ইতিহাস

আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

Contents

আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

1453 খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিনেতা দ্বিতীয় মহম্মদ পূর্ব-রোমান সম্রাট নবম কনস্ট্যানটাইনকে পরাজিত ও হত্যা করে রাজধানী কনস্টান্টিনোপল দখল করে নেন। এই ঐতিহাসিক সময়কে মধ্যযুগের সমাপ্তি এবং আধুনিক যুগের সূচনা পর্ব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এরপর থেকে ইউরোপে কৃষির পরিবর্তে শিল্প ও বানিজ্য নির্ভর এক নতুন অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে। এই অর্থেই 1453 খ্রিস্টাব্দকে আধুনিক যুগের সূচনা লগ্ন হিসাবে ধরা হয়।

world history 1

আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য

মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের উত্তরন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।

  1. ভূমিকেন্দ্রিক সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অবসান ঘটে এবং শিল্প-বাণিজ্যনির্ভর এক নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। মধ্যযুগীয় ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটে এবং মুক্ত ও স্বাধীন কৃষক সমাজের উদ্ভব ঘটে।
  2. একদিকে সামন্ত প্রভুর কর্তৃত্ব হ্রাস পায় অপরদিকে ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশে শক্তিশালী রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।
  3. কৃষিক্ষেত্রে উন্নত যন্ত্রপাতি ও কৃত্রিম সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।
  4. কৃষি-ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে। নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।
  5. কৃষি-শিল্পের উন্নতির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতে থাকে। এর ফলে নতুন নতুন শহরের উদ্ভব ঘটে।
  6. শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বিকাশ লাভ করে।
  7. অর্থনৈতিক তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে সমাজে দুটি  নতুন শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে —- পুঁজিপতি মালিক শ্রেণী এবং দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণী।
  8. আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ধনতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম।
  9. মধ্যযুগীয় স্থিতিশীল ও অসার ধর্মতত্ত্ব বর্জিত হয় এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পথ প্রশস্ত হয়।

আধুনিক যুগে বাণিজ্য ও শিল্প-অর্থনীতির বিকাশ

মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো সামন্ততন্ত্র। ‘সামন্ত‘ শব্দটির অর্থ হলো সম‌ (সংলগ্ন) অর্থাৎ স্ববিষয়ান্তর ভূমির অধিপতি। 476 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর কৃষিকেন্দ্রিক উৎপাদন রীতির ওপর ভিত্তি করে ইউরোপে যে সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে উঠেছিল তাকে সামন্ততন্ত্র (Feudalism) বলা হয়। প্রধানত তিনটি উপাদান নিয়ে সামন্ততন্ত্র গড়ে উঠেছিল 一

  1. সম্পদের মূল উৎস ছিল কৃষি; 
  2. কৃষিক্ষেত্রে মালিক ছিল জমিদার বা সামন্তপ্রভু; এবং 
  3. কৃষি ক্ষেত্রে কাজে নিযুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিদাস বা Serf । 

পঞ্চম শতাব্দী থেকে প্রায় হাজার বছর ধরে সামন্তপ্রভুরা উত্তর গোলার্ধের তিন-চতুর্থাংশ অংশজুড়ে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখেছিল। যা আধুনিক অর্থনৈতিক বিকাশের প্রধান বাধা । শীতের পর যেমন বসন্তের আগমন তেমনি নানা ঘটনাবলীর প্রভাবে মধ্যযুগের অবসান ও আধুনিক যুগের উত্তরণ ঘটেছিল।

আধুনিক যুগে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়

মধ্যযুগে সামন্ততন্ত্র ছিল ইউরোপীয় অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক। কিছু নানা ঘটনাবলীর প্রভাবে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় দেখা যায়। যেমন 一

  1. একাদশ-দ্বাদশ শতকে ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেডে অংশগ্রহণ এবং চতুর্দশ শতকে ইংল্যান্ডের ‘ব্ল‍্যাক ডেথ‘ নামক মহামারীর ফলে বহু সামন্তপ্রভু ও ভূমিদাসের মৃত্যু হয়।
  2. বারুদের আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন প্রভৃতি দেশে শক্তিশালী রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটলে সামন্ততন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে।
  3. সামন্ত প্রভুদের নির্মম অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে ওয়াট টাইলার, জন বল প্রমুখের নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
  4. ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন নগরের উত্থান হয়। পুঁজিপতি শ্রেণীর উদ্ভবের ফলে সামন্ততন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নতুন অর্থনীতির বিকাশ লাভ করে যা আধুনিক যুগের ঊষালগ্নকে সূচিত করে।

আধুনিক যুগে কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন

মধ্যযুগে কৃষি ব্যবস্থা ছিল গতানুগতিক। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ধর্মযুদ্ধের ফলে খাদ্যশস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এজন্য কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

  1. অতিরিক্ত চাহিদা মেটাবার জন্য ত্রয়োদশ শতক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বনভূমি উচ্ছেদ করে সেগুলিকে চাষযোগ্য জমিতে রূপান্তর করা হয়।
  2. হল‍্যান্ড প্রভৃতি দেশে সমুদ্রে বাঁধ বা ডাইক দিয়ে বেঁধে সমুদ্র-তলার জলাভূমিকে উদ্ধার করা হয়।
  3. অধিক পরিমাণে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ছোট ছোট খামারগুলিকে ভেঙে ভূস্বামীরা বড় বড় খামার গড়ে তোলেন। এই সকল বড় বড় খামারে স্বল্প কৃষক নিযুক্ত করে কৃষি-উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
  4. কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও কৃত্রিম সার প্রয়োগের ফলে কৃষি-উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
  5. ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষত স্পেনে বায়ুচালিত চাকার সাহায্যে নদী থেকে জল তুলে জলসেচের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
  6. কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ঋতুভিত্তিক কৃষি-পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন নতুন ফসলের চাষ শুরু হয়। এভাবে সবুজ বিপ্লব ঘটে।
  7. শিল্পের উন্নতি হওয়ায় শিল্পপণ্য উপযোগী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষকদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না ঘটলেও কৃষি-উৎপাদন ব্যবস্থার মৌলিক রূপান্তর ঘটে।

আধুনিক যুগে শিল্পের উন্নয়ন

মধ্যযুগের সামন্ত সমাজের হস্তশিল্পের বিশেষ স্থান ছিল। শিল্পী ও কারিগররা সামন্ত প্রভুদের নির্দেশমতো বিলাস সামগ্রী তৈরী করত। কিন্তু মধ্যযুগের শেষের দিকে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির দরুন পণ্য সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি যেমন বায়ুকল (Wind-mill), জলচক্রের (Water-wheel) আবিষ্কার ও কারিগরি শিক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটায়। খনি থেকে লোহার পিণ্ড তুলে কয়লার চুল্লিতে তা গলিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি হতে থাকে। ক্রমে ক্রমে তামা, টিন ও অন্যান্য ধাতুর আবিষ্কার শিল্প-উৎপাদনকে আরও গতিশীল করে তোলে। শিল্পে উপযোগী বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদন, যোগান সর্বোপরি চাহিদার জন্য শিল্প-উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে ব্যাংক-ব্যবস্থার পত্তনের ফলে শিল্প-স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদি ঋণেদানের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে শিল্প ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি দেখা দেয়।

আধুনিক যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার

ধর্মযুদ্ধের সময় থেকে ইউরোপে এশিয়ার পণ্যদ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এরফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বন্দর-শহর গড়ে ওঠে। ইতালির জেনোয়া, ভেনিস প্রভৃতি বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে উদ্ভব ঘটে পুঁজিপতি বণিকশ্রেণীর।

আধুনিক যুগে ধনতন্ত্রের উত্থান

আধুনিক যুগের শিল্প-বাণিজ্যের অন্যতম ফলশ্রুতি হলো ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশ।

কৃষিক্ষেত্রে পুঁজিবাদী অর্থনীতি :

সামন্ততন্ত্রের ভাঙনের পর  থেকে কৃষি-উৎপাদন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। ছোট ছোট খামারগুলির ভূস্বামীরা গড়ে তোলে বড় বড় খামার ও বাগিচা। এই সকল কৃষি জমিতে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি-উৎপাদন ও মেষপালন করা হতে থাকে। এভাবে কৃষিক্ষেত্রে পুঁজিবাদী অর্থনীতির আবির্ভাব ঘটে।

শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ :

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে গড়ে ওঠে বড় বড় কলকারখানা। কিন্তু বড় বড় শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন হয় পুঁজির। বিভিন্ন দেশের ভূস্বামীরা তাদের উদ্বৃত্ত পুঁজি শিল্পে বিনিয়োগ করে। এভাবে পুঁজিপতি শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে।

বণিক শ্রেণীর মুনাফা বৃদ্ধি :

শিল্প-উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হতে থাকে। এর ফলে বণিক গোষ্ঠীর হাতে প্রচুর মুনাফা জমা হতে থাকে। উদ্ভব হয় বুর্জোয়া শ্রেণীর। এই বুর্জোয়ারা প্রতিষ্ঠা করে নতুন ধনতান্ত্রিক সমাজ।

ধনতন্ত্রের যন্ত্রী সাধারণ মানুষ :

কলকারখানা গড়ে ওঠায় গ্রামের বঞ্চিত কৃষক কাজের আশায় শহরে এসে ভিড় করে। এরই পূর্ণ সুযোগ গ্রহন করে মালিক শ্রেণি। সামান্য মজুরির বিনিময়ে এদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করে প্রচুর মুনাফা লুঠতে থাকে। এভাবেই ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বিকাশ লাভ করে, যা আধুনিক যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

আধুনিক যুগে যুক্তিবাদ উদারনৈতিক গণতন্ত্র

মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরনকালে ইউরোপে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজব্যবস্থারও রূপান্তর ঘটে। এই পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থার অন্যতম ফলশ্রুতি হল যুক্তিবাদী ও উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বিকাশ।

স্কুলম‍্যানদের প্রভাব :

একাদশ-দ্বাদশ শতকে ইউরোপের ‘স্কুলম‍্যান’ নামে একদল পণ্ডিতের আবির্ভাব ঘটে যারা ‘ধর্মতত্ত্ব’ ও সামাজিক রীতিনীতিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করার প্রথম চেষ্টা চালান। পঞ্চদশ শতকে ইতালিতে আগত মনীষীদের সাহচর্যে এই যুক্তিশীল চেতনা আরো দৃঢ় ওঠে।

স্বাধীন কৃষক ও বণিকশ্রেণীর উদ্ভব :

আধুনিক কৃষি ও শিল্প ব্যবস্থার বিকাশের ফলে স্বাধীন কৃষক ও বণিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এরা মধ্যযুগীয় ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত স্বাধীন জীবনে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে।

কনস্টান্টিনোপলের পতন :

1453 খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর সেখানকার জ্ঞানীগুণী মনীষীগণ ইতালির বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নেয়। ইতালির মুক্ত পরিবেশে তারা প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চা শুরু করে। এর ফলে উদার ও যুক্তিশীল চেতনার জন্ম হয়।

সংস্কার আন্দোলন :

সমসাময়িক নানান ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের ফলে মধ্যযুগীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের পরিবর্তে মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। এভাবে জন্ম হয় যুক্তিবাদ উদারনৈতিক গণতন্ত্র। যার ফলে ইউরোপ মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে।

আধুনিক যুগে সাম্যবাদী ভাবনা

আধুনিক ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আর্থ-সামাজিক বৈষম্য থেকে সাম্যবাদ বা সমাজতান্ত্রিক ধারণা প্রকাশ। ‘সাম্য’ কথার অর্থ ー উচ্চ-নীচ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার।

সাম্যবাদের উৎপত্তি :

শিল্পবিপ্লব প্রসূত কারখানা প্রথার দোষ-ত্রুটি দূর করার উদ্দেশ্যে এবং মালিক শ্রেণী ও শ্রমিকদের মধ্যে মুনাফা বন্টনব্যবস্থার অসাম‍্যের ফলে মালিকদের মুনাফা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের দারিদ্র্যের বৃদ্ধির কারণ দূর করতে সাম্যবাদের উৎপত্তি। এর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নায্য অধিকার লাভ।

সাম্যবাদের বিকাশ  :

অতি প্রাচীনকাল থেকে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য সাম্য চিন্তার আভাস পাওয়া যায়। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর ‘ রিপাবলিক ‘ বা টমাস মোর – এর ‘ ইউটোপিয়া ‘ গ্রন্থে এক কল্পনাশ্রয়ী সাম‍্য চিন্তার প্রতিফলন পাওয়া যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রবার্ট ওয়েন, সেন্ট সাইমন, চার্লস কুরিয়ার, লুই ব্ল্যাঙ্ক প্রমূখ দার্শনিকও ছিলেন কল্পনাশ্রয়ী সাম্যচিন্তার সমর্থক। আধুনিক যুগে জার্মান দার্শনিক কাল মার্কস তাঁর ‘ ডাস ক্যাপিটাল ‘ (1867 খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থে সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন। সে কারণে তাঁর মতবাদ ー ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ ‘ বা ‘ সাম্যবাদ ‘ বা ‘ কমিউনিজম ‘ নামে পরিচিত।

শ্রেণীসংগ্রাম  :

অর্থনৈতিক বৈষম্যের দরুন ধনতান্ত্রিক সমাজে দুটি শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। এরা হলো ー পুঁজিপতি মালিকশ্রেণী ও দরিদ্র নিমজ্জিত শ্রমিকশ্রেণী। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব অনিবার্য হলে শ্রমিক শ্রেণী সাম্যবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করে। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!