেওয়ার পর কৃষকের হাতে অবশিষ্ট যা থাকত তা দিয়ে সারাবছর জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন ছিল ।
- বন্যা , খরার মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্যহানি ঘটলেও রায়তদের খাজনা দিতে হত । ফলে তারা জমিরক্ষার তাগিদে সাউকার বা মহাজনদের কাছে ঋণ নিয়ে দেনায় আকণ্ঠ ডুবে থাকত । রায়তওয়ারি ব্যবস্থার কুফল প্রসঙ্গে রাজা রামমােহন রায় লেখেন — রায়তওয়ারি ব্যবস্থা শুধু জনসাধারণের দুঃখ বাড়ায়নি , দেশের সম্পদও শুষে নিয়েছে ।
উপসংহার
রায়তদের কেন্দ্র করেই এই বন্দোবস্ত গড়ে ওঠে । রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কৃষকদের হাতে জমির ওপর মালিকানা স্বত্ব দেওয়া হলেও চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ন্যস্ত ছিল সরকারেরই হাতে ।
Khub sundor laglo not ta pora sir