অমৃতসরের সন্ধি শর্তাবলী ও গুরুত্ব
Contents
অমৃতসরের সন্ধি শর্তাবলী ও গুরুত্ব
রণজিৎ সিংহ যখন একটার পর একটা শিখ মিস্লকে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে কর প্রদানে বাধ্য করছেন সেসময় ঝিন্দ ও পাতিয়ালার শিখ সর্দাররা ব্রিটিশ রেসিডেন্টের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বসে । এসময়ে ব্রিটিশ ও রণজিৎ সিংহ উভয়ে উভয়ের সাহায্যের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে । এই অবস্থায় বড়ােলাট লর্ড মিন্টো তার দূত চার্লস মেটাকাফকে লাহােরে রণজিতের দরবারে পাঠিয়ে অমৃতসরের সন্ধিতে ( ১৮০৯ খ্রি . , ২৫ এপ্রিল ) আবদ্ধ হন । মেটাকাফ দুটি উদ্দেশ্যপূরণে সচেষ্ট হন । প্রথমটি হল শতদ্রু নদীর দক্ষিণের মিস্লগুলির ওপর রণজিতের আধিপত্য আটকানাে । দ্বিতীয়টি ছিল রাশিয়ার জার আলেকজান্ডার ও ফরাসি সম্রাট নেপােলিয়ন টিলজিটের সন্ধিতে আবদ্ধ হলে ফ্রান্সের এই সময়ে ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা থাকায় ব্রিটিশ রণজিতের সাহায্য অনুভব করে ।

অমৃতসরের সন্ধির শর্তাবলি
অমৃতসরের সন্ধির শর্তগুলি ছিল এরকম — রণজিৎ সিংহের রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্তরূপে শতদ্রু নদীকে চিহ্নিত করা হয় । শতদ্রু নদীর পশ্চিমতীরের শিখ রাজ্যগুলির ওপর রণজিৎ সিংহের কর্তৃত্ব বজায় থাকবে । তবে , পূর্বতীরে অবস্থিত মিস্লগুলির ওপর থেকে রণজিৎ সিংহ তাঁর দাবি প্রত্যাহার করে নেবেন । চুক্তিতে আবদ্ধ দুপক্ষ স্থায়ী মৈত্রী বজায় রাখার জন্য একে অপরের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে । শতদ্রু নদীর উত্তর দিকে কোম্পানি কোনাে হস্তক্ষেপ করবে না বলে কথা দেয় । নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে রণজিৎ সিংহ উত্তর দিকে তাঁর সেনাবাহিনী মােতায়েন রাখতে পারবেন বলা হয় । শতদ্রুর দক্ষিণ তীরের শিখ মিস্লগুলির ওপর রণজিৎ সিংহ হস্তক্ষেপ করবেন না এবং তিনি এগুলির ওপর ইংরেজদের রক্ষণের অধিকার মেনে নেবেন বলে স্থির হয় ।
সমর্থন
বুদ্ধিমান রণজিৎ সিংহ বুঝেছিলেন যে ইংরেজের বিরােধিতা করে লাভ হবে না , তাই তিনি ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে শিখ সাম্রাজ্য বিস্তারের পথকে প্রশস্ত করেন । ঐতিহাসিক কানিংহাম তাঁর ‘ হিস্ট্রি অব দি শিখস ’ গ্রন্থে লিখেছেন — অমৃতসরের সন্ধির ফলে মহারাজ রণজিৎ সিংহ শতদ্রুর উত্তরভাগে বিনা বাধায় তাঁর রাজ্য বিস্তার করার সুযােগ পান ।
সমালােচনা
বহু ঐতিহাসিক অমৃতসরের সন্ধিতে স্বাক্ষর করার জন্য রণজিৎ সিংহের সমালােচনা করেছেন। ড. এন. কে. সিংহ বলেছেন — রণজিৎ সিংহ ব্রিটিশ শক্তিকে ভারতের অন্যান্য শক্তির সঙ্গে জোট বেঁধে বাধা না দিয়ে ভুল করেন । খুশবন্ত সিং সমালােচনার সুরে বলেন 一 রণজিৎ সিংহের মূলনীতি হওয়া উচিত ছিল , কোম্পানিকে বাধা দিয়ে পাঞ্জাবের স্বাধীনতা রক্ষা করা ।
অমৃতসরের সন্ধির গুরুত্ব
অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষর করার ফলে রণজিৎ সিংহের অখিল শিখ রাজ্য গঠন চিরদিনের মতাে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ড. এন. কে. সিংহ বলেছেন — “ এই সন্ধির ফলে , রণজিৎ সিংহ অশ্ব এবং ব্রিটিশ সরকার অশ্বারােহীতে পরিণত হয় ” ( In the Anglo – Sikh alliance during Ranjit Singh , The British Government became the rider and Ranjit Singh was the horse . ) । প্রচণ্ড দূরদর্শী হয়েও রণজিৎ সিংহ অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষর করে চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন ।
ইতিহাসের এই ঘটনাটি সম্পর্কে নতুন জানলাম। এই ধরনের ইতিহাস আমাদের জানা উচিত।