লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর সংস্কার গুলি আলোচনা করো
Contents
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর সংস্কার গুলি আলোচনা করো
ইংল্যান্ডের হুইগ বা উদারপন্থী দলের সমর্থক উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ভারতে বড়োেলাট পদে নিযুক্ত হয়ে ( ১৮২০ খ্রি . ) অর্থ , শাসন , বিচার , সমাজ , শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারসাধনের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন । সংস্কারক বেন্টিঙ্কের প্রশংসা করে লর্ড মেকলে বলেছেন — “ বেন্টিঙ্ক মুহুর্তের জন্যও তাঁর এই কর্তব্য ভুলে যাননি যে , শাসিত প্রজাদের মঙ্গল সাধন করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত । ”

বেন্টিঙ্ক এর বিভিন্ন সংস্কার
বেন্টিঙ্ক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সংস্কারগুলি করেন , তার অন্যতম ছিল 一
- রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যয়সংকোচ নীতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে মজবুত করা ।
- কোম্পানির সেনাদলের বাড়তি ( দ্বিগুণ ) ভাতা বা বাট্টা প্রথার বিলােপসাধন ।
- সামরিক কর্মচারীদের ভাতাসহ অন্যান্য সুযােগসুবিধা হ্রাস ।
- মােগল আমলের জমিদারদের প্রদত্ত নিষ্কর জমিগুলিতে কর ধার্য করা ।
- বেন্টিঙ্কের নির্দেশ মেনে উত্তরপ্রদেশের ভূমিরাজস্ব সচিব রবার্ট মার্টিন বার্ডের দ্বারা তিরিশ বছরের মেয়াদে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মহলওয়ারি ভূমি বন্দোবস্তের প্রয়ােগ ।
শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে বেন্টিঙ্ক যে সংস্কারগুলি করেন , তার অন্যতম ছিল —
- লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত প্রশাসনিক উচ্চ পদগুলিতে শুধুমাত্র ইউরােপীয়দের নিয়ােগের প্রথা বাতিল করে দিয়ে কম বেতনের বিনিময়ে উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়ােগ শুরু করেন ।
- উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে সঠিকভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফে গঠিত হয় ‘ বাের্ড অব রেভিনিউ ‘ ।
- বেন্টিঙ্ক নিজে গর্ভনর জেনারেল পদ ছাড়া সেনাবিভাগের সর্বাধিনায়কের পদ গ্রহণ করেন ।
- জেলা কালেক্টর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পদকে একসঙ্গে যােগ করে একটিমাত্র পদে রূপান্তরিত করেন ।
- বড়ােলাটের কার্যপরিষদে উকিলের সংখ্যা বাড়ানাে হয় ।
বিচারবিভাগের ক্ষেত্রে বেন্টিঙ্ক যে সংস্কারগুলি করেন , তার অন্যতম ছিল 一
- বিচারের কাজকে দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত ভ্রাম্যমাণ ফৌজদারি আদালত ও প্রাদেশিক আপিল আদালতের বিলােপ ঘটান এবং গ্রামীণ আদালতগুলিকে নিয়মিত আদালতের মর্যাদা দেন ।
- জেলা জজদের নাম পালটে রাখা হয় সেশন জজ এবং এদের হাতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
- দেওয়ানি মামলা পরিচালনার কাজে ভারতীয় বিচারক নিয়ােগ করা হয় এবং তাঁদের পদমর্যাদা ও বেতন বাড়ানাে হয় ।
- এলাহাবাদে একটি সর্বোচ্চ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
- নিম্ন আদালতে ফারসির পরিবর্তে স্থানীয় ভাষা এবং উচ্চ আদালতে ইংরেজি ভাষায় আদালতের কাজ পরিচালনার নিয়ম চালু হয় ।
সমাজ সংস্কার
- ভারতের ইতিহাস সমাজসংস্কারক রূপেই বেন্টিঙ্ককে সবচেয়ে বেশি মনে রাখবে , কারণ 一
- রামমােহনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সতীদাহ – বিরােধী আন্দোলনে সাড়া দিয়ে বেন্টিঙ্ক সতীদাহ নিরােধ আইন রেগুলেশন – XVII ) পাস করান ( ১৮২৯ খ্রি . ) ।
- বেন্টিঙ্কের নির্দেশ মেনে সেনাপতি স্লীম্যান দিল্লি , হায়দ্রাবাদ ,অযােধ্যা , রাজপুতানা , বুন্দেলখণ্ডে অবস্থানকারী প্রায় ১৫০০ জন ঠগি দস্যুদের দমন করেন ।
- কাথিয়াবাড় ও রাজপুতানায় বসবাসকারী রাজপুতদের মধ্যে প্রচলিত নবজাত কন্যাসন্তান হত্যার কুপ্রথাকে তিনি নিষিদ্ধ করেন ।
- ওড়িশাতে প্রচলিত বন্যদেবদেবীর পূজায় যজ্ঞের সময় নরবলি প্রথার তিনি বিলােপ ঘটান ।
শিক্ষা সংস্কার
শিক্ষাক্ষেত্রে বেন্টিঙ্ক উদারীকরণ নীতি গ্রহণ করেন —
- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট অনুযায়ী বাৎসরিক ১ লক্ষ টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত নেন ।
- ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেশন আইন জারির মাধ্যমে বেন্টিঙ্ক বলেন — ইংরেজি ভাষাই সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পাবে ।
- তিনি ঘােষণা করেন শিক্ষাখাতে বরাদ্দ সরকারি অর্থ এখন থেকে ইংরেজি শিক্ষাতেই খরচ করা হবে ।
মূল্যায়ন
সমাজ সংস্কারক হিসেবে ভারতবাসীর কল্যাণ সাধনের জন্য বেন্টিঙ্ক প্রশংসিত হলেও ১৮৩৩ – এর চার্টার আইনের পর ব্রিটিশ চা – বাগিচা মালিকদের ও নীলকরদের ভারতে অনুপ্রবেশের সুযােগ করে দিয়ে তিনি সমালােচিতও হয়েছে । যাইহােক হিতবাদী শাসক বা সংস্কারধর্মী প্রশাসক হিসেবেই তিনি ভারত ইতিহাসে বিখ্যাত রয়েছেন । তাই বেন্টিঙ্কের জীবনীকার জন রসেল্লি ( John Rosselli ) সমাজসংস্কারক বেন্টিঙ্কের মূল্যায়নে বলেছেন — “ বেন্টিঙ্ক ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন , চেয়েছিলেন আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার বিকাশ ঘটাতে । ”
খুব ভাল
আমি দুৱা কৰি আল্লাহ যেনো আপনাকে আর বালো কৰে লিখাৰ জন্যে তৌফিক দান করেন আমিন।
কপি করত চাই
মাশাল্লাহ বেশ ভাল হয়েছে অারও তথ্য বহুল অালোচনা করার জন্য অাহ্বান রইল।
Thanks