ইতিহাস

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা কাকে বলে আলোচনা করো

Contents

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা কাকে বলে আলোচনা করো

ইস্ট ইন্ডিয়া কােম্পানি দেওয়ানি লাভের পর বাংলায় রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে । অপরদিকে নবাব নিজামত ( শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও ফৌজদারি মামলার দায়িত্ব ) লাভ করেন । বাংলার শাসনে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে কোম্পানি , নবাব হন নামমাত্র শাসক । একই অঞ্চলে একই সাথে এই দুই ধরনের শাসনকাঠামােকে দ্বৈতশাসন বা ‘ Dual system of administration ’ বলা হয় । দ্বৈতশাসন প্রবর্তনের মাধ্যমে কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর নবাব পেয়েছিলেন ক্ষমতাহীন দায়িত্ব

2010 08 01 18 28 22 039909400 2 1

দ্বৈত শাসন প্রবর্তনের কারণ

দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি চেয়েছিল , ধীরে ধীরে বাংলার শাসনক্ষমতা করায়ত্ত করতে । রবার্ট ক্লাইভ মনে করতেন —

  • কোম্পানি সরাসরি শাসনক্ষমতায় এলে অন্যান্য ইউরােপীয় বাণিজ্যগােষ্ঠীর মধ্যে এক তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে  পারে ।
  • ইংরেজ কর্মচারীবা বাংলার রাজস্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয় ।
  • প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক ব্রিটিশ কর্মচারীর অভাব রয়েছে । এইসব কারণে কোম্পানি সরাসরি সমস্ত ক্ষমতা গ্রহণ না করে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা চালু করে । 

ঐতিহাসিক র‍্যামসে ম‍্যুরের  মতে , কোম্পানি নিজে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের খােলস ছেড়ে সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হতে চায়নি

দ্বৈত শাসনের স্বরুপ

দেওয়ানি লাভের আগেই কোম্পানি মিরজাফরের কাছ থেকে ২৪ পরগনা জেলা এবং মিরকাশিমের কাছ থেকে বর্ধমান , মেদিনিপুর ও চট্টগ্রাম জেলা লাভ করেছিল । দেওয়ানি লাভের পর বাংলার অবশিষ্ট অংশেে রেজা খাঁনকে কোম্পানি নায়েব দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করে । রেজা খাঁনকে পরিচালনার জন্য রায়দুর্লভ ও জগৎ শেঠকে তাঁর সহকারী হিসেবে কোম্পানি নিযুক্ত করে । অপরদিকে মুরশিদাবাদে দরবার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস সাইকসের ওপর । এভাবে বাংলায় কোম্পানি ও নবাবের মধ্যে দেওয়ানি ও নিজামতি ক্ষমতার বিভাজন ঘটে এবং দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রচলন হয় ।

দ্বৈত শাসনের ফলাফল 

কোম্পানি একচেটিয়াভাবে বিনাশুল্কে বাণিজ্য কায়েম করায় দেশীয় শিল্প – বাণিজ্য ধ্বংস হয় । অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লােভে ইজারাদাররা কৃষকদের ওপর অত্যন্ত চড়া হাবে কর নির্ধারণ করে । যে কৃষকরা তা দিতে অক্ষম হয় তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয় । 


ভারতে কোম্পানির বাণিজ্যের জন্য ইংল্যান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয় । বাংলা থেকে আদায় করা রাজস্বেই পণ্য ক্রয় করে কোম্পানি এই পণ্য বিক্রয়ের মুনাফা ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয় । 


কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা স্বনামে ও বেনামে বাঁধ , সেতু ও রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদির মাধ্যমে লক্ষ , লক্ষ টাকা মুনাফা লােটে । 


দ্বৈতশাসনেব কুফলরূপে সেসময় বাংলায় দেখা দেয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ( বাংলা ১১৭৬ , ইংরেজি  ১৭৭০ খ্রি .) । এই মন্বন্তরে বাংলার এক – তৃতীয়াংশ লােক অনাহারে মারা যায় । 

উপসংহার

ওয়ারেন হেস্টিংস সিলেক্ট কমিটির রিপাের্টের ভিত্তিতে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান । সেসময়কার বাংলার দুরবস্থা প্রসঙ্গে রিচার্ড বিচার এক চিঠিতে লিখেছেন — অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী শাসনেও যে দেশ সমৃদ্ধিশালী ছিল তা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে । রবার্ট ক্লাইভ বলেছেন — আমি শুধু এটুকু বলেছি যে , পৃথিবীর আর কোনাে দেশে এত অরাজকতা , বিভ্রান্তি , ঘুষ , দুর্নীতি এবং উৎপীড়ন ও শােষণের ঘটনা কেউ শােনেনি বা দেখেনি — যতটুকু হয়েছিল এই বাংলা দেশে । 

2 thoughts on “দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা কাকে বলে আলোচনা করো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!