সিভিল সার্ভিস আন্দোলন কেন গড়ে উঠেছিল
Contents
সিভিল সার্ভিস আন্দোলন কেন গড়ে উঠেছিল
পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর দেওয়ানি লাভ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা দৃঢ় করে । প্রথমদিকে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য ইংল্যান্ডের অভিজাত পরিবারের সদস্যদের উচ্চপদে নিয়ােগ করত কোম্পানির লন্ডনস্থিত ‘বাের্ড অব ডিরেক্টস্ ’ । কিন্তু অল্প বেতনের জন্য এইসব কর্মচারীরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে সনদ আইন ( ১৮৫৩ খ্রি . ) অনুসারে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিলিয়ান নিয়ােগের প্রথা প্রচলিত হয় ।

সিভিল সার্ভিস প্রবর্তন
ভারতে সিভিল সার্ভিসের প্রকৃত প্রবর্তক ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিশ ।
লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রচেষ্টা :
ভারতে সিভিল সার্ভিসের প্রকৃত প্রবর্তক ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিশ । প্রশাসনিক কাজের মানকে উন্নত ও দ্রুতগামী রার লক্ষ্যে তিনি 一
- প্রথমেই কোম্পানির বাণিজ্য দপ্তর ও রাজস্ব দপ্তর আলাদা করে দেন ।
- রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদেরও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ করে তােলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন ।
- কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধে ব্যক্তিগত ব্যাবসা , উপটৌকন , উৎকোচ গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন ।
- প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন চালাতে পারে তার জন্য বেতনের হার বাড়ানাে হয় ।
- ইউরােপীয়দের বেতন গড়ে ৩০০ – ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানাে হয়।
- ভারতীয়দের উচ্চ সরকারি পদে নিয়ােগ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
লর্ড ওয়েলেসলির ভূমিকা :
লর্ড ওয়েলেসলি মনে করতেন যে ইংল্যান্ড থেকে যেসব যুবক ভারতে সিভিল সার্ভিসের চাকরি করতে আসবে তাদের এদেশের ভাষা , সামাজিক রীতিনীতি , আবেগ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া দরকার । তাই তিনি তরুণ সিভিলিয়ানদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে কলকাতায় গড়ে তােলেন ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ ( ১৮০০ খ্রি . ) ।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র :
ইউরােপীয় প্রশাসকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ বেশিদিন চলেনি । কারণ কোম্পানির নির্দেশকরা এই ভেবে উদবিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন যে এতে হয়তাে নবনিযুক্ত প্রশাসকরা লন্ডনের পরিবর্তে কলকাতায় প্রতি অধিক অনুগত হয়ে উঠবে । তাই ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ বন্ধ ( ১৮০২ খ্রি . ) করে দিয়ে লন্ডনের কাছে হার্টফোর্ডে ইন্ডিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় (১৮০৫ খ্রি .) , পরে যা হেইলেবেরি অঞ্চলে স্থানান্তরিত ( ১৮০৯ খ্রি . ) হয় ।
ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে বলা হয় ইংল্যান্ড রাজের যে – কোনাে প্রজা ১৮ – ২১ বছর বয়স হলে ইংল্যান্ডে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিস পদে নিযুক্ত হতে পারবে । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে লন্ডনে প্রথম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা শুরু হয় । পরীক্ষার নাম হয় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস বা আই . সি . এস . । সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট , ডেপুটি কালেক্টর , সাব জজ প্রভৃতি সরকারি পদগুলিতে ভারতীয়দের নিয়ােগ শুরু হয় । সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করা প্রথম ভারতীয় ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
সিভিল সার্ভিস আন্দোলন
লর্ড লিটন ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ করলে সারাদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তােলে । দাবি জানানাে হয় 一
- ইংল্যান্ডের পাশাপাশি ভারতেও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা নিতে হবে ।
- এই পরীক্ষার উধ্বর্তম বয়সসীমা ২২ বছর করতে হবে ।
যদিও সে সময়কার ভারতের বড়ােলাট ল্যান্সডাউন তা মানতে চাননি ।
It is really helpful.