উডের প্রতিবেদন বা উডের ডেসপ্যাচ বলতে কী বোঝো
Contents
উডের প্রতিবেদন বা উডের ডেসপ্যাচ বলতে কী বোঝো
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে কোম্পানির বাের্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি উডের নির্দেশ নামা এক মাইলস্টোনরূপে স্বীকৃত হয়ে রয়েছে । তিনি বাের্ড অব কন্ট্রোলের সদস্যদের নিয়ে শিক্ষাবিষয়ক একটি কমিটি গঠন করে সরকারি শিক্ষানীতি সম্পর্কে যে সুপারিশ পেশ করেন তা উডের প্রতিবেদন বা উডের ডেসপ্যাচ ( ১৮৫৪ , ১৯ জুলাই ) নামে পরিচিত । উড ভারতে প্রাথমিক , মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ।

উডের ডেসপ্যাচ এর মূল বক্তব্য
উডের প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য ছিল —
কোম্পানি আমলে শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানাে । এই শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে — ইউরােপীয় কলা , দর্শন , সাহিত্য ও বিজ্ঞান । সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের উপযােগিতা সাধনের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখা আবশ্যিক ।
উডের ডেসপ্যাচ এর বিভিন্ন সুপারিশ
উডের প্রতিবেদনে শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশগুলি হল —
- লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে কলকাতা , বােম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দরকার । যাদের অধীনে আইন , চিকিৎসাশাস্ত্র , ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি পেশাগত শিক্ষার পঠনপাঠন প্রয়ােজন ।
- শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে ও স্কুলগুলি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি আলাদা শিক্ষা দপ্তর গড়ে তােলা প্রয়ােজন ।
- শিক্ষকদেরও উপযুক্তরূপে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে শিক্ষক – শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজন ।
- বিদ্যালয়গুলিকে সরকারি সাহায্য বা অনুদান ( গ্রান্টস – ইন – এইড ) দিতে হবে ।
- আরও বেশি সংখ্যায় প্রাথমিক ও ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
- স্ত্রীশিক্ষার সুষ্ঠু প্রসারের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে ।
- উচ্চতর বিদ্যালয়গুলিতে মাতৃভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা শিক্ষারও প্রয়ােজন রয়েছে ।
- সরকারি স্কুল ও কলেজগুলির সংস্কারসাধন প্রয়ােজন ।
- মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান ।
উডের ডেসপ্যাচ এর ফলাফল
চার্লস উডের সুপারিশ অনুযায়ী —
- কলকাতা , বােম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে ( ১৮৫৭ খ্রি . ) । পরে লাহাের ও এলাহাবাদে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত ( ১৮৮০ – র দশকে ) হয় ।
- সরকারি শিক্ষা দফতর বা ডিরেক্টরেট অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন খােলা হয় ( ১৮৫৫ খ্রি . ) ।
- ১৮৮১ – ৮২ খ্রি . সারা দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৩ , ৯১৬টি । ১৯০১ – ০২ খ্রি . তা বেড়ে দাড়ায় ৫ , ১২৪টি ।
- শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য ১৮৯৬ খ্রি . ভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস গঠিত হয় ।
- শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে একে একে গঠিত হয় হান্টার কমিশন ( ১৮৮২ – ৮৩ খ্রি . ) , র্যালে কমিশন ( ১৯০২ – ০৪ খ্রি . ) , স্যাডলার কমিশন ( ১৯১৭ – ১৯ খি ) ইত্যাদি ।
উডের ডেসপ্যাচ এর ত্রুটি
পাশ্চাত্য শিক্ষার উদ্যোগ শহরগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকায় এই শিক্ষার সুফল থেকে গ্রামগুলি বঞ্চিত হয় ।
ইংরেজি মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটায় সাধারণ ভারতবাসী এই শিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি ।